পাঁচ দফা দাবিতে লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের লাগাতার ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস ও পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে। লাইটার জাহাজের শ্রমিকদের ওঠা-নামায় ব্যবহৃত পতেঙ্গা চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিল, সাঙ্গু নদীর মুখ খনন করে লাইটার জাহাজের নিরাপদ পোতাশ্রয় করা, পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারসহ ৫ দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে এ লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কর্মরিবতি চলছিল।
কর্মবিরতির ফলে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে পণ্যখালাসও বন্ধ রয়েছে। লাইটারেজ জাহাজের শ্রমিকেরা কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট এবং বহির্নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস-নামানো বন্ধ রেখেছেন। গতকাল দিনভর বিভিন্ন ঘাটে লাইটারেজ জাহাজগুলোকে অলস বসে থাকতে দেখা যায়। শ্রমিকেরা জাহাজে গল্পগুজবে মশগুল থাকেন। সকালে সদরঘাট এলাকায় কর্মবিরতির সমর্থনে মিছিল সমাবেশ করা হয়।
বিদেশ থেকে আমদানি করা ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন খোলা পণ্য নিয়ে বর্হিনোঙ্গরে আসা মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস হয় লাইটারেজ জাহাজে।
এরপর নৌরুটে বিভিন্ন গন্তব্যে সেসব পণ্য নিয়ে যায় লাইটারেজ জাহাজগুলো। চট্টগ্রাম বন্দর এবং বহির্নোঙর থেকে সারাদেশের নৌরুটে অন্তত এক হাজার লাইটারেজ জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়া করে। এসব জাহাজে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। নদীপথে প্রতি বছর ছয় কোটি টনের বেশি পণ্য পরিবহন হয়।
আকস্মিক লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্য খালাস ও পরিবহনে অচলাবস্থা নেমে আসে। কর্মসূচির বিষয়ে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শেখ মোহাম্মদ ঈছা মিয়া জানান, গতবছর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন চরপাড়া এলাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি ঘাট নির্মাণ করে। শ্রমিকরা সেই ঘাট ব্যবহার করতো। কিন্তু হঠাৎ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়। তারা ঘাট ব্যবহারে দশ টাকা মাশুল নির্ধারণ করে।
এ নিয়ে ইজারাদারের লোকজনের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রায়ই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। গত ৩ নভেম্বর শ্রমিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পতেঙ্গা থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি নেয়। এ অবস্থায় শ্রমিকেরা চরপাড়া ঘাট ত্যাগ করে আনোয়ারায় পারকি সমুদ্র সৈকতসংলগ্ন এলাকা থেকে লাইটারেজ জাহাজে ওঠানামা শুরু করেন।
কিন্তু সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে পারকি থেকে জাহাজে ওঠানামা বন্ধ করে দেন। এরপর শ্রমিকেরা চাইনিজ ঘাট এলাকা থেকেও জাহাজে ওঠানামার চেষ্টা করলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সেখানেও অভিযান পরিচালনা করে। ঈছা মিয়ার অভিযোগ বন্দর কর্তৃপক্ষ-পুলিশ শ্রমিকদের কোন কথাই শুনছে না। ইজারাদারদের মাধ্যমে শ্রমিকদের জিম্মি করে ফেলেছে। শ্রমিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এজন্য বন্দরের চেয়ারম্যান ও পতেঙ্গা থানার ওসি প্রত্যাহার, চরপাড়া ঘাটের ইজারা বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এই ধরনের কর্মসূচি অপ্রত্যাশিত। লাইটারেজ শ্রমিকদের সুবিধার জন্যই বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাট তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু ঘাটটি তো কাউকে না কাউকে পরিচালনা করতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে শ্রমিকদের কাছ থেকে মাত্র ১০ টাকা মাশুল নেওয়ার শর্তে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘাটটি ইজারা দিয়েছে। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি অনভিপ্রেত। শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন