মহান রব যা সৃষ্টি করেছেন, তার কোনটাই ফেলনা নয়। সবজি হিসেবে মিষ্টি কুমড়া জনপ্রিয়। তার শাক পুষ্টিকর, সুস্বাদু। তার বীজ খুবই উপকারী। মহান রবের ছোট্ট একটি সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলেই অনায়াসে তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর শুকরিয়া মাথা নত হয়ে আসে। তবে শয়তানের অনুসারী হয়ে গেলে এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়।
প্রতি ৩৪.৫০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়া বীজে আছে: শক্তি- ১৮৬.৬৫ ক্যালরী, ম্যাঙ্গানিজ ১.০৪ মিঃগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম- ১৮৪.৫৮ মিঃগ্রাম, ফসফরাস ৪০৫.০৩ মিঃগ্রাম, ট্রিপটোফেন ১১০ মিঃগ্রাম, আয়রন ৫.১৬ মিঃগ্রাম, কপ্ওা ০.৪৮ মিঃগ্রাম, ভিটামিন কে ১৭.৭৩ মিঃগ্রাম, জিংক ২.৫৭ মিঃগ্রাম, প্রোটিন ৮.৮৭ ও অন্যান্য।
মিষ্টি কুমড়া বীজের ৩০ শতাংশই ফ্যাটি এসিড। এই ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তে অস্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। ১০০ গ্রাম কুমড়ার বীজ থেকে ৫৬০ ক্যালরি পাওয়া যায়, তার মানে ক্ষুধা মেটানোর কাজটাও সে ভালো ভাবেই সমাধা করতে পারে।
১. ভালো ঘুম: মিষ্টি কুমহড়ার বীজে আছে সেরোটোনিন নামক পদার্থ। সেরোটোনিনকে প্রকৃতির ঘুমের বড়ি বলা হয়। ট্রাইপটোফ্যান নামের অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরে গিয়ে সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়, যা ঘুম নিশ্চিত করে। ঘুমানোর আগে এক মুঠো মিষ্টি কুমড়ার বীজ খান তা এনে দেবে পুরো রাত্রে শান্তির ঘুম।
২. রোগ প্রৃতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মিষ্টি কুমড়া বীজে থাকা প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিক্যাল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
৩. বাতের ব্যথা: মিষ্টি কুমড়ার বীজ হাড়ের সংযোগস্থলে ভেঙে যাওয়া চর্বিসমূহের পরিমাণ বাড়তে দেয় না। ভেঙে যাওয়া চর্বিসমূহ হাড়ের সন্ধিস্থলে জমা হয়ে ব্যথার সৃষ্টি হয়। এভাবে চর্বি জমতে বাধা দিয়ে সে বাতের ব্যথা কমিয়ে দেয়। তাছাড়া এটি একটি প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না।
৪. চুল লম্বা করতে: মেয়েদের চুল লম্বা না হলে কত দুশ্চিন্তা করে। এ দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া বীজ। এতে থাকা কিউকুরবিটিন অ্যামিনো অ্যাসিড চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন সি চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
৫. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: ১০০ গ্রামে বীজে পটাশিয়াম আছে ৭৮৮মিঃ গ্রাম যা উচ্চরক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে খুবই উপকারী। তাছাড়া এতে থাকা ট্রেস এলিমেন্ট ( দেহে খুব অল্প পরিমানে প্রয়োজন হয় কিন্তু অত্যাবশ্যক) অর্থাৎ কিছু ভিটামিন ও খনিজ উপাদান সহ বিশেষ করে প্রচুর ম্যাগনেসিয়ামও (৫৫০ মি.গ্রাা.) আছে যা শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষায় ভুমিকা রাখে।
৬. হাড় ক্ষয় রোধ: হাড় ক্ষয় একটি মারাত্মক রোগ। বিশেষত ৫০ বছরের বেশি বৃদ্ধ মা বাবাদের শতকরা ৩০ ভাগ কোমরের হাড়ের সুক্ষ ফাটল ও ৮ শতাংশ মানুষের হাড়ক্ষয় রোগ রয়েছে। হাড়ক্ষয় রোগের প্রধান কারণ হলো শরীরে জিংকের অভাব। আর এই জিংকসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস হলো মিষ্টি কুমড়া বীজ। সুতরাং মিষ্টি কুমড়া বীজ খেয়ে খুব সহজেই কোমর ও মেরুদন্ডের হাড়সহ দেহের অন্যান্য হাড়ের ক্ষয় রোধ করা যায়।
৭. ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে: মিষ্টি কুমড়া বীজ পাকস্থলী, ফুসফুস, ব্রেস্ট, কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
৮. হৃদযন্ত্রের উপকারে: হার্ট ভালতো পুরো শরীর অনেকটাই ভাল। মিষ্টি কুমড়ার বীজে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর। সবই হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী। এই বীজে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৯. প্রোস্টেট ভাল রাখতে: মিষ্টি কুমড়ার বীজে আছে প্রচুর পরিমাণ জিংক। যা পুরুয়দের উর্বরতা বাড়ায় ও প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এতে থাকা উপাদান ডাই-হাইড্রো এপি-অ্যান্ড্রোস্টেনেডিয়ন, প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
১০. প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে: জিংক আমাদের দেহের কোষ আবরণীর গঠন ও কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। জিংকের অভাবে প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, রোগা ও দুর্বল শিশুর জন্ম দেয়। এছাড়া আমাদের শরীরে থাকা প্রায় ২০০টি এনজাইমের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণে বিশিষ ভূমিকা রাখে এই জিংক। মিষ্টি কুমড়া জিংকের বিরাট উৎস। প্রতিদিন এক মুঠো মিষ্টি কুমড়ার বীজ খাওয়ার মাধ্যমে প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সবল শিশু জন্মসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
১১. জ্বালাপোড়ার রোধে: পেশির জ্বালাপোড়ার অনুভূতি কমানোর ক্ষমতা আছে কুমড়া বীজের এ ছাড়া বাতের ব্যথা কমাতে এবং হাড়ের অস্থিসন্ধির ব্যথা কমাতে এর তেল বেশ উপকারী।
১২. শরীরের ওজন কমাতে: শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে কুমড়ার বীজ। ছোট্ট এই খাবারেই পেট পূর্ণ থাকে অনেকক্ষণ। আর আশঁ জাতীয় খাবার বলে হজমেও সময় লাগে। ফলে ক্ষুধা পায় না, শুধু শুধু বাড়তি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ফলে শর ীরের ওজন কমাতে বেশ কার্যকর এই মিষ্টি কুমড়ার বীজ।
১৩. রক্ত শূণ্যতা দূর করতে: আয়রন আমাদের দেহের লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি ও মাংসপেশী গঠনে ভূমিকা রাখে। আয়রন আমাদের দেহে অক্সিজেন সরবরাহ করে শরীরকে সতেজ ও প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে থাকে। আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া রোগ হয়। একজন পুরুষের চেয়ে নারীর দেহে আয়রনের চাহিদা বেশি। মিষ্টি কুমড়ার বীজে প্রচুর আয়রন আছে। প্রতিদিন ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ খেলে দৈনিক চাহিদার পুরোটাই পূরণ হয়ে যায়। শিশুর বৃদ্ধি, দুগ্ধদানকারী মা, খেলোয়াড়দের প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় মিষ্টি কুমড়ার বীজ রাখলে ভাল হয়।
১৪. কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে: মিষ্টি কুমড়া বীর প্রচুর পরিমান খাদ্য আশঁ সমৃদ্ধ যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে।
১৫. ডায়াবেটিস প্রতিকারে: মিষ্টি কুমড়ার বীজ শরীরে নিয়মিত ইনসুলিন সরবরাহ করে এবং ক্ষতিকর অক্সিডেটিভ চাপ কমায়। এ ছাড়া হজমে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার বীজে এমন সব প্রোটিন রয়েছে যা রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।
১৬. ম্যাঙ্গানিজের অভাব দূর করতে: ম্যাঙ্গানিজ শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ম্যাঙ্গানিজের অভারে মস্তিস্ক, স্নায়ুকোষ স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে সৃষ্টি হয় আলজেইমার্স, সিজোফ্রেনিয়া ও মৃগীরোগ। এছাড়াও ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও বাতের ব্যথা সৃষ্টি হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজে আছে প্রচুর ম্যাঙ্গানিজ। প্রতিদিন কিছু কুমড়ার বীজ খেলে এসব রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ।
১৭. ম্যাগনেসিয়ামের অভাব: ম্যাগনেসিয়াম একটি খনিজ পদার্থ। যা শরীরের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ, প্রোটিন ও নিউক্লিক এসিড উৎপাদনে অপরিহার্য। এছাড়া শরীরের হরমোনসমূহের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ, হার্ট সচল, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় মজবুত, স্নায়ুতন্ত্রের খবরাখবর আদান-প্রদান সমূহ অসংখ্য জৈবিক কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ করে। তাই ম্যাগনেসিয়ামের খুব সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য উপাদান হলো মিষ্টি কুমড়ার বীজ। প্রতিদিন ৭০ গ্রাাম বীজ দেহের চাহিদার পুরো অংশই পূরণ করতে পারে।
১৮. প্রোস্ট্রেট প্রন্থির টিউমার: বিনাইন প্রোস্টেটিক হাইপা ট্রোফি বা বিপিএইচ, যা সহজ বাংলায় প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নামে পরিচিত। এ রোগের ফলে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বড় হয়ে যায়। টেস্টোস্টেরন হরমোন ও এর থেকে ডাইহাইড্রো টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির কোষসমূহকে অতি উদ্দীপিত করে। ফলে দ্রুত নতুন নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থি বৃদ্ধি পেয়ে প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার সৃষ্টি হয়। মিষ্টি কুমড়ার বীজ থেকে উৎপন্ন তেল প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। কারণ মিষ্টি কুমড়ার বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক ও ক্যারোটিনয়েড রয়েছে। যা প্রোস্ট্রেট গ্রন্থির টিউমার নিয়ন্ত্রণ করে।
মুন্সি আব্দুল কাদির
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি:, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন