শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

দুই অঙ্কের ঘরে ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০৮ এএম

ইউরো অঞ্চলে মূল্যস্ফীতির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা দেশগুলোয় সেপ্টেম্বরে ভোক্তা মূল্য সূচক দুই অংকের ঘরে পৌঁছেছে। ১৯ দেশের অঞ্চলটিতে জুলাইয়ে এ হার ৯ দশমিক ১ শতাংশে ছিল। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ঠেলে দেয়া মূল্যস্ফীতির চাপ আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতার কারণে এ অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। এ পরিস্থিতি বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনীতিতে শীতকালীন মন্দার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, গত মাসে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রেকর্ড ১০ শতাংশ বেড়েছে। এ হার ১৯৯৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। গত বছরের এ সময়েও মূল্যস্ফীতি ৪ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। গত মাসের মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে জ্বালানি। এক বছর আগের তুলনায় অঞ্চলটিতে জ্বালানির দাম ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। খাদ্য, অ্যালকোহল ও তামাকের দাম ১১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। ক্রমবর্ধমান এ প্রবণতা ইউপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংককে (ইসিবি) আরো আগ্রাসীভাবে সুদের হার বাড়ানোর জন্য চাপ তৈরি করছে। জার্মানির কোলনে একটি বাজারে কেনাকাটা করা ৬৪ বছর বয়সী প্রশিক্ষক মাইরিয়াম মাইরহোফার বলেন, আমি এরই মধ্যে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশেষ অফার খোঁজা শুরু করেছি। পাশাপাশি খাবার কেনাকাটায়ও মিতব্যয়ী হয়েছি। এমনকি জ্বালানি বিল কমাতে ঘর গরম রাখার হিটার চালানোও বন্ধ করে দিয়েছি। রাশিয়া থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি এবং কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সময় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের সরবরাহ পেতে প্রতিবন্ধকতার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ঘাটতির কারণে গ্যাসের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সার ও ইস্পাতের মতো জ্বালানিনির্ভর ব্যবসা লাভজনকভাবে পণ্য তৈরি করতে পারবে না। অন্যদিকে ইউটিলিটি বিল, খাদ্য ও জ্বালানির উচ্চ খরচ মেটাতে অতিপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছেন ভোক্তারা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইসিবি সুদের হার বাড়িয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদরা চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছেন। অঞ্চলটির অর্থনৈতিক কার্যক্রমে একটি গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী মন্দার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় অর্থনীতিবিদ জেসিকা হিন্ডস বলেন, সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির চাপ ইসিবির জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হতে পারে। ২৭ অক্টোবরের বৈঠকে বেঞ্চমার্ক সুদের হার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়াতে পারে ব্যাংকটি। উচ্চ সুদহার জনগণ ও ব্যবসার জন্য ঋণ নেয়া, বিনিয়োগ ও ব্যয় করাকে আরো ব্যয়বহুল করে তোলে এবং পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেয়। এভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে। গত মাসে ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি যুক্তরাজ্যের ৯ দশমিক ৯ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিস্তৃত খাতজুড়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহে লাগাম টেনেছে। যদিও গ্যাস সরবরাহ কমার পেছনে প্রযুক্তিগত সমস্যাকে দায়ী করেছে মস্কো। এদিকে ইইউর জ্বালানিমন্ত্রীরা জীবাশ্ম জ্বালানি সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফার ওপর করারোপসহ সংকট কমাতে নানামুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। দেশগুলো পৃথকভাবে পরিবার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে লাখ লাখ ডলার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে। গত মাসে জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি দুই অংকের ঘরে আঘাত করেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশটির সরকার ২০ হাজার কোটি ইউরো পর্যন্ত ব্যয় করার ঘোষণা দিয়েছে। ডিডব্লিউ, রয়টার্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন