বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অংশগ্রহণমূলক না হলে নির্বাচন অর্থহীন

গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সাবেক সিইসি মোহাম্মদ আবু হেনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তবে সে নির্বাচন অর্থহীন। নির্বাচন যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হয়, তাহলে সেটি নির্বাচন নয়। সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। সেই আস্থার ভিত্তিতে সবাইকে নির্বাচনে নিয়ে আসা সম্ভব। এ কাজটা খুবই প্রয়োজন।
দ্য ডেইলি সেন্টারে আয়োজিত সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও আগামী প্রকাশনীর উদ্যোগে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে গতকাল তিনি এ কথা বলেন।

নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করবে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াসও কমিশন গ্রহণ করবে না’-বিভিন্ন সময়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন এমন বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের দেয়া এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ ধরণের বক্তব্য দেয়া ঠিক না। আপনাকে সবাইকে (সকল দল) নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। সবাইকে ডাকতে হবে। আমার দায়িত্ব সুষ্টু নির্বাচন করা। আর সুষ্ঠু নির্বাচন হলো সব দলকে নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি নির্বাচন কমিশনকে দলগুলোর সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগযোগ করা উচিত। আমি নির্বাচনের জন্য মাত্র ২ মাস সময় পেয়েছিলাম। সকল দলের সাথে বসে সর্বসম্মত হয়ে নির্বাচন করেছি। আপনি কোনো দলকে ফেলে দিতে পারেন না। তাদেরকে কাছে নিয়ে আসুন। তিনি আরো বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে- নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে জনবলের প্রয়োজন হবে সেটা প্রেসিডেন্ট দিবে এবং অবশ্য করণীয় কর্তব্য হলো সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশনকে সাহায্য করবে। এটার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশনের অগ্রসর হওয়া উচিত।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আরপিওতে কিছু গ্রে এরিয়া আছে। যেগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার। হলফনামা যাচাই করা আরেকটি বড় সমস্যা। আমরা কমিশনে থাকতেও এ সমস্যায় পড়েছিলাম। সমস্যা উৎরাতে প্রার্থীর দেয়া তথ্যগুলো আমরা এনবিআরে পাঠাতাম, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, সেটি হল তথ্য দেখে তো ভোট হয় না। ভোট কিভাবে হয় আপনারা জানেন। তা আমি রিপিট করতে চাই না।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে রাতের ভোট প্রসঙ্গে সাবেক সিইসি বলেছিলেন বিষয়টি আদালতে চলে গিয়েছিল। এরপর আমরা অভিযোগ পেয়েছি যে রাতে ভোট হয়েছে। তখন আমাদের করার কিছু ছিল না। এখানে আরপিও সংশোধনটা কি জরুরি? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একাদশ ভোটে কে এম নূরুল হুদা গেজেট করে নাই, কিছু করে নাই। পরের দিন সকালে বিবিসি দেখিয়েছে রাতে ভোট হয়েছে। সে সময়ে তিনি বন্ধ করতে পারতেন যে রাতে ভোট হয়েছে। সেটা তো উনি করেন নাই।

কে এম নূরল হুদা তখন আদালতের বিষয় বলে দাবি করেছেন এমন বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সাখওয়াত হোসেন বলেন, ওনার উত্তর যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে আমি বলবো, ওনার উত্তরটা সঠিক হয় নাই। গেজেট নোটিফেকেশনের আগে ইলেকশন কমিশন ইনকোয়ারি করতে পারেন। টাঙ্গাইলে এক উপ-নির্বাচনে সাবেক সিইসি আবু হেনা গেজেট করেন নাই জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি কিন্তু করেছিল। তিনি যতদিন ছিলেন গেজেট করে নাই।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আরপিওতে সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সাবেক এই কমিশনার বলেন, আরপিও কোথাও এটা লেখা নাই। একবার যদি কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা অনানুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করে দেয় তারপরে ইলেকশন কমিশন সেটাকে বাতিল করতে পারে। আন্ডার সেকশন ১১৯ দ্বারা ইনহারেন্ট পাওয়ার নিয়ে যখন মামলায় চলে যাবে তখন বলা হবে আপনি গেজেট করেন তারপরে দেখা যাবে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেখানে সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ এবং যেখানে জনগণ সে ক্ষমতা হয় সরাসরি না হয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রয়োগ করে। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল অনেকাংশেই নির্ভর করে নজরদারিত্বে কাঠামোর কার্যকারিতার ওপর। আপনারা অনেকেই জানেন, ভোটারদের তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিচারপতি মো. আবদুল মতিন ও বিচারপতি এএফএম আবদুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ২০০৫ সালে একটি যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে হলফনামা আকারে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তাদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আট ধরনের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেন। এই রায়কে ভন্ডুল করার লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্পূর্ণ গোপনে এবং জালিয়তির আশ্রয় নিয়ে আবু সাফা নামে একজন দুবৃত্তের পক্ষে আপিল দায়ের করে। সৌভাগ্যবশত সুজন-এর প্রচেষ্টায় এ অপচেষ্টা রোধ এবং প্রার্থীদের সম্পর্কে ভোটারদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়। শুধু তাই নয়, আনন্দের বিষয় যে ভোটারদের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারের বিষয়টি এখন গণপ্রতিনিধিত্ব আইন, ১৯৭২-এ এবং ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত অন্যান্য সকল স্থানীয় সরকার আইনে বা বিধিমালাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন