শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

মিয়ানমারের পারমাণবিক আকাক্সক্ষায় নীরব থাকতে পারে না বিশ্ব

দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য বিপর্যয়

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের ‘পারমাণবিক উচ্চাকাক্সক্ষা’ ইস্যুতে নীরব থাকতে পারে না বিশ্ব। যদি তারা পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে তাহলে তা হবে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার জন্য এক বিপর্যয়। আঞ্চলিক সব দেশই মিয়ানমারের সরাসরি নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। পারমাণবিক মিয়ানমার শুধুই আঞ্চলিক সব দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি হতে যাচ্ছে এমন নয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া স্থায়ীভাবে ঝুঁকিতে পড়বে। অনলাইন ইউরেশিয়া রিভিউতে এক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন ড. অর্পিতা হাজারিকা। এতে তিনি আরও লিখেছে, অবশ্যই বিভিন্ন জাতিগত বিরোধীপক্ষ এবং বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করবে সামরিক জান্তা। শুধু তা-ই নয়। পুরো দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চল হয়ে উঠবে অস্থিতিশীল। দিন দিন মিয়ানমারের আগ্রাসি আচরণ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। এটা বোঝা এবং অনুধাবনের জন্য উত্তম উদাহরণ হলো মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের সাম্প্রতিক উত্তেজনা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এতটাই নৃশংস ও নিষ্ঠুর যে, তারা নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাচ্ছে। তাই মিয়ানমারের হাতে যদি পারমাণবিক অস্ত্র যায়, তাহলে তারা উত্তর কোরিয়ার চেয়েও অধিক বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। ওই প্রতিবেদনে অর্পিতা হাজারিকা আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের আকাশ ও স্থল সীমান্ত অব্যাহতভাবে লঙ্ঘনের কারণে প্রতিবাদ জানাতে চতুর্থবারের মতো ১৮ই সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কাইওয়া মোই’কে তলব করে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মধ্য আগস্ট থেকে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করেছে। মাঝে মাঝেই গোলা বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। ১৬ই সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি মর্টার বোমা পড়েছে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্রে। এতে ১৮ বছর বয়সী একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫ জন। উপরন্তু ৩রা সেপ্টেম্বর মিয়ানমারের সামরিক যুদ্ধবিমান সমন্বিতভাবে গুলি ছুড়েছে, যখন তারা বাংলাদেশি আকাশসীমায় ছিল। এ বিষয়টি নোটিশ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশীর অন্যতম হলো মিয়ানমার। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, তারা নিকট প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করে না। ২০১৭ সালের ২৫ শে আগস্ট রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ সময় তারা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালায়। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। এই নিষ্ঠুরতা থেকে বাঁচতে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় চান। তার আগে বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমার থেকে হাজার হাজার রেহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে ঠাঁই নিয়েছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে তালিকাভুক্ত ১২ লাখ ৫০ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। তাদেরকে ছেড়ে দেয়া মিয়ানমারের জন্য জটিল হয়েছে। মূল্য দিচ্ছে বাংলাদেশ। তাদের পক্ষ থেকে অসংখ্যা মিথ্যার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমার অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করছে। এটা এক বড় বিস্ময়ের ব্যাপার। সীমান্তে কোনো দেশেরই অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করার কর্তৃত্ব নেই। সুস্পষ্টতই এটা আন্তর্জাতিক আইন, মানদণ্ড ও রীতির বিরুদ্ধ। মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ। তাদের সীমান্তে গোলা নিক্ষেপ হোক সেটা যেকোনো উদ্দেশে বা দুর্ঘটনাবশত- তা অগ্রহণযোগ্য। অন্য দেশের ভূখণ্ড লঙ্ঘন করার অধিকার মিয়ানমারের নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এটা অগ্রহণযোগ্য। মিয়ানমারের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এবং রাশিয়ার রাষ্ট্র মালিকানাধীন পারমাণবিক জ্বালানি বিষয়ক কর্পোরেশন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এর অধীনে তারা যৌথভাবে দক্ষিণপূর্ব এ দেশটিতে ছোট আকারে পারমাণবিক চুল্লি বা রিঅ্যাক্টর প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার দীর্ঘদিনের পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়ার বিষয়টি জোরালো হয়েছে। ‘রোডম্যাপ ফর কোঅপারেশন আপন ইটস ওন সিটিজেন্স’ স্বাক্ষর করেছেন মিয়ানমারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মাইও থেইন কাইওয়া, বিদ্যুৎ বিষয়ক মন্ত্রী থুয়াং হ্যান এবং রাশিয়ার স্টেট এটমিক এনার্জি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যালেক্সি লিখাচেভ। ৫ থেকে ৮ই সেপ্টেম্বর ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেয়ার সময় তারা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর তত্ত্বাবধান করেন সামরিক জান্তা জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এই চুক্তির ফলে মিয়ানমার পারমাণবিক শক্তির দিকে ধাবিত হবে। ৬ই সেপ্টেম্বর রোসাটম বলেছে, এর ফলে মিয়ানমারে ছোট আকারে পারমাণবিক চুল্লি বিষয়ক প্রকল্পের উপযোগিতা যাচাই করা হবে। একই দিন সামরিক জান্তা ঘোষণা করে যে, পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করা হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, ওষুদ তৈরি এবং শিল্প কারখানার জন্য। মিয়ানমারে পারমাণবিক কর্মসূচি আছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তারা প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়ায় বিজ্ঞানী, টেকনিশিয়ান এবং সেনা কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছে। বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য মিয়ানমারকে ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি সরবরাহ করতে রাজি হয়েছে মস্কো। এখন প্রশ্ন হলো- বিশ্ব কেন এসব বিষয়ে নীরব রয়েছে? কেন এ সময়ে এ বিষয়ে কোনো উদ্বেগ নেই আসিয়ানে?

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন