শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

শি জিনপিংয়ের শাসনে চীনের নতুন কূটনৈতিক গতিপথ

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২২, ৬:২০ পিএম

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে অবস্থিত চীনা কনস্যুলেটের ভেতরে হংকংয়ের স্বাধীনতাপন্থি এক বিক্ষোভকারীকে টেনে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা কিছু পোস্টার পোড়াচ্ছিলেন, যাতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের আন্ডারপ্যান্ট ও ক্রাউন পরিহিত একটি ছবিও ছিল। এ সময় ওই বিক্ষোভকারীদের কনস্যুলেটে নিয়ে মারধর করে নাম প্রকাশ না করা কর্মকর্তারা। পরে তাদের বের করে আনা হয়। গত ১৬ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটে। কর্মচারীরা কাছাকাছি এক বিক্ষোভকারীকে টেনেহিঁচড়ে কনস্যুলেটের গেটের ভেতরে নিয়ে যায় এবং তারা তাকে বারবার লাথি মারতে থাকে। পরে ম্যানচেস্টার পুলিশ তাদের আলাদা করে দেয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও চীন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সাম্প্রতিকতম কূটনৈতিক দ্বন্দ্বকে উসকে দিয়েছে, যা আগে ঘটেনি। দূতাবাসের পশ্চাদমুখী, কঠোর এবং অশালীন কাজগুলো শি জিনপিংয়ের অধীনে চীনের নতুন কূটনৈতিক পদ্ধতির সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ। এটি চীনা কূটনীতিকদের ‘উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি’র নতুন গৃহীত পদ্ধতির একটি সম্প্রসারণ বলে মনে হচ্ছে। উল্লেখ্য, চীনের তাৎক্ষণিক পাল্টা জবাব দেওয়ার আক্রমণাত্মক কূটনীতিকেই ‘উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি’ বলা হয়। রূঢ় ভাষা, অশালীন মন্তব্য ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার সবই এখন ঘরোয়া জাতীয়তাবাদের উত্থানকে জানান দিচ্ছে। এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক অঙ্গনে চীনের সক্ষমতা প্রয়োগ করছে এবং এটি এমন এক চীনকে প্রতিনিধিত্ব করে যার দৃঢ় দেশপ্রেমিক নেটিজেনদেরও না বলতে পারে। এটা মনে হয় যে ঘরে-বাইরে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সমান গুরুত্বপূর্ণ। যখন দুটি ভিন্নধর্মী লক্ষ্য থাকে, যেমনটা ম্যানচেস্টারে ঘটেছে, তখন জিনপিংয়ের কূটনৈতিক কেন্দ্র পরবর্তীটির চেয়ে প্রথমটিতে অগ্রাধিকার দেয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) ২০তম জাতীয় কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক মতবাদ দেশটির কূটনৈতিক মান পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওসু ও শেন বেইলি একটি সংবাদ সম্মেলনে শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় চীনের কূটনীতির ‘লড়াকু মনোভাবে’র প্রশংসা করেছেন।

ঝাওসু বলেন, ‘সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা ও সক্ষমতা থাকা চীনা কূটনীতির একটি চমৎকার ঐতিহ্য ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য।’ শি জিনপিংয়ের কূটনৈতিক দর্শনের সফল প্রয়োগের উদাহরণ হিসেবে ম্যানচেস্টারের সাম্প্রতিক ঘটনাকে দেখা হচ্ছে। বিক্ষোভকারী টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন চীনের কনসাল জেনারেল ঝেং জিউয়ান। তার দেওয়া এ সংক্রান্ত সাক্ষাৎকার বুধবার স্কাই নিউজে প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন, ‘সে (বিক্ষোভকারী) আমার জাতি এবং আমার নেতাকে অপমান করেছে। যার কারণে আমাকে এটি করতে হয়েছিল।’ ঝেং যে অবস্থান নিয়েছেন, চীনের অভ্যন্তরে এমন অবস্থার উত্থান হয়েছে। এখন দেশের বাইরেও এমন উগ্র জাতীয়তাবাদী অবস্থান দেখা যাচ্ছে। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসিকে আগে উগ্র কৌশল ধরা হত। এখন চীনা কূটনীতিকরা প্রায়ই তা গ্রহণ করছেন। চীনে এটির অনুরূপ নাম ‘র্যাম্ব’, যা ফিল্ম ফ্রাঞ্চাইজিকে ইঙ্গিত করে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি আক্রমণাত্মক ও উগ্র দেশপ্রেমিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্দেশ করে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানকে এই কূটনৈতিক পদ্ধতির পথপ্রদর্শক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শি জিনপিংয়ের কূটনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তার প্রমোশন হচ্ছে। তিনি ২০১০ সালে টুইটার ব্যবহার শুরু করেন এবং এখন পর্যন্ত তার ১৩ লাখের বেশি ফলোয়ার রয়েছে। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি কৌশলে ঝাওয়ের কার্যকর প্রচারই চীনের শক্তিশালী আত্মবিশ্বাসী মানসিকতার প্রমাণ। এই ধরনের কূটনীতির জন্য ফলোয়ারও আছে, তবে তারা সবাই চীনের। ঝাওয়ের কর্মজীবন চীনা কূটনীতিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ শিখিয়েছে বলে মনে হয়। আর তা হল- স্থানীয় অনুমোদনের মাধ্যমে সাফল্যের বিচার করুন, সক্ষমতার বাইরে গিয়ে বিচার নয়। ২০২০ সালের অক্টোবরে ফিজিতে দুই চীনা কূটনীতিকের সঙ্গে লড়াইয়ের পর তাইওয়ানের এক কূটনীতিককে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চীনের রাষ্ট্রদূতরা তাইওয়ানের জাতীয় দিবস উদযাপনে আমন্ত্রিত না হওয়ার পরে ওই ঘটনা ঘটে। ঝাও তখনও সহিংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এসব ঘটনায় চীনের বার্তা পরিষ্কার। তা হল-ম্যানচেস্টার, ফিজি বা অন্য সব জায়গায় সমালোচনা মোকাবিলা করুন। শি জিনপিংয়ের অধীনে চীনের কূটনীতির পথপ্রদর্শক নীতিই হল জাতীয়তাবাদ, শান্তি নয়। সূত্র : দ্য ইকোনমিক টাইমস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন