গাড়ির বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই গাজীপুরের শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। একটি বিড়াল দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়। তবে এখনো ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাছা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাদির উজ্জ-জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষক দম্পতি যে প্রাইভেটকারটি ব্যবহার করেছিলেন সম্প্রতি সে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে এসি ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১২ মিনিট পর বিড়ালটি দুর্বল হয়ে নুয়ে পড়তে থাকে। ঠিক ২৫ থেকে ২৬ মিনিট পর বিড়ালটি মারা যায়। স্কুল থেকে রওনা দেওয়ার পর যে স্থান থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার হয় সেই দূরত্বটিও ছিল আনুমানিক একই সময়ের। এ পরীক্ষা থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু বিষাক্ত গ্যাস থেকেই হয়েছে। এখন শুধু ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এসআই আরো বলেন, এখন জব্দ করা আলামতের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
গাছা থানা পুলিশ জানায়, ১৭ আগস্ট গাজীপুরের কামাড়জুরী এলাকার বাসিন্দা গাজীপুর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ কে এম জিয়াউর রহমান তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার নিখোঁজ হন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের খাইলকুর এলাকায় ১৮ আগস্ট ভোরে ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদের মুখ দিয়ে সামান্য লালা বের হওয়া ছাড়া আর কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
দুমাসের বেশি সময় ধরে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, র্যাব-১সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাটি তদন্ত করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা কোনো ক্লু খুঁজে পায়নি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি। ঘটনার একদিন পর জিয়াউরের বড় ভাই স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।
থানা পুলিশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও আলামত সংগ্রহ করেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। কিন্তু কোথাও কোনো ধরনের ক্লু পাওয়া যায়নি। কোনোভাবেই তাদের হত্যা করা হয়েছে এমন কোনো তথ্য আসেনি।
সম্প্রতি গাছা থানায় ইব্রাহীম হোসেন নামের এক নতুন ওসি যোগদান করেন। তিনি সিআইডিতে কর্মরত ছিলেন। যোগ দেওয়ার পর মামলার সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কিছুদিন আগে গাড়িতে একটি বিড়াল রেখে পরীক্ষা করা হয়।
বিড়ালটিকে গাড়িতে রেখে এসি ছেড়ে বন্ধ করে দেওয়া হলে ১০-১২ মিনিট পর নুয়ে পড়ে এবং ২৫ থেকে ২৬ মিনিট পর বিড়ালটি মারা যায়। পরে পুলিশ গাড়ির ও গাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে তাকে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বিআরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরো কয়েকটি সংস্থায় পাঠায়। এছাড়া ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।
গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইব্রাহীম হোসেন বলেন, এটি আমরা এখনই প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেলেই বিষয়টি আমরা আরো নিশ্চিত হতে পারবো।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। যার কারণে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। প্রতিবেদন কবে আসবে সেটিও সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে এসব পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস সময় লাগে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন