মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর বিশ্ব প্রথমবারের মতো বিপর্যয়কর পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্কে ডেমোক্রেটিক পার্টির দাতাদের এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বাইডেন বলেন, আমরা এমন একজনের মোকাবিলা করছি, যাকে আমি জানি। পুতিন কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র কিংবা জীবাণু অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলছেন, তার মানে তিনি তামাশা করছেন না। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে তার সামরিক বাহিনী এখন শক্তভাবে লড়াই করতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন, তা ছোট পরিসরে ও কৌশলগত হতে পারে। তবে বাইডেন সতর্ক করে বলেন, রাশিয়া ছোট আকারের কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করলে দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। সেটা মানব সভ্যতাকে বিপর্যয়কর হুমকির (আরমাগেডন) মুখে ফেলবে। বাইডেন বলেন, পুতিন নিশ্চয়ই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাশিয়ায় তার ক্ষমতা হারাতে চান না। ইউক্রেন সংঘাতে পুতিনের প্রস্থানের পথ কী হবে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন বলে বাইডেন জানান। বর্তমান পরিস্থিতিকে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সঙ্গে তুলনা করেছেন বাইডেন। কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে কেন্দ্র করে ১৯৬২ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এটি শুরু হয়েছিল যখন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ একটি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে কিউবায় পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। তখন ওয়াশিংটন ডিসি এবং নিউ ইয়র্ক শহর রুশ পরমাণু অস্ত্রের সীমার মধ্যে চলে আসে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন কয়েক দফা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে পুতিন বলেন, নতুন ভূখণ্ড রক্ষার জন্য প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করবে রাশিয়া। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিকিরণ অসুস্থতার ওষুধ মজুত করছে বলে উইওনের এক খবরে বলা হয়েছে। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (এইচএইচএস) জানিয়েছে, তারা অ্যামজেনের ব্লাড ডিসঅর্ডার ড্রাগ এনপ্লেট মজুত করতে ২৯ কোটি ডলার ব্যয় করবে। যা অ্যাকুয়িট রেডিয়েশন সিন্ড্রোম (এআরএস) দ্বারা শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে সৃষ্ট রক্তের কোষের আঘাতের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেন। এর আগে বিচ্ছিন্ন এই দেশটি ধারাবাহিকভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। ব্লিংকেন এমনভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে সেগুলোর ‘গতি, মাত্রা ও ব্যাপ্তিতে’ নজিরবিহীন হিসেবে বর্ণনা করেন। গত ১২ দিনে উত্তর কোরিয়া ছয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মধ্যে সর্বসাম্প্রতিক পরীক্ষাটি বৃহস্পতিবার চালানো হয়। সেদিন দুটি স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসআরবিএম) উৎক্ষেপণ করা হয়। একইসাথে, জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে কূটনীতিকরা এই নিয়ে বিতর্কে জড়িত ছিলেন যে তার দুই দিন আগে জাপানের উপর দিয়ে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে কিভাবে সাড়া দেয়া যায়। শুক্রবার দেয়া এক বিবৃতিতে ব্লিংকেন বলেন, উত্তর কোরিয়া বা ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়া (ডিপিআরকে) শুধুমাত্র এই বছরেই ৪১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে, যার মধ্যে ছয়টি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। তিনি ঘোষণা দেন, এর জবাবে ডেমোক্রেটিক পিপল’স রিপাবলিক অফ কোরিয়াতে পেট্রোলিয়াম রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড, যেগুলো কিনা ডিপিআরকে এর অস্ত্র কর্মসূচি ও তাদের সামরিক বাহিনীর উন্নয়নে সরাসরি সমর্থন যোগায়, সেগুলোর কারণে দুজন ব্যক্তি ও তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। ব্লিংকেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের অফিস অফ দ্য ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল (ওএফএসি), নিউ ইস্টার্ন শিপিং কোং লিমিটেডসহ কোয়েক কি সেং এবং চেন শিহ হুয়ান নামের দুই ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে, কারণ তারা ডিপিআরকে-তে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য স্থানান্তর বা সরবরাহে অংশগ্রহণ করেছেন। বিবৃতিটিতে ব্লিংকেন বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ’যুক্তরাষ্ট্র একটি পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে যে যারা ডিপিআরকে’র সামরিক ও অস্ত্রভাণ্ডার উন্নয়নে ও তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া আমরা অব্যাহত রাখব। বিবিসি, রয়টার্স, ভিওএ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন