২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতি তার নগ্ন পক্ষপাতিত্ব এবং সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলিমদের প্রতি তার দলের ঘন ঘন নিপীড়ন, ভারতের বাইরেও এমন বহু হিন্দু জাতীয়তাবাদীর মধ্যে অনুরণিত হয়েছে, যারা বিশ্বাস করে যে, তিনি এর মাধ্যমে ভারতকে আরো শক্তিশালী এবং নিরাপদ করেছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা, বিশেষ করে মুসলিমরা, ভারতীয় হিন্দু গোষ্ঠীর আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছেন। এসব দ্বন্দ্ব দ্রত দেশটির ভারতীয় সম্প্রদায়গুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অরেঞ্চ কাউন্টির আনাহেইমের একটি পার্কে শত শত লোক ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে জড়ো হয়। সেসময় প্রায় এক ডজন লোক, যাদের বেশিরভাগই ভারতীয় আমেরিকান, প্ল্যাকার্ড হাতে নিঃশব্দে তাদের সমাবেশের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, যেখানে লেখা ছিল ‘বর্ণপ্রথা নির্মূল করুন’ এবং ‘ভারতের মুসলিমদের রক্ষা করুন’। সেখানে ভারতের স্বাধীনতা উদযাপনকারী কিছু লোক তাদের ওপর হামলা করে, প্ল্যাকার্ডগুলো ভেঙে ফেলে এবং ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। কেউ কেউ হিন্দি-উর্দুতে অশ্লীল গালিগালাজও করে। তারা বিক্ষোভকারীদের ‘মূর্খ মুসলমান’ বলে অভিহিত করে এবং ‘এখান থেকে বিদায় হও’ বলে চিৎকার করে। একজন মাইক্রোফোনের মাধ্যমে সেøাগান দেন, ‘ভারত মাতার জয়’, ‘ভারতের বিজয়’, ‘আমরা ভারতীয়’।
হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের একজন রীতা কৌর, যিনি শিখ এবং দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছেন ও বেড়ে উঠেছেন, পরে বলেন, ‘আমরা কেবল ভারতীয়দের জন্য বলছি যারা নিরলসভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’ গত মাসে এডিসনে একটি ভারতীয় স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে উত্তেজক প্রতীক মোদির ছবিসহ একটি বুলডোজার দেখানো হয়, যখন ভারতের স্থানীয় কর্মকর্তারা মুসলিমদের বাড়িঘর ধ্বংস করতে বুলডোজার ব্যবহার করে। পরে প্যারেড আয়োজকরা এর জন্য ক্ষমা চান।
২০২০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভারতীয় নিম্ন বর্ণের লোকদের বিরুদ্ধে ভারতীয় উচ্চবর্ণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সিলিকন ভ্যালিতে সিসকো সিস্টেমের একজন প্রকৌশলীর পক্ষে দায়ের করা একটি মামলায় ঘটনা প্রকাশিত হয়। তিনি অভিযোগ করেন যে, ভারতীয় হিন্দু উচ্চ-বর্ণের কর্মকর্তারা তাকে কম বেতন এবং কম সুযোগ দিয়েছে। এবছর গুগলে কিছু হিন্দু জাতীয়তাবাদী কর্মচারী বক্তাকে হিন্দু-বিরোধী বলে অভিযুক্ত করার পর গুগলের বর্ণসমতা নিয়ে একটি আলোচনা বাতিল করা হয়।
৪০ বছর আগে ভারত ছেড়ে আসা আর্টেশিয়ার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্কের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শাকিল সায়েদ ভারতে বেড়ে ওঠার স্মৃতি এবং সেময়কার তুলনামূলক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ থেকে তিনি যে মূল্যবোধ শিখেছেন, তার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘সেই ভারত আর নেই, বন্ধুত্বের মূল্য যা আমি আমার শিক্ষক, প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের কাছ থেকে শিখেছি (তাদের জাত ও ধর্ম নির্বিশেষে), যারা শালীনতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও আরো বৃহত্তর মঙ্গলকে লালন করেছে’। তিনি বলেন, ‘আজকের ভারত গোঁড়ামি, ধর্মান্ধতা, জাতিবিদ্বেষ এবং অসহিষ্ণুতা দিয়ে বন্ধুত্বকে উচ্ছেদ করছে, যা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংগঠিত এবং প্রাতিষ্ঠানিক করা হয়েছে।’
রোহিত চোপড়া, যিনি সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটির একজন কমিউনিকেশন প্রফেসর এবং দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রচারের জন্য মোদি এবং তার সমর্থকদের সমালোচনা করেছেন, বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের এ বিষ আরো বিস্তৃত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন এবং দায়মুক্তির একই ধারা প্রবাসীদের মধ্যে ছেয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে’। ভারতের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার জোটের সদস্য অরেঞ্জ কাউন্টির বাসিন্দা ওয়াকাস সায়েদ বলেন, বর্ণ ও ধর্ম বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের ওপর হয়রানি এটি নৈমত্তিক ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘সপ্তাহ দুয়েক আগে আপনারা যে ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন, মাত্র পাঁচ বছর আগেও তা কখনো ঘটেনি। যেহেতু সব ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদের বিকাশ ঘটেছে, তাই এটি সম্ভব হয়েছে এবং এটি আরো অনেক ক্ষেত্রে ঘটতে চলেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন