বছরের পর বছর ধরে চলে আসা অস্থিতিশীলতার অবসানে মালয়েশিয়ায় আগামী ১৯ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতিতে জর্জরিত দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার আশা করছে।
দেশটির বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা থাকায় ক্ষমতাসীন দ্য ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) আগামী মাসের নির্বাচনে এগিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশটির বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে উদাসীনতা এবং চলমান বর্ষা মৌসুমের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ার চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার এই সময়ে ভোটারদের সমর্থন ইউএমএনওর পক্ষে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বহুল আলোচিত মালয়েশিয়ার ওয়ানএমডিবি দুর্নীতির কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই দলটির পরাজয় ঘটে। আর দুর্নীতির এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে কারাগারে যেতে হয়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল গনি সালেহ বলেছেন, সংসদীয় প্রার্থীদের আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে দুই সপ্তাহ।
চলতি বছরের এই নির্বাচনে ২ কোটি ১০ লাখ মালয়েশীয় তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। দেশটির সংসদের ২২২ আসনের নিম্নকক্ষের আইনপ্রণেতাদের নির্বাচনে ভোট দেবেন তারা।
যে দল বা জোট সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্থাৎ কমপক্ষে ১১২ আসনে জয় পাবে; তারাই দেশটির পরবর্তী সরকার গঠন করবে।
মালয়েশিয়ার ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব আবারও ইউএমএনওর প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর তিনি দেশটির সংসদ ভেঙে দেন এবং নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বছরের পর বছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অবসান ঘটাবে এই নির্বাচন।
স্বাধীনতার পর ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়া শাসন করেছে ইউএমএনও। কিন্তু এই দলটির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে মালয়েশিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিরোধীদের কাছে হেরে যায় ইউএমএনও।
অভ্যন্তরীণ বিবাদের জেরে বিরোধীদের এই জোট মাত্র ২২ মাসের মধ্যে ভেঙে যায়। এর ফলে মালয় জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ইউএমএনও অন্যান্য দলের সাথে জোট গড়ে ক্ষমতায় আসে। জাতিগত-মালয় সংখ্যাগরিষ্ঠদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় ইউএমএনও।
২০১৮ সালের সর্বশেষ নির্বাচনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় তিনজন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় এসেছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরের ঘটনাপ্রবাহ থেকে সৃষ্ট হতাশা চলতি বছরের নির্বাচনে বিরোধীদলীয় কিছু ভোটারকে দূরে রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা বিরোধীদের আরেকটি জয়ের সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে তুলতে পারে।
জোট ভেঙে যাওয়ার পর বিরোধীদের বিচ্ছিন্ন রেখে আলাদা পথে হেঁটেছেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মাহাথির মোহাম্মদ এবং আনোয়ার ইব্রাহিম। মালয়েশিয়ায় আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সূচি নির্ধারিত ছিল। সূত্র: রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন