পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোর সেনারা সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট পল-হেনরি দামিবাকে উৎখাত করেছে বলে জানিয়েছে। খাকি পোশাক ও মাস্ক পরিহিত সশস্ত্র সেনারা রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে হাজির হয়ে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাতে খাকি পোশাক ও মাস্ক পরিহিত সশস্ত্র সেনারা রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে হাজির হয়ে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এ নিয়ে চলতি বছরই বুরকিনা ফাসোতে দ্বিতীয় অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটল। শুক্রবার দিনের শুরুটা হয়েছিল রাজধানী ওগাদুগুর একটি সামরিক ক্যাম্পে গোলাগুলি দিয়ে আর টেলিভিশনে আসা ঘোষণার মধ্যে দিনটি শেষ হয়। এদিন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের অনুষ্ঠান একাধিকবার বিঘ্নিত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে অভ্যুত্থান নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাহেল অঞ্চলে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের প্রবল উপস্থিত, হাজার হাজার মানুষ হত্যা এবং জঙ্গিদের পরাজিত করার পথ বের করতে না পারা দুর্বল সরকারগুলোর ওপর মানুষের আস্থাহীনতার সুযোগ নিচ্ছে অভ্যুত্থানকারীরা। মালি, শাদ ও গিনি ২০২০ সাল থেকেই একের পর অভ্যুত্থান দেখে যাচ্ছে। গত এক দশক ধরে গণতান্ত্রিক পথে অঞ্চলটির খানিকটা অগ্রগতি হলেও সেখান থেকে পিছু হটে দেশগুলো সামরিক শাসনে পতিত হতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়ছে। বুরকিনা ফাসোর নতুন নেতা হচ্ছেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ত্রাওরে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি অভ্যুত্থানের পর দামিবা যেভাবে হাজির হয়েছিলেন, সেরকম করেই ত্রাওরেও সৈন্য পরিবেষ্টিত হয়ে টেলিভিশনে হাজির হন এবং সরকার বিলুপ্ত ও সংবিধান স্থগিত করে, সীমান্ত বন্ধ রাখার ও রাত্রিকালীন কারফিউ জারির ঘোষণা দেন। অভ্যুত্থানের পর পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট দামিবা কোথায়, কী অবস্থায় আছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা জানা যায়নি। ত্রাওরে বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের যে দলটি জানুয়ারিতে দামিবার ক্ষমতা দখলে সহায়তা করেছিল, তারাই ইসলামি জঙ্গিদের মোকাবেলায় অদক্ষতার কারণে তাকে (দামিবা) পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই কারণ দেখিয়ে জানুয়ারিতে দামিবাও প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরেকে উৎখাত করেছিলেন। “পরিস্থিতির ক্রমাবনতির মুখে, আমরা বেশ কয়েকবারই চেষ্টা করেছি, দামিবা যেন নিরাপত্তার বিষয়ে বেশি মনোযোগ দেন। কিন্তু তিনি সেনাবাহিনী পুনর্গঠনে কর্মকর্তাদের দেওয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং একই সামরিক কাঠামো বহাল রাখেন, যা পূর্ববর্তী শাসনগুলোর পতন ডেকে এনেছিল,” ত্রাওরে স্বাক্ষর করা বিবৃতিতে এমনটাই বলা হয়েছে। টেলিভিশনে অন্য এক সৈন্য এ বিবৃতিটি পড়ে শোনান। “আমরা যা করার লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, ক্রমেই বুঝতে পারি যে দামিবার পদক্ষেপে, তার আকাক্সক্ষার কারণে আমরা তা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তাই আজ আমরা তাকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই,” বলা হয়েছে বিবৃতিতে। নতুন একজন বেসামরিক বা সামরিক প্রেসিডেন্ট ও ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ক নতুন চার্টার ঠিক করতে সব অংশীদারদের শিগগিরই ডাকা হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোর তুলনায় সামরিক জান্তা হয়তো জঙ্গি দমনে বেশি সফল হবে, এই আশাবাদ থেকে সামরিক অভ্যুত্থানে বেসামরিক লোকজন এতদিন সন্তুষ্টি প্রকাশ করে এলেও তাদের আশা ক্রমেই মøান হয়ে পড়ছে। বুরকিনা ফাসো এখন আল কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোর সহিংসতার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছে। ২০১২ সালে প্রতিবেশী মালিতে এ জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয় এবং ক্রমশই তা সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চলীয় পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে বিস্তৃত হতে থাকে। তাদের একের পর এক হামলা হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, লাখ লাখ লোককে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন