বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ২৫০ বছর ধরে ঔপনিবেশিক দাসপ্রথায় কলঙ্কিত ভূমিকার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে নেদারল্যান্ডস। আগামী ১৯ ডিসেম্বর ডাচদের এই ক্ষমাপ্রার্থনা ইস্যু হতে পারে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। তবে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ সুরিনামের মতো সাবেক ডাচ উপনিবেশের অধিকার সংগঠনগুলো নেদারল্যান্ডসের ক্ষমাপ্রার্থনার দিনক্ষণ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, তড়িঘড়ি করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাচ সরকার এবং এ নিয়ে আলোচনাও করা হয়নি। সংগঠনগুলোর দাবি, ২০২৩ সালের ১ জুলাই ক্ষমা চাক ডাচ সরকার। কারণ ওইদিন সাবেক উপনিবেশগুলোতে নেদারল্যান্ডসের দাসত্ব বিলুপ্ত হওয়ার ১৫০ বছর পূর্ণ হবে। তবে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেছেন, আগামী ১৯ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ আসবে। সুরিনামের ন্যাশনাল মেমোরেশন অব সেøভারি রিমেমব্রেন্স কমিটির চেয়ারম্যান জোহান রুজার বলেছেন, নেদারল্যান্ডসের ‘পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির’ কারণে রুটে সম্ভবত এই তারিখেই স্থির থাকবেন। কারণ ডানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমা চাওয়ার বিরুদ্ধে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, দাসপ্রথায় নেদারল্যান্ডসের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতার প্রচারে ২০ কোটি ইউরো তহবিল ঘোষণা এবং একটি দাসত্ব জাদুঘর খোলার জন্য আরও ২ কোটি ৭০ লাখ ইউরো বরাদ্দের পরিকল্পনা করছে ডাচ সরকার। দাসপ্রথায় নেদারল্যান্ডসের সম্পৃক্ততার শুরু ১৭শ শতকে। তাদের আগেই স্পেন-পর্তুগালের মতো সাবেক ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো ট্রান্সআটলান্টিক ক্রীতদাস বাণিজ্য চালাচ্ছিল। ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (ডব্লিউআইসি) মাধ্যমে নেদারল্যান্ডস দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের বৃহৎ অংশে উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে এবং সেখানকার চিনি, তুলা, কফির বাগানগুলোতে কাজ করানোর জন্য আফ্রিকা থেকে ক্রীতদাস কিনে নিতে থাকে। লেইডেন ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা অনুসারে, ১৬১২ থেকে ১৮৭২ সালের মধ্যে ডাচরা গোল্ড কোস্ট (বর্তমান ঘানা) বরাবর প্রায় ১০টি দুর্গ নিয়ন্ত্রণ করতো, যেখান থেকে দাসদের আটলান্টিক পাড়ি দিতে পাঠানো হতো। ওই সময় ডাচদের হাতে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ আফ্রিকান নির্যাতিত হয়েছিল। ১৮শ শতকে বর্তমান সুরিনাম এবং গায়ানাও ডাচদের ক্রীতদাস কেনার অন্যতম বড় বাজার হয়ে ওঠে। এমনকি এশিয়ার লোকদেরও শোষণ করেছিল নেদারল্যান্ডস। ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (ভিওসি) মাধ্যমে ১৭শ শতক থেকেই এশীয়দের দাস বানানো শুরু করে তারা। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এশিয়ান স্টাডিজের ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভিওসি প্রধানত আরাকানের (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) লোকদের দাস বানিয়ে তৎকালীন বাটাভিয়াতে পাঠাতো। বাটাভিয়া ছিল ভিওসি’র প্রধান ঘাঁটি, যা আজকের ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা বলে পরিচিত। ১৮৬৩ সালে নেদারল্যান্ডস দাসপ্রথা বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কিন্তু সুরিনামের মতো কিছু জায়গায় ডাচ দাসপ্রথা শেষ হয় আরও ১০ বছর পরে। আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন