কৃষ্ণ সাগর রপ্তানি চুক্তি থেকে রাশিয়া সরে যাওয়ায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। রাশিয়া এই চুক্তি স্থগিত করার পর বিশ্ববাজারে গমের দাম সোমবার একলাফে প্রায় ৬ শতাংশ এবং ভুট্টার দাম ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
গত ১৪ অক্টোবরের পর সোমবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের (সিবিওটি) সবচেয়ে সক্রিয় প্রতি বুশেল (১ বুশেল= ৩৫.২ লিটার) গমের দাম ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এর ফলে প্রতি বুশেল গম ৮ দশমিক ৭৭ ডলারে বিক্রি হচ্ছে; যা গত ১৪ অক্টোবরের সর্বোচ্চ। সোমবার দিনের শুরুতে শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে গমের দাম প্রতি বুশেল সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯৩ ডলারে পৌঁছায়।
এর আগে, গত মার্চে প্রতি বুশেল গমের দাম রেকর্ড ১৩ দশমিক ৬৪ ডলারে পৌঁছেছিল। শিকাগো ট্রেডে প্রতি বুশেল ভুট্টার দাম ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ৬ দশমিক ৯৮ ডলার হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি বুশেল সয়াবিনের দাম শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৪ দশমিক ০৯ ডলারে পৌঁছেছে।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক একজন ব্যবসায়ী বলেছেন, দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেয় তার ওপর পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ভর করছে।
দখলকৃত কৃষ্ণ সাগরের ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে রুশ নৌবহরে ইউক্রেনের বড় ধরনের ড্রোন হামলার পর শনিবার কৃষ্ণ সাগর খাদ্যশস্য চুক্তিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করেছে মস্কো।
কিয়েভ বলেছে, চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার জন্য পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাশিয়া একটি অজুহাত তৈরি করেছে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন বলেছে, খাদ্যকে অস্ত্র বানাচ্ছে রাশিয়া।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক অন্য দু’জন ব্যবসায়ী বলেছেন, চুক্তি থেকে রাশিয়া বেরিয়ে যাওয়ার পর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে সরবরাহের অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার টন গম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইউক্রেনীয় ভুট্টার রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ, তুরস্ক এবং ইউক্রেন বলেছে, শস্য রপ্তানি চুক্তি অনুযায়ী সোমবার অন্তত ১৬টি জাহাজের জন্য একটি ট্রানজিট পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে তারা।
বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান খাদ্য ও জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে ৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৈশ্বিক এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই কিয়েভ এবং মস্কোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আটকা আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে তুরস্কে ওই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এই শস্য চুক্তির আওতায় ইউক্রেনে আটকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক।
চুক্তির পর গত জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত কৃষ্ণ সাগরের ৯৫ লাখ টনের বেশি ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী পণ্য, বার্লি, সরিষা এবং সয়া রপ্তানি করা হয়েছে। সূত্র: রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন