বিশ্ব যখন একের পর এক মহামারীর শঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন কলেরা ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে শান্থা বায়োটেকনিকস। ফরাসি কোম্পানি সানোফির এ সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের অপ্রত্যাশিত এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠান কলেরা ভ্যাকসিন তৈরি করে আসছিল, যার একটি ভারতভিত্তিক শান্থা বায়োটেকনিকস, যার সম্প‚র্ণ মালিকানা সানোফির। স¤প্রতি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তারা শ্যানকল নামে ভ্যাকসিন উৎপাদন কয়েক মাসের মধ্যেই বন্ধ করবে। ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদিত ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। সানোফির আকস্মিক এ সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য খাতসংশ্লিষ্টরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) কলেরা বিভাগের টিম লিডার ফিলিপ বারবোজা বলেন, ডবিøউএইচওর মহাপরিচালক ড. টেড্রোস অ্যাডহ্যানমের বারবার অনুরোধ সত্তে¡ও ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শান্থা। সহজে বলতে গেলে এটা খুবই আপত্তিকর কৌশল। বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং কলেরা প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা রয়েছে এমন দেশগুলোতে শ্যানকল ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি ছিল। মুখে গ্রহণ করার মতো মাত্র দুই ধরনের ভ্যাকসিনের একটি ছিল শ্যানকল। সহজে নিরাময়যোগ্য হলেও ডবিøউএইচও বলছে, কলেরায় প্রতি বছর ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। নিরাপদ খাওয়ার পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে এখনো হুমকি হিসেবে রয়েছে কলেরা। বর্তমানে হাইতি, সিরিয়া, লেবানন, নাইজেরিয়া, মালাউই ও ইথিওপিয়ার মতো দেশ কলেরার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। সানোফির এক মুখপাত্র দ্য গার্ডিয়ানকে জানান, কলেরা ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল ২০২০ সালের অক্টোবরে। দায়িত্বশীল অংশীদার হিসেবে আমরা তখন থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা ও কলেরা নিয়ে কাজ করছে এমন ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অবহিত করেছি। ওই মুখপাত্র আরো জানান, চলতি বছরের শেষ নাগাদ শ্যানকল উৎপাদন বন্ধ করে দেবে তারা। আগামী বছরে বিদ্যমান ক্রয়াদেশের ডেলিভারি শেষ হলে সরবরাহও বন্ধ হয়ে যাবে। গত সপ্তাহে ডবিøউএইচওর প্রধান টেড্রোস সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, আবহাওয়া সংকটের কারণে কলেরার বিস্তার আরো বেড়েছে। বন্যা, সাইক্লোন ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিরাপদ পানি দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কলেরায় মৃতের হার। চলতি বছরে কলেরায় মৃতের হার বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ডবিøউএইচওর বারবোজা বলেন, ২০২২ সালে এসে কলেরায় মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। এ রোগের চিকিৎসায় রেসপিরেটর বা জটিল কিছু লাগে না। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকার না থাকায় অনেকে মারা যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মালাউইর স্বাস্থ্যমন্ত্রী খুমবিজ চিপোন্দা জানান, গত মার্চে কলেরা প্রাদুর্ভাবের পর প্রায় চার হাজার আক্রান্ত হয়েছে এবং এতে প্রাণ গেছে ১১০ জনের। ৮ অক্টোবর হাইতি কর্তৃপক্ষ জানায়, রাজধানী পোর্ট অব প্রিন্সে ২২০ জনের অধিক কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে এবং এতে ১৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন