বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাইফস্টাইল

তালের উপকারিতা

| প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

শরৎ কাল যেমন ঋতুর রানি তেমনি এই ঋতুতে এক পায়ে খাড়া গাছের ফল তালও পাকে। এই সময়ে রোদ খুব প্রখর হয়। ভাদ্র মাসের রোদকে তাল পাকা রোদও বলা হয়। তাল গাছ বজ্রপাতের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। কচি তালের শাঁস খেতে ভারী মজা উপকারিতাও কম নয়। পাকা তালের রসের পিঠা গ্রাম বাংলার এক উপাদেয় খাদ্য। পাকা তালের বীজ মাটিতে ফেলে রাখলে তার অঙ্কুর গজায় তখন বীজ কাটলে একটি সাদা বলের মত ফুল পাওয়া যায় তাও খেতে সুস্বাদু। অর্থাৎ আমাদের খাওয়ার তালিকা থেকে তার তেমন বাদ যায় না।

কচি তালের শাঁসের পুষ্টি গুন: ১০০ গ্রামের তালের শাঁসের ৯২ দশমিক ৩ শতাংশই থাকে জলীয় অংশ, ক্যালরি থাকে ২৯, শর্করা ৬ দশমিক ৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৪ গ্রাম, রিবোফাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম, খনিজ শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৪ মিলিগ্রাম।

পাকা তালের রসের পুষ্টি গুন: প্রতি ১০০ গ্রাম রসে রয়েছে- খাদ্যশক্তি ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭.৫ গ্রাম, আমিষ .৮ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, শর্করা ১০.৯ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন .০৪ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম।

তালের শাঁসের উপকারিতা:
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে: তালে শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে। এছাড়াও তালের শাঁস খেলে লিভারের সমস্যা দূর হয়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আমাদের পানি পানের তৃপ্তি বাড়িয়ে দেয় এবং খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

২. স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে: তাল দেখতে আমাদের মাথার মত। তালের শাঁস আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে এবং শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে। একই সাথে এটি বমি ভাব আর বিস্বাদ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে: তালে শাঁসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এটি ক্যান্সারের মত রোগও প্রতিরোধ করে।

৪. দন্ত রক্ষায়: তালে শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি আমাদের দাঁতের জন্য অনেক ভালো । এটি আমাদের দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

৫. হাড়ের সুরক্ষায়: তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে ভাল কাজ করে।

৬। দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে: তালে শাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মত বেশ কিছু উপকারী উপাদান। যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই তালের শাঁস খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তির অনেক উন্নতি হয় এবং রাতকানা রোগ থেকে চিরতরে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়াও চোখের এনার্জি সহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমাতে তালে অনেক কার্যকরী।

৭। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে: তালের শাঁস আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খেলে আমাদের শরীরের ভেতরে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়াও এতে থাকা পটাশিয়াম আমাদের কোষ ও রক্তরসের জন্য দরকারি উপাদান হিসেবে কাজ করে। একই সাথে এটি আমাদের হৃৎস্পন্দনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

পাকা তালের রসের উপকারিতা:
১. শ্বেতপদর: কারো শ্বেতপদর হলে আধা কাপ তালের টাটকা রস সকাল বিকাল দুই বার করে কয়েকদিন খেলে ভাল হয়।
২. কোষ্ঠকাঠিন্যে: তালের রসে খাদ্য আঁশ রয়েছে তা কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভাল ভূমিকা রাখে।

৩. পুরোনো কাশি: পুরোনো কাশি সারাতে ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে পুরোনো কাশি ভাল হয়ে যায়।
৪. বমি বমি ভাব: বমি বমি ভাবে ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বমি বমি ভাব চলে যায়।

৫. পুরুষত্বহীনতা: ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে পুরুষত্বহীনতায় উপকার পাওয়া যায় ।
৬. বুক ধরফর: ৩-৪ চামচ তালের রস দুধের সাথে মিশিয়ে সকাল বিকাল কয়েকদিন খেলে বুক ধরফরানী কমে যায় ।
৭. কৃমি রোগে: তালের রস খেলে কৃমি রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৮. তাল শরীরের ভিটামিন বি এর অভার দূর করে। নিয়মিত তাল খেলে সর্দি, মাথা ব্যথা, অনিদ্রার মত রোগ দূর করতে সাহায্য করে।

মুন্সি আব্দুল কাদির

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন