রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

১ মশার কামড়ে ৪ সপ্তাহ কোমায়, যুবকের ৩০ সার্জারি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২২, ৯:৩৩ পিএম

২৭ বছর বয়সী জার্মান যুবক সেবাস্টিয়ান রটস্কে ২০২১ সালের গ্রীষ্মের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩০ বার অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হয়েছেন। সেই সঙ্গে গত দেড় বছরের বিভিন্ন সয়ে তাকে রক্তদূষণ এবং তার পাশাপাশি যকৃৎ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস অকার্যকর হয়ে যাওয়ার মতো অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। -ডেইলি স্টার (ব্রিটেন)

তার এই দুর্দশার জন্য দায়ী তুচ্ছ একটি মশার কামড়। প্রায় দেড় বছর আগে ‘এশিয়ান টাইগার’ প্রজাতির একটি মশা তাকে কামড়ানোর পর থেকেই ভয়াবহ সব শারীরিক জটিলতার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হচ্ছে রটস্কেকে। এখনও রোগশয্যা থেকে উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা আসেনি তার। ব্রিটেনের দৈনিক ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেবাস্টিয়ান রটস্কে বলেন, আমি কখনও দেশের বাইরে যাইনি। মশা আমাকে কামড়েছিল এখানেই এবং সম্ভবত বাড়ির আশপাশেই কোনো স্থানে।

২০২২ সালের কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি জ্বর অনুভব করলাম, সেই সঙ্গে খাবারে অরুচি এবং শরীর ও বিশেষ করে বাম পায়ে প্রদাহ। জ্বর ছাড়ার কোনো লক্ষণ ছিল না, এবং আমি প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়লাম। বাথরুমে যাওয়ার মতো শক্তিও ছিল না। আমি ভেবেছিলাম, কয়েক দিনের মধ্যেই জ্বর ছেড়ে যাবে, সেই অনুযায়ী ওষুধও খাচ্ছিলাম; কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছিল না, ওষুধ খাওয়ার পর জ্বর ছেড়ে দিত, আবার কিছুক্ষণ পর আসত। কয়েকদিন এ রকম অবস্থা চলার পর বাম পায়ের উরুতে একদিন খুব যন্ত্রণা শুরু হলো। তার দু-একদিনের মধ্যেই সেখানে একটি বিশাল বড় ফোঁড়া দেখতে পেলাম। দেরি না করে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার ফোঁড়া দেখামাত্রই আমাকে বললেন— এশিয়ান টাইগার মসকুইটো প্রজাতির মশার কামড়ে এই অবস্থা হয়েছে। তিনি দ্রুত আমাকে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন।

ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করেন রটস্কে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, রটস্কের পুরো দেহে অত্যন্ত মারাত্মক একটি ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়েছে এবং ইতোমধ্যে সেই ব্যাকটেরিয়া তার বাম পায়ের উরুর প্রায় অর্ধেক মাংসপেশি ভক্ষণ করে ফেলেছে। তারপরই শুরু হয় তার দীর্ঘ চিকিৎসা। বাম পাসহ শরীরের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ওই ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ায় এ পর্যন্ত ৩০ বার সার্জারি করাতে হয়েছে তার। এমনকি বাম উরুর যে অংশে ফোঁড়া হয়েছিল, সেই অংশেও প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নতুন ত্বক লাগাতে হয়েছে। চিকিৎসা চলাকালে প্রায় চার সপ্তাহ কোমায় ছিলেন তিনি।

বর্তমানে অবশ্য রটস্কের অবস্থা আগের থেকে ভালো। ধীরে ধীরে সুস্থও হয়ে উঠছেন; তবে এখনও হাঁটাচলা করার মতো শারীরিক অবস্থায় আসতে পারেননি তিনি। রটস্কে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার নাম ইস্টার্ন ইকুইন এনসিফেলাইটিস (ট্রিপল ই)। এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। এশিয়ান টাইগার প্রজাতির ওই মশার কামড় থেকেই এই রোগের জীবাণু তার দেহে ছড়িয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ট্রিপল ই ছাড়াও জিকা ভাইরাস, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মতো ভয়াবহ প্রাণঘাতী রোগের জীবাণু ছড়ায় এশিয়ান টাইগার মশা। এই মশাটি বুনো মশা নামেও পরিচিত। সাধরণত এটি দিনের বেলায় কামড়ায়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের এক প্রবন্ধে এশিয়ান টাইগার মশাকে বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ মশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন