রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পুতিনের মাস্টারস্ট্রোক, ইউক্রেনে লক্ষ্য অর্জনের পথে রাশিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:২৭ পিএম

ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তিন লাখ রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া প্রথমবারের মতো এ ধরণের পদক্ষেপ নিল। এতে ইউক্রেনের পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে রাশিয়ার অনুকূলে চলে আসতে পারে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তিনি কোন ফাঁকা বুলি আওড়াচ্ছেন না, ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তার দেশ ‘সম্ভাব্য সব উপায়’ ব্যবহার করবে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে ৫,০০০ কোটি ডলারের অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অস্ত্র ইউক্রেনের কাছে এসেছে এবং আরো অস্ত্র আসবে। এজন্য রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশ করে আগে থেকেই রাশিয়া প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইউক্রেনের রাশিয়া যেসব অঞ্চল দখল করেছে তার বেশিরভাগ এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণেই আছে। এর মধ্যে চারটি অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করেছে রাশিয়া। এসব গণভোটের ফলাফল কি হবে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমর বিশেষজ্ঞ মুরাত আসলান বলেন, গণভোটের মাধ্যমে ইউক্রেনের সেসব অঞ্চলকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নেবে। যেমনটা ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছিল।

গণভোটের পর রাশিয়া সেসব অঞ্চলকে তারা রাশিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করবে। রাশিয়া সেসব অঞ্চল ধরে রাখতে চাইবে এবং সেখানে শক্তি বাড়াবে। এজন্য পুতিন ‘মাতৃভূমি’ রক্ষার কথা বলছেন। এর মাধ্যমে রাশিয়া সেসব এলাকায় যে কোন হামলাকে নিজের উপরে হামলা হিসাবে বিবেচনা করবে এবং সর্বশক্তি দিয়ে তার জবাব দিতে পারবে।

ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার লক্ষ্য ছিল তিনটি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশ ভাষাভাষী অধ্যুষিত ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এলাকায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে সেখানে রুশ-ভাষী জনগণকে সুরক্ষা দেয়া। ইউক্রেনে ডি-নাজিফিকেশন বা উগ্র-জাতীয়তাবাদ নির্মূল করা। যেটি মারিউপোল এলাকায় সক্ষম হয়েছে রাশিয়া। এবং ইউক্রেনকে বেসামরিকীকরণ করা।

পুতিনের নতুন পদক্ষেপের ফলে প্রথম দুইটি লক্ষ্য অর্জন করা রাশিয়ার জন্য সহজ হয়ে যাবে। তবে ইউক্রেনকে বেসামরিকীকরণ করার লক্ষ্যে অর্জনে আরও সময় লাগবে। রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা ইউক্রেনের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের কৌশল এবং পশ্চিমাদের সরবরাহ করা অত্যাধুনিক অস্ত্র দু'পক্ষের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে এনেছে।

ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সমরবিদ মুরাত আসলান বলেন, চারটি অঞ্চলে গণভোট করে সেগুলো রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নেবার পর পুতিন হয়তো যুদ্ধবিরতি করতে পারেন। কিন্তু ইউক্রেন সেটি কিছুতেই মানবে না। তারা সেসব অঞ্চল থেকে রাশিয়ার সৈন্যদের বিতাড়িত করার লড়াই করবে। সেক্ষেত্রে লড়াই আরো তীব্র হতে পারে।

সমরবিদদের অনেকে বলছেন, ইউক্রেনে রাশিয়া তাদের সমরশক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেনি। রাশিয়া তাদের বিমান ও নৌবাহিনীর অতিক্ষুদ্র অংশ ব্যবহার করেছে। কারণ তারা ইউক্রেনকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়নি। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া দেখেছে যে কিছু পশ্চিমা রাষ্ট্র ইউক্রেনকে ব্যবহার করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অনেকটা সরাসরি যুদ্ধে নেমে গেছে। ফলে দেশকে রক্ষা করতে হলে রাশিয়াকেও আরো প্রস্তুতি নিতে হবে।

এজন্য পুতিন রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দিতে পারেন। আসন্ন শীতকালে ইউরোপে জ্বালানি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে। ফলে ইউরোপ এবং আমেরিকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটি নিয়েও রাশিয়া চিন্তা করছে। রিজার্ভ সৈন্য সমাবেশ করার পেছনে এটিও অন্যতম কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: বিবিসি, দ্য ইকোনমিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন