আগের সব আবহাওয়া সম্মেলনের মতো মিসরে সদ্য সমাপ্ত কপ২৭ সম্মেলনেরও রয়েছে কিছু সাফল্য এবং কিছু ব্যর্থতা। বিবিসি অনলাইনের পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদকের বিশ্লেষণে এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। পাঁচটি ধাপে তুলনামূলকভাবে বিষয়টি নিচে তুলে ধরা হলোÑ প্যারিসের পর সবচেয়ে বড় জয়? : ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ সম্পর্কিত তহবিল গড়ে তোলার কথা প্রথমবারের মতো উঠে আসে এবারের কপ সম্মেলনে। এই তহবিল গঠনে ভূমিকা রাখবে বিশ্বের ধনী এবং কার্বন নিঃসরণের জন্য প্রধানত দায়ী রাষ্ট্রগুলো। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ওই তহবিল থেকে সহযোগিতা পাবে। ২০১৫ সালের কপ সম্মেলনে প্যারিস চুক্তির পর থেকে এবারের এ অর্জনকে ধরা হচ্ছে অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে। এই তহবিলের বিষয়ে নানাবিধ অনিশ্চয়তা থাকলেও এর মূল সফলতা অর্থের মাপকাঠিতে বিচার হচ্ছে না। মূলত এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে দেশগুলোর মধ্যে সংহতি এবং বিশ্বাস পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা। নাকি প্যারিসের পর সবচেয়ে বড় পরাজয় : অনেক দেশের জন্য কপ২৭ সম্মেলনে আলোচনার শেষ ঘণ্টাটি ছিল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সামাল দেওয়া প্রশ্নে উল্টোপথে হাঁটা। গত কপ আসরের আলোচনা পরিচালনাকারী অলোক শর্মার বয়ানে এ বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে স্পষ্টভাবেই। তিনি বলেন, ‘২০২৫ সালের আগে নিঃসরণ সর্বোচ্চ সীমায় রাখা, যা বিজ্ঞান আমাদের বলছে জরুরি, তা চুক্তিতে নেই। কয়লা ব্যবহার বন্ধ প্রশ্নে স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনাও নেই এতে।’ নতুন অনুলিপিতে রয়েছে ‘স্বল্প নিঃসরণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির’ প্রসঙ্গ। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ এই ফলক পার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০। অন্যদিকে ২০৩১ সাল নাগাদ এটিকে স্থায়ীভাবে ছাড়িয়ে যাওয়া হতে পারে। কিন্তু কপ২৭-এ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতির কমতি ছিল না ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষ থেকে। চূড়ান্ত ঘোষণায় ঠাঁই না পেলেও প্রতিশ্রুতিগুলো দেখা হচ্ছে ইতিবাচকভাবেই। আসন্ন বছরগুলোতে এই সম্পর্কিত কূটনৈতিক প্রতিশ্রুতি আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে। এবারের কপ সম্মেলনে প্রকাশ্য উপস্থিতি ছিল তেল, কয়লা ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির। কোথাও এই শিল্প খাতের প্রতিনিধি, কোথাও বা রাষ্ট্রের বেশে। তেল ও গ্যাস শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে প্রায় সব জায়গায়। ভারত এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের তোলা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার দ্রুত বন্ধের দাবি শেষ পর্যন্ত টেকেনি। এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশ কপ মঞ্চ ব্যবহার করে নিজ নিজ দেশের নতুন তেল ও গ্যাসের উদ্যোগ প্রচারে আগ্রহী ছিল। এই লড়াই দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় কপ২৮ সম্মেলনেও চোখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবহাওয়া রক্ষায় যে কয়টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে গণতন্ত্র যে অন্যতম, তা এখন অনেকটাই স্পষ্ট। এবারের কপ সম্মেলনে বাড়তি সমাদর পেয়েছেন আবার ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া লুইজ ইগনাসিও লুলা ডা সিলভা। ২০৩০ সাল নাগাদ বন উজাড় শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সম্মেলনস্থলে সবাইকে চমকে দেন উগ্র ডান ও স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিপক্ষকে হারিয়ে জয়ী হওয়া লুলা। অনেকের মতে, গণতন্ত্র যে আবহাওয়া সমস্যার নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টি আবারও প্রকাশ পেয়েছে এর মধ্য দিয়ে। বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন