নতুন নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতে নিজেদের দখলে থাকা পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া অ্যাসেম্বলি আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভেঙে দেবেন বলে ঘোষণা করেছেন পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ এলাহি এবং খাইবার পাখতুনখওয়ার মুখ্যমন্ত্রী মাহমুদ খানকে পাশে নিয়ে গতকাল শনিবার দেয়া এক ভিডিও ভাষণে ইমরান খান এ ঘোষণা দেন।
ইমরান তার দলের সাথে সহযোগিতার জন্য দুই প্রাদেশিক প্রধানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, তিনি এ পদক্ষেপের বিষয়ে পিটিআই আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করেছেন। তিনি যোগ করেছেন যে, সংবিধান বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের বেশি নির্বাচনকে বিলম্বিত করার অনুমতি দেয় না।
বক্তৃতার শুরুতে ইমরান বলেন, দেশে নতুন ও সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার, কারণ আমরা আশঙ্কা করছি দেশ ডুবে যাচ্ছে। ইমরান দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তার ভাষণ শুরু করেন এবং তার সরকারের কর্মক্ষমতার সাথে এর তুলনা করেন। তিনি দেশে চলমান ব্রেন ড্রেন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষ ও পেশাজীবীরা দলে দলে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন।
এ বছরের শুরুতে একটি অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে তার সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ আমার প্রশ্ন হল, এ শাসন পরিবর্তনের জন্য কে দায়ী ছিল’? ইমরান বলেন, বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে এবং দেশে বিদেশি আস্থা কমে গেছে, যার ফলে বিনিয়োগ সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।
‘ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। এটি সমাধানের একটিই উপায় ছিল যা আমরা করেছি: দেশের সম্পদ বৃদ্ধি করা। তাদের (সরকার) কোনো পরিকল্পনা নেই’।
ইমরান বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান এবং সরকার হেরে যাওয়ার শঙ্কায় নতুন নির্বাচনকে ‘ভয়’ করেছে।
তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, সরকার ২০২৩ সালের অক্টোবরেও সাধারণ নির্বাচন নাও করতে পারে। পিটিআই চেয়ারম্যান আবারও প্রশ্ন তুলেছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আসলে কে দায়ী। ‘শুধু একজন ব্যক্তি দায়ী: জেনারেল (আর) [কামার জাভেদ] বাজওয়া। আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলিনি, কারণ তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন’ -যোগ করেন ইমরান।
‘আমরা চাই আমাদের সেনাবাহিনী শক্তিশালী হোক তাই আমরা চুপচাপ থাকলাম এবং কিভাবে ষড়যন্ত্র হল তা দেখতে থাকলাম’। তিনি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান ‘আমাদের (পিটিআই সরকার) অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন’।
‘আমার পরবর্তী প্রশ্ন হল যে, যখন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল এবং তারা জানতে পেরেছিল যে, জনসাধারণ আমাদের সাথে দাঁড়াতে এসেছে এবং এ চোরদের প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে, তখন আপনি যে ভুল করেছেন তা স্বীকার করার পরিবর্তে, [পরিবর্তন] ধরনের তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে অবিচার করেছে, আমি তা আগে কখনো দেখিনি’ -বলেন ইমরান।
পিটিআই প্রধান পার্টির সিনেটর আজম স্বাতী এবং যারা পিটিআইকে সমর্থন করেন তাদের সাথে আচরণের কথা উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ করেছেন যে, সাবেক সেনাপ্রধান এর পেছনে ছিলেন এবং সরকারে নেতাদের ‘এনআরও-২’ দেওয়ার জন্যও দায়ী।
‘আমাকে জেনারেল বাজওয়া এক পর্যায়ে বলেছিল যে, ‘আমাদের কাছে আপনার লোকদের দুর্নীতি সম্পর্কে ফাইল রয়েছে এবং তাদের ভিডিও তৈরি করা হয়েছে’। আমি তাকে বললাম, ‘এটা কি আমাদের এজেন্সিগুলোর কাজ যে, তারা মানুষের ওপর ভিডিও এবং ফাইল তৈরি করে? এ জাতি আত্মত্যাগের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের সংস্থাগুলোকে টিকিয়ে রাখে’।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার নিজের অডিও ফাঁসের কথাও উল্লেখ করেছেন, বলেছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং ‘আমার নিজের ফোন ট্যাপ করা হয়েছিল ... কেউ জিজ্ঞাসা করছে না যে, এটি অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের লঙ্ঘন। এটা কোথায় ঘটে? আমি যদি আমার প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলি তাহলে সেটা ফাঁস হয়ে গেছে’।
ইমরান দাবি করেছেন যে, একটি জনমত জরিপ অনুসারে, ‘৭০ শতাংশ’ মানুষ নতুন নির্বাচনের দাবি করছে, পিটিআই তার দ্বিতীয় লং মার্চের মাধ্যমে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।
লিবার্টি চকে পিটিআই সমর্থকদের সমাবেশ :
এদিকে গতকাল ইমরান খানের অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার কথা শুনে হাজার হাজার মানুষ লিবার্টি চকে সমবেত হন। এর আগে দলের নেতা হাম্মাদ আজহার লিবার্টি চক অভিমুখী এক কাফেলার নেতৃত্ব দেন।
ইমরান তার জামান পার্কের বাসভবনে পাঞ্জাব এবং কেপির মুখ্যমন্ত্রীদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষ করার পরে লিবার্টি চকের দিকে যাত্রা শুরু হয়। বৈঠকের পর পারভেজ বলেছিলেন যে, তিনি ইমরানের ‘পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির ম্যান্ডেট তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন’।
পারভেজ, তার ছেলে মুনিস এলাহী ও এমএনএ হুসেইন এলাহী বৈঠকে অংশ নেন। সিএম মাহমুদ, পিটিআই ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি, সিনিয়র নেতা আসাদ উমর, ফাওয়াদ চৌধুরী, পারভেজ খট্টক, শিবলি ফারাজ, আলী আমিন গন্ডাপুর এবং অন্যরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিবরণ সম্পর্কে সিএম সচিবালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়েছে। সূত্র : ডন অনলাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন