শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্রিমিয়া সেতুতে বিস্ফোরণে নিহত ৩, ইউক্রেনে উল্লাস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২২, ৮:২৩ পিএম

ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে যুক্ত করা একমাত্র সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে সেটির একাংশ ধসে পড়েছে। কার্চ সেতু নামে পরিচিত এই সেতুতে দুটো অংশ রয়েছে। একটি অংশে রয়েছে রেলপথ। অন্য অংশে সড়ক যান চলাচল করে। শনিবারের বিস্ফোরণে সেতুর উভয় অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সড়ক সেতুর অংশে। এতে তিনজন নিহত হয়েছে বলেও জানিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়া বলছে, একটি গাড়িবোমা ব্যবহার করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে, তাৎক্ষণিকভাবে এর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দ্রুততম সময়ে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশিয়া-ক্রিমিয়ার মধ্যে স্থলসংযোগের একমাত্র মাধ্যম এই কার্চ সেতু। কার্চ প্রণালীর ওপর নির্মিত এই সেতুটি প্রায় ১৯ কিলোমিটার লম্বা। এই অবকাঠামোকে ক্রিমিয়া ও দক্ষিণ ইউক্রেন অঞ্চলে রুশ আধিপত্যের প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। এছাড়া, ইউক্রেনের দক্ষিণে রুশ সামরিক অভিযান টিকিয়ে রাখার অন্যতম চাবিকাঠিও এই কার্চ সেতু।
শনিবার ভোরের দিকে ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়াকে জুড়ে দেয়া সেতুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। প্রথমে একটি ট্রাক বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। পরে তেলবাহী ট্রেনের ৭টি ওয়াগনে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবগ হয়ে ওঠে। সেতুর ওপর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। বিস্ফোরণে সেতুটির একটি অংশ ধসে পড়েছে।
সমাজিক মাধ্যমে বিস্ফোরণ-পরবর্তী বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, কার্চ সড়ক সেতুর একটি অংশ মাঝ বরাবর ভেঙে পড়েছে। আর রেল চলাচলের অংশে একটি ট্রেনে জ্বলছে দাউদাউ আগুন। ওই অংশেই বিস্ফোরণটি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তখন রেল সেতুর উপর দিয়ে দুরন্ত বেগে ছুটে যাচ্ছিলো একটি ট্রেন।
স্থানীয় সময় শনিবার ভোর ৬টা নাগাদ বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে কার্চ সেতু। বহু দূর পর্যন্ত সেই আওয়াজ শোনা গিয়েছিলো। ভিডিওতে দেখা গেছে, সেতুর উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের কয়েকটি কামরায় আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চারপাশ। তবে ঠিক কী কারণে সাতসকালে এই সেতুতে বিস্ফোরণ হল, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
২০১৮ সালে ১৯ কিলোমিটার কার্চ সেতুর সড়ক সেতু অংশ চালু করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার দুই বছর পর রেল পরিবহণের অংশটিও চালু করা হয়। আগুন বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হলো সেই সেতু। এটি ব্যবহার করেই ক্রিমিয়াতে সামরিক রসদসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন করে থাকে রাশিয়া। সেতুতে বর্তমানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০১৪ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় মস্কো। পরে ওই অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ বলে ঘোষণাও করা হয়। দক্ষিণ ইউক্রেনের এই অঞ্চলের সঙ্গে মস্কোর সরাসরি যোগাযোগের জন্য ২০১৮ সালে দুই লেনের এই সেতু উদ্বোধন করেন ভ্লাদিমির পুতিন। একটি লেন দিয়ে ট্রেন চলে। অপর লেনে চলে বাস ও অন্যান্য যান। রেলের অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি।
ঘটনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক রাশিয়ার ক্ষতিকে ‘মাত্র শুরু’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে, সরাসরি ঘটনার জন্য ইউক্রেনের দায় স্বীকার করেননি। তিনি জানান, রাশিয়ার অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করতে হবে, চুরি হওয়া সব কিছু ইউক্রেনে ফেরত দিতে হবে, রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছু অবশ্যই নির্মুল করতে হবে।
ইউক্রেন সরকারের অফিসিয়াল টুইট বার্তায় আগুনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখা হয়েছে, বিস্ফোরণের আগুন। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই সেতু বিস্ফোরণকে এপ্রিলে রাশিয়ার মস্কভা ক্ষেপণাস্ত্র ক্রুজার ডুবে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছে। টুইটে মন্ত্রণালয় জানায়, ইউক্রেনের ক্রিমিয়াতে রুশ শক্তির দুইটি কুখ্যাত প্রতীক হারিয়ে গেছে। এর পরে কি হবে?
পুতিনের ৭০তম জন্মদিন পালনের ঠিক পরদিন কার্চ সেতুতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো। এই ঘটনার পর সোশাল মিডিয়ায় জ্বলন্ত সেতুর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ইউক্রেনীয়দের উল্লাস করতে দেখা গেছে। তারা সেতুটিকে বিশেষভাবে ঘৃণা করে। অন্যদিকে, ক্রিমিয়াতে যে কোন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য অপমান হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।
সেতুর ওপর দিয়ে সড়ক ও রেল চলাচল বন্ধ থাকায় রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড এবং ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মধ্যে ফেরি চলাচল ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানিয়েছে ক্রিমিয়ার স্থানীয় রুশ কর্তৃপক্ষ। ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ভ্লাদিমির কনস্টান্টিনভ বিস্ফোরণের জন্য ‘ইউক্রেনীয় সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করে বলেছেন, সেতুর ক্ষতি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা হবে, কারণ এটিতে গুরুতর কিছু হয়নি।
২.৭ বিলিয়ন ডলারের কার্চ সেতু ইউরোপের দীর্ঘতম সেতু। রুশ মিডিয়া এটিকে ‘শতাব্দী সেরা অবকাঠামো’ বলেও প্রশংসা করেছে। রুশ কর্মকর্তারা আগে দাবি করেছিলেন, এটি জল-স্থল এবং আকাশ পথ- সব দিক থেকেই যে কোন হুমকি থেকে সুরক্ষিত। ফলে শনিবারের বিস্ফোরণের পর পুরো ঘটনা রাশিয়া এবার ভিন্ন দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে ক্রিমিয়া সেতুর সাধারণ যান চলাচলের অংশে বিস্ফোরণে একটি ট্রাক উড়ে গেছে। ক্রিমিয়াগামী ট্রেনের তেলবাহী ৭টি ট্যাংকেও আগুন ধরে যায়। সেতুর দুটি অংশই ধ্বসে গিয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এবারের যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রিমিয়াও ছিনিয়ে নিতে চাইছে ইউক্রেনীয় সেনারা। সেতুর ক্রসিং ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে ১৬০ কিলোমিটারের বেশি দূরে অবস্থিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর ফলেই এই বিস্ফোরনের ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তবে, এই বিস্ফোরণের ঘটনা মিসাইল হামলার ফলে ঘটেনি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, সেতুর আশেপাশে ক্ষয়ক্ষতির লক্ষণ না থাকায় ধরে নেয়া যায় সেখানে আকাশ থেকে ছোঁড়া অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। তবে সেতুর নিচ থেকে সুপরিকল্পিত হামলা বা গাড়িবোমা হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন