আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে চীন, ইউরো অঞ্চল ও যুক্তরাজ্যের কারখানা কার্যক্রম সঙ্কুচিত হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন ও চীনের জিরো কভিড নীতি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপ অনুসারে, কারখানাগুলোয় কাঁচামালের অতিরিক্ত খরচের চাপ কমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে উৎপাদন কার্যক্রমে সামগ্রিক দুর্বলতা অনেক দেশে চাহিদা শ্লথ হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি এরই মধ্যে সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সংস্থাগুলোর মাথাব্যথার কারণ হয়েছে। বিশ্বের প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আক্রমণাত্মকভাবে সুদের হার বাড়ানো অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ক্রমবর্ধমান মন্দার ঝুঁকির সঙ্গে ব্যবসায়িক আশাবাদকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট (আইএসএম) জানিয়েছে, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পোৎপাদন খাতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৫২ দশমিক ৮ পয়েন্ট নিয়ে অপরিবর্তিত রয়েছে। যদিও এটি ২০২০ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন। খাতটি মার্কিন অর্থনীতিতে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখে। পিএমআই ৫০ পয়েন্টের নিচে সংকোচন এবং এর উপরে প্রসারিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে। তবে নতুন ক্রয়াদেশের উপসূচক জুলাইয়ের ৪৮ পয়েন্ট থেকে গত মাসে ৫১ দশমিক ৩ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই মাসের সংকোচনের সমাপ্তি হয়েছে। এটি পরামর্শ দেয় যে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির কারখানাগুলো কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। ক্রমবর্ধমান সুদের হারে মন্দার ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়া সত্ত্বেও দেশটির উৎপাদন খাতে স্থিতিস্থাপকতা দেখাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবেলায় হিমশিম খাওয়া মার্কিন কারখানাগুলোর জন্য কিছুটা স্বস্তিও তৈরি হয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে চাহিদা দুর্বল হওয়ার কারণে দামের চাপ কিছুটা কমেছে। গত মাসে নির্মাতাদের কাঁচামাল ব্যয়ের সূচক জুলাইয়ের ৬০ থেকে ৫২ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমেছে, যা ২০২০ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি চীন ও তাইওয়ানে কারখানাগুলোর কাঁচামাল ব্যয় ২০২০ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ইউরো অঞ্চলে এ সূচক দীর্ঘমেয়াদি গড়ের ওপরে রয়ে গিয়েছে। যা-ই হোক, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার উদ্বেগ কমানোর মতো কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। রয়্যাল ব্যাংক অব কানাডার পিটার শ্যাফরিক বলেন, আমরা আগামী বছর ইউরো অঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা দেখা দেবে বলে পূর্বাভাস দিচ্ছি। তবে এ মন্দা বিশ্বজুড়ে প্রসারিত হয় কিনা তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দামের চাপের লক্ষণ আরো গভীর হয়েছে। ইউরো অঞ্চলে আগস্টে উৎপাদন কার্যক্রম দ্বিতীয় মাসে সঙ্কুচিত হয়েছে। দুর্বল চাহিদার কারণে কারখানাগুলোয় বিপুল মজুদ তৈরি হয়েছে। রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের ইউরো অঞ্চলের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমের পিএমআই জুলাইয়ের ৪৯ দশমিক ৮ থেকে গত মাসে ৪৯ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যেও কারখানার উৎপাদন ও নতুন ক্রয়াদেশ দুই বছরের মধ্য সবচেয়ে বেশি কমে গিয়েছে। এদিকে চীনের সরকারি ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই আগের মাসের ৪৯ থেকে আগস্টে ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ টানা দুই মাস দেশটির উৎপাদন খাত সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। একই সময়ে এইউ জিবুন ব্যাংক জাপানের শিল্পোৎপাদন খাতের পিএমআই জুলাইয়ের ৫২ দশমিক ১ পয়েন্ট থেকে গত মাসে ৫১ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পিএমআই ৪৯ দশমিক ৮ পয়েন্ট থেকে কমে গত মাসে ৪৭ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। তবে ভারতের কারখানা কার্যক্রমের বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রম এখনো উজ্জ্বল রয়ে গিয়েছে। তবে মালয়েশিয়ার বৃদ্ধি কিছুটা মন্থর হয়েছে। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন