চীনা ভোক্তারা সাধারণত পশ্চিমা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের হ্যান্ডব্যাগ, জামাকাপড়সহ আনুষঙ্গিক ফ্যাশন পণ্যের ভোক্তা হিসেবে পরিচিত। দামি ও ফ্যাশনেবল পণ্যের প্রতি তাদের অবাধ ব্যয়ের মনোভাবের কারণে লাভবানও হয়েছে পশ্চিমা অনেক ব্র্যান্ড। এ ব্র্যান্ডগুলোকে টিকিয়ে রাখার পেছনে চীনের ভোক্তাদের অবদানও কম নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই চীনা ক্রেতাদের অভিজাত পশ্চিমা পণ্য ক্রয়ের আগ্রহে অনেকটা ভাটা পড়েছে। বরং তারা ঝুঁকছেন আইসক্রিম ও পানীয়ের মতো দামি সব খাবারের দিকে। খবর রয়টার্স। চলতি বছর অর্থনীতি ঘিরে বয়ে চলা মন্দা বাতাস অভিজাত পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তবে তারা নতুন করে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন দামি আইসক্রিম, পানীয় আর স্মার্ট ট্রেন্ডি গ্যাজেট ও যন্ত্রপাতি ঘিরে। চীনা ক্রেতাদের আগ্রহ পরিবর্তনের ফলে লাফিয়ে যেসব পণ্য বিক্রি বাড়ছে তার মধ্যে অন্যতম স্থানীয় পানীয়ের ব্র্যান্ড কিউইচো মোতাই। বাইজিউ নামে এ ব্র্যান্ডের প্রতি বোতল পানীয়ের মূল্য ৩০০ ডলার। ছুটির দিনে, বনভোজনে বা অবসর কাটাতে চীনে এ পানীয়ের জনপ্রিয়তা রয়েছে। গত মে মাসে ব্র্যান্ডটি নতুনপণ্য হিসেবে আইসক্রিম বাজারজাত করে। কাপপ্রতি যার মূল্য ১০ ডলার। প্রথম দিনেই প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ২৫ লাখ ইউয়ান (৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার) ছাড়িয়ে যায়। হংকংয়ের পানীয় প্রস্তুতকারক কোম্পানি বুডওয়েজার ব্রুইং এশিয়া-প্যাসিফিকের তথ্য অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটির প্রিমিয়াম পণ্যের পাশাপাশি শত শত ডলার মূল্যের বিয়ারের গিফট বক্স অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো বিক্রি হচ্ছে। ই-কমার্স জায়ান্ট জেডি ডটকম থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, শাওয়ার হেড, স্মার্ট টুথব্রাশ, প্রিন্টার, গেমিং গিয়ার ও হোম ডিভাইসের বিক্রি গত বছরের চেয়ে চার গুণ বেড়েছে। দেশটির জিরো কভিড নীতির ফলে ঘন ঘন লকডাউন ব্যবসায়িক কার্যকলাপকে বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি পর্যটনের মতো ব্যয়ের ক্ষেত্রগুলোকেও প্রভাবিত করেছে। সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাত। প্রযুক্তি ও ব্যক্তি খাতের শিল্পগুলো নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে তীব্রভাবে লাগাম টেনেছে। এটি যুব বেকারত্বের হার বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। এদিকে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) দেশটির অর্থনীতি সংকোচনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাছাড়া খুচরা বিক্রি জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও এ হার সাম্প্রতিক বছরগুলোর ৮-৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারেকাছেই নেই। চীনের নিজস্ব ব্র্যান্ডগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে চাপে পড়েছে পশ্চিমা বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো। গুচি থেকে সেন্ট লরেন্টের মতো ব্র্যান্ডের বিক্রি এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ৩১ বছর বয়সী সাংহাইয়ের বাসিন্দা লুসি লু কাজ করেন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের বিপণনে। তিনি জানান, অনেক গ্রাহকের মধ্যে তিনিও একজন যিনি তার ক্রয়প্রবণতার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। লুসি বলেন, আগে যদি আমি একটি হ্যান্ডব্যাগ পছন্দ করতাম তবে এটিকে দ্বিতীয় কোনো চিন্তা ছাড়াই কিনতাম। তবে এখন তা কেনার আগে আমার অন্য কিছুর প্রয়োজন রয়েছে কিনা তা আমি দুবার যাচাই করে নিই। চীনা ক্রেতাদের ক্রয়প্রবণতা পরিবর্তন মূলত দামি খাদ্য ও পানীয় বিক্রেতাদের জন্য চমৎকার একটি সুযোগ হয়ে এসেছে। সাংহাইভিত্তিক আইসক্রিম ব্র্যান্ড ডাল কুওরের প্রতিষ্ঠাতা জেরার্ড লো মেগা সিটিতে তাদের পঞ্চম স্টোর খোলার পরিকল্পনা করেছেন। এ ব্র্যান্ডের আইসক্রিমের একটি স্কুপের দাম প্রায় ৪০ ইউয়ান (৫ ডলার ৬০ সেন্ট)। একজন কিংবা দুজন তরুণের পরিবর্তে পুরো পরিবারের সদস্যরা আইসক্রিমের জন্য দোকানে যাচ্ছেন। এ প্রবণতা আগে খুব একটা দেখা যেত না। তাই জেরার্ড লো মনে করেন, যখন সময় খুব একটা ভালো হয় না লোকেরা তখন অন্য কিছুর মাধ্যমে সেটিকে কাটিয়ে উঠতে চায়। এক্ষেত্রে আইসক্রিমের মতো ‘গিলটি প্লেজার’ সাহায্য করতে পারে। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন