তুরস্কের একটি কার্গো জাহাজের ওপর গ্রিসের উপকূল রক্ষীরা গুলি চালিয়েছে। শনিবার এজিয়ান সাগরের উপকূলে এই ঘটনা ঘটে। কমোরোসের পতাকাবাহী রো রো জাহাজ আনাতোলিয়ান গ্রিসের গুলিতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্ক দাবি করেছে, গ্রিসের উপকূল রক্ষীরাক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জাহাজে গুলি বর্ষণ করে। অন্যদিকে গ্রিসের উপকূল রক্ষীরা বলছে, তুর্কি জাহাজকে লক্ষ্য করে শুধুমাত্র সতর্কতামূলক ফাঁকা গুলি চালানো হয়। তবে এ বিষয়ে তুরস্কের গণমাধ্যম একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে। আনাতোলিয়ান জাহাজের ক্রুরা ওই ভিডিও ধারণ করেন। এতে দেখা যায়, গ্রিসের উপকূল রক্ষীদের একটি বোট তুরস্কের রো রো কার্গো জাহাজের পাশ ঘেঁষে চলছে। ভিডিওতে আরো দেখা যায়, জাহাজের জানালায় বেশ কয়েকটি গুলি লেগে ছিদ্র হয়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রিসের উপকুল রক্ষীরা কার্গো জাহাজের ওপর হয়রানিমূলক হামলা চালায়। এই খবর পেয়ে তুরস্কের উপকূল রক্ষীদের দুটি জাহাজ ঘটনাস্থলের দিকে যাত্রা করলে গ্রিসের জাহাজটি পালিয়ে যায়। অপরদিকে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১০ মাস বাকি। আগামী নির্বাচন তুরস্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের নানা উত্তেজনার কারণে বাইডেন সরকার চাইবে এরদোগান সরকারের পতন বা পরিবর্তন। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের নিবন্ধে বলা হয়েছে- প্রেসিডেন্ট এরদোগান নির্বাচনি প্রচারে বিস্ময়কর এবং অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঘটানোর জন্য বেশ পরিচিত। এখন সময় এসেছে যথারীতি তার সেই তুরুপের তাস ব্যবহার করার। এরই অংশ হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি এবং সমাজের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বাড়ানোর কৌশল নিয়েছেন তুর্কির এ প্রেসিডেন্ট। তুরস্কের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক রাগিপ সয়লুর লেখা আলোচিত ওই নিবন্ধে বলা হয়েছেÑ দেশটির অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যেও শেষ যুদ্ধটা না চালিয়ে ক্ষমতা ছাড়তে চান না প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েপ এরদোগান। চলতি বছরের জুলাই মাসে এরদোগান শ্রমিকদের বেতন ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছেন, যা দেশটির তিন কোটি সক্রিয় শ্রমিককে প্রভাবিত করেছে। তার সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় ৪২ শতাংশ বাড়িয়েছে। এর সুবিধা পাচ্ছেন দেশটির প্রায় ৫০ লাখ সরকারি কর্মচারী। এ ছাড়া বেসরকারি খাতেও সন্তুষ্টির এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। মিডল ইস্ট আইয়ে প্রকাশিত ওই নিবন্ধে বলা হয়েছেÑ চলতি বছরের আগস্টে তুরস্কের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৮০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে তুর্কি লিরার অবমূল্যায়ন অব্যাহত রয়েছে। শুধু এ বছরেই লিরার মূল্য ২৭ শতাংশ অবনমন হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন একে পার্টির এক জরিপ বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের সমর্থন বাড়ছে। ভোটারদের মনোভাব পরিবর্তন ক্ষমতাসীন দলে এ বিশ্বাস জোগাতে সাহায্য করেছে যে, পরবর্তী নির্বাচনেও টিকে যাবেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। বিরোধীপক্ষের মধ্যে একতা ও কৌশলগত দুর্লতাকে কাজে লাগিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোগান চাচ্ছেন আরও সৃজনশীল হতে। এর মাধ্যমে তিনি আরও বহুদূর যেতে চান। এমনকি যেসব পর্যবেক্ষক এরদোগানের ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন, তারাও এখন বিশ্বাস করেন যে তিনি এ যাত্রাও ক্ষমতায় টিকে যাবেন। এর পর এরদোগান সরকার স্বাস্থ্য খাতের কর্মীদের বেতন সংস্কারের সূচনা করেছে। শিক্ষা ঋণের/শিক্ষার্থীদের ঋণের ওপর থেকে সুদ মওকুফ করেছে। প্রথমবারের মতো বাড়ির কেনা ব্যক্তিদের জন্য একটি সস্তা আবাসন প্রকল্প চালু করেছে। এ ছাড়া ব্যবসার জন্য স্বল্প পরিমাণ আমানতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব উদ্যোগ নির্দিষ্ট ভোটার গোষ্ঠীকে প্রলুব্ধ করবে। এরদোগান জোর দিয়ে বলছেন, এই কম সুদের হারের কারণে তিনি একটা বড় সময় পাবেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ঘাটতি পূরণ করতে তাকে রাশিয়া থেকে ৭০০-১০০০ ডলার পেতে হবে। এ ছাড়া চলমান ঘাটতি পূরণ করতে সউদী থেকে ২০০০ ডলার সহায়তা চেয়েছেন এরদোগান। তবে জ্বালানি মূল্যের অস্থির অবস্থার মধ্যে এটি যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এসব কিছু ছাপিয়ে এরদোগান আবারও ক্ষমতায় গিয়ে তুরস্ককে নিয়ে যেতে চান বহুদূর। আনাদোলু, মিডল ইস্ট আই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন