স্বর্ণ উত্তোলনের চেয়েও বিটকয়েন মাইনিং পরিবেশের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এজন্য বিটকয়েনকে ডিজিটাল স্বর্ণ বলার সময় শেষ হচ্ছে। কারণ সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, স্বর্ণ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন এবং মাংসের জন্য গবাদিপশু পালনের চেয়েও পরিবেশের ওপর বেশি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির। খবর দ্য গার্ডিয়ান। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর একটি গবেষণা বলছে, বিভিন্ন পণ্যের মোট বাজার মূলধনের সঙ্গে আবহাওয়াসংক্রান্ত ক্ষতি দিয়ে এ হিসাব করা যায়। যেমন কয়লার কথাই বলা যাক, জ্বালানিপণ্যটি পরিবেশের ঠিক ততটাই ক্ষতি করে যতটা বাজারে সমর্থন পায়। বাজার মূলধনের সঙ্গে কয়লার পরিবেশগত ক্ষতির অনুপাত ৯৫ শতাংশ বলে নিশ্চিত করেছে সমীক্ষাটি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিটকয়েন মাইনিংয়ের কারণে যে পরিমাণ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় সেটা গত পাঁচ বছরে মুদ্রাটির মোট বাজারমূল্যের ৩৫ শতাংশ, ২০২০ সালে যা ৮২ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছিল। এটাকে অনেকটা গরুর মাংসের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যেটা তার মোট বাজারের ৩৩ শতাংশ ক্ষতি সাধন করে। অথবা তুলনা করতে পারেন প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে, যে পণ্যের মূলধনের বিপরীতে পরিবেশগত ক্ষতির হার ৪৬ শতাংশ। সেটাও স্বর্ণের থেকে অনেক বেশি। সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি সমর্থকরা একে স্বর্ণের সঙ্গেই বেশি তুলনা করেন। যেখানে স্বর্ণের মোট বাজারমূল্যের বিপরীতে পরিবেশের ওপর তার প্রভাব মাত্র ৪ শতাংশ। ডিজিটাল এ মুদ্রার পরিবেশের ওপর অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্ষতির বিষয়টা আসে কম্পিউটার সিস্টেমের ওপর তাদের নির্ভরতা থেকেই। যেখানে লেনদেন নিশ্চিতের জন্য ‘প্রুফ-অব-ওয়ার্ক-মাইনিং’ করতে হয়। সেটাতে প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। নতুন বিটকয়েন মাইনিংয়ের জন্য সিস্টেমটিকে কম্পিউটার ব্যবহার করতে দিতে হয়। এভাবে একদিকে বিটকয়েনের লেনদেন সম্পূর্ণ হয় এবং অন্যদিকে ব্যবহারকারী কিছু বিটকয়েন জেতার সুযোগ পান। গবেষকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, এসব বিটকয়েন মাইনিংয়ের কারণে আবহাওয়ার যে ক্ষতি হবে সেটা কয়েন তৈরির মূল্যকে ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা হবে বিশেষত বাড়তি বিদ্যুৎ খরচের জন্যই। কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিটকয়েন মাইনিংয়ের চাহিদা পূরণ করতে পারে। কিন্তু গবেষণার লেখকরা বলছেন, প্রতিটি ডলার তৈরির জন্য যে পরিমাণ পরিবেশ বিপর্যয় হবে সেটা বিটকয়েন তৈরির ক্ষেত্রে ১০ গুণ বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমনকি সেটা বায়ু বা সৌরশক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রেও। টেকসই খাতের জন্য একে একটা লাল পতাকা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলতি সপ্তাহে প্রকাশিত বিটকয়েনের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে করা আরেকটি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রুফ অব ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ তৈরিতে যে পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয় সেটা আগের দাবি করা পরিমাণের তুলনায় অনেক বেশি। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটকয়েন ইলেকট্রিসিটি কনজাম্পশন ইনডেক্স দীর্ঘ সময় ধরে বিটকয়েন নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা বিদ্যুতের পরিমাণ গণনা করেছে। চলতি মাসে তাদের দেয়া একটি তথ্যে বিটকয়েন মাইনারসদের ভৌগোলিক বণ্টনকে উল্লেখ করা হয়। এসব তথ্য একত্র করে কোন অংশটা পুনর্ব্যবহারযোগ্য সেটা নির্ধারণ করা যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আঞ্চলিক পার্থক্যের ওপর পূর্ববর্তী গবেষণার সঙ্গে সেই তথ্য একত্র করে গবেষকরা নবায়নযোগ্য জ্বালানির অনুপাত বের করতে সক্ষম হন। ফলাফলে দেখা যায়, মোট বিদ্যুতের দুই-তৃতীয়াংশই (৬২ দশমিক ৪ শতাংশ) আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। পাশাপাশি টেকসই উৎস থেকে আসে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে নবায়নযোগ্য ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পারমাণবিকের অবদান ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন