শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

পুতিনের পারমাণবিক অস্ত্রে ধ্বংস হয়ে যাবে ইউরোপ

ডানা ইশরাত | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আট মাসের মাথায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সম্প্রতি তার বক্তৃতায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। গত শুক্রবার পুতিন ইউক্রেনের প্রায় এক পঞ্চমাংশের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ায় সংযুক্তির ঘোষণা দেওয়ার সময় পশ্চিমের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং রাশিয়ার নতুন অঞ্চল রক্ষায় ক্রেমলিনের সকল শক্তি ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই বিশ^ যখন এ যুদ্ধের ফলে খাদ্য ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে মুখে, তখন তার এ মন্তব্যকে ব্যাপকভাবে পরমাণু হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক সিআইএ পরিচালক এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে মার্কিন ও ন্যাটো জোট ইউক্রেনে রাশিয়ান বাহিনীকে ধ্বংস করবে এবং কৃষ্ণ সাগরের এর নৌবহরকে ডুবিয়ে দেবে, তবে, পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা ন্যাটো দেশগুলোকে তথা ইউরোপকে ছেয়ে ফেলবে।

পেট্রাউস এবিসি’র ‘দিস উইক’ অনুষ্ঠানে রোববার বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া দরকার এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘মরিয়া’ কারণ যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি যে বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা অপরিবর্তনীয়’। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ন্যাটোর দেশ না হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া ঘটবে’। তিনি বলেন, ইউক্রেন থেকে একটি পারমাণবিক অস্ত্রের তেজস্ক্রিয়তার বিকিরণ একটি ন্যাটো দেশে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কাকে একটি ন্যাটো সদস্যের ওপর আক্রমণ হিসাবে দেখা হবে। প্রেট্রোস বলেন, ‘এটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, একটি প্রতিক্রিয়া হতে হবে যা না করে থাকা যাবে না। শুধু আপনাদের একটি অনুমানিক চিত্র দেওয়ার জন্য, আমরা ন্যাটোর নেতৃত্বে প্রতিক্রিয়া জানাব, একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যা প্রতিটি প্রচলিত রাশিয়ান শক্তির মোকাবেলা করবে, যা আমরা ক্রিমিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে এবং কৃষ্ণ সাগরের প্রতিটি জাহাজে দেখব এবং সনাক্ত করবো’।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ যদি এভাবেই প্রলম্বিত হতে থাকে এবং একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত কোণঠাসা রাশিয়া যদি সত্যিই পারমাণবিক আক্রমণ করে বসে, তাহলে এর ভয়াবহতা চেরনবিল দুর্ঘটনার মতো ইউক্রেনে আরো একটি বিপর্যয় ডেকে আনবে, যা শুধু ইউরোপকেই ধ্বংস করে দেবে না, এর রেশ বিপর্যয় ডেকে আনবে সমগ্র পুথিবী জুড়ে। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার ফলে ইউক্রেনের ৫০ লাখ একর ফসলি জমি উষর হয়ে গিয়েছিল। ইউরোপের বাকি দেশগুলো এর ফলে দূষিত জমিতে চরানো গরু থেকে শুরু করে শাকসবজি এবং দুধে পর্যন্ত উচ্চ মাত্রার বিকিরণ অবলোকন করেছে। ইউক্রেনের ওপর পারমাণবিক আক্রমণ তাৎক্ষণিকভাবে এর আশেপাশের বেশিরভাগ প্রাণের মৃত্যু ঘটাবে। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরিত সুবিশাল মাশরুম আকারের অগ্নিকুণ্ড, শকওয়েভ এবং তীব্র বিকিরণের একটি বায়ু, মাটি, পানি এবং খাদ্য সরবরাহকে দূষিত করে দেবে। এর পরিবেশগত ক্ষতি সুদূরপ্রসারী। বিকিরণের মাত্রা মানুষ, উদ্ভিদ এবং প্রাণী জগতের ডিএনএতে ক্ষতিকারক পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

২০১১ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে রিপোর্ট করা হয় যে, এটি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস বা ধ্বংস করে দিতে পারে এবং অতিরিক্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বা অঙ্গহীনতা বা বিকলাঙ্গতাসহ সন্তানের চেহারায় বিকৃত পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তেজস্ক্রিয় নদী বা সমুদ্রের পানি বসবাসকারী জলজ জীবের ডিম এবং লার্ভায় ক্ষতিকর পরিবর্তন ঘটাতে পারে। ‘এনভায়রনমেন্টাল হেল্থ পার্সপেক্টিভস’-এর ১৯৯৬ সালের একটি প্রবন্ধ অনুসারে, পারমাণবিক বিকিরণের কারণে সৃষ্ট ডিএনএ-গত পরিবর্তন হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের ক্যান্সারের দিকে পরিচালিত করেছে। ২০১২ সালের ‘দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্ট’-এ প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে লেখক এ. রবোক এবং ও.বি টুন উল্লেখ করেছেন যে, পারমাণবিক যুদ্ধের ঘন ধোঁয়া সূর্যালোককে বাধাগ্রস্ত করবে এবং পৃথিবীকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। সালোকসংশ্লেষণের জন্য উষ্ণতা এবং সূর্যালোক না থাকলে, খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাপক অনাহার ঘটবে এবং ব্যাপকহারে উদ্ভিদ মারা যাবে।

এ. রবোক এবং ও.বি টুন আরো বলেছেন, এমনকি পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলোর ছোট আকারের ব্যবহারও পৃথিবীর ওজোন স্তরকে হ্রাস করে দেবে, ঋতু বৈচিত্রের সময়কালকে ক্রমেই ছোট করে দেবে, তাপমাত্রা এবং আরো বৃদ্ধি করে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবকে দ্রুততর করবে। পেট্রাউস বলেন, ‘কোনো পরিমাণ অঞ্চল সংযুক্তি; এমনকি কোনো পরিমাণও মাত্রার লুকানো পারমাণবিক হুমকিও তাকে এ বিশেষ পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে পারবে না। কোনো এক সময়ে সেটাকে আমলে নিতে হবে। কোনো না কোনো সময়ে আলোচনার কোনো ধরনের সূচনা ঘটাতে হবে, যেমনটি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এটিই হবে চূড়ান্ত সমাপ্তি’। তথ্য সূত্র : ডেউলি মেইল, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স এভং ইন্টারনেট।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Sadek Ahmed Chowdhury ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৫৫ এএম says : 0
· এই বেটা পুটিন কবে যে আমাদের উড়িয়ে দেয় সেই ভয়ে রাতে ঘুম আসেনা
Total Reply(0)
Milton Khandokar ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৫৬ এএম says : 0
Direct google translate korei post kora!! Ektu to edit kora jai. Every news ei era ei kaj kore.
Total Reply(0)
Md Shahjahan ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
ইউরোপের আগে ইসরায়েলকে ধ্বংস করে দেওয়া হোক। সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Kamrul Islam ৪ অক্টোবর, ২০২২, ৭:৫৭ এএম says : 0
সেটাই হোক,ইউরোপকে ধ্বংস করে দেয়া হোক,,,
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন