দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। ওই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং। অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সবার আগে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সাং সু চিকে আটক করে জেনারেল মিং অংয়ের নেতৃত্বাধীন জান্তাবাহিনী। এরপর তাকে একের পর এক মামলায় অভিযুক্ত করে কারাদণ্ড দিয়ে যাচ্ছে তারা। সর্বশেষ শুক্রবার সু চিকে আরও সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর এ অভ্যুত্থান ঠেকাতে শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন সু চি। সু চির একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির বরাতে ইরাবতী জানিয়েছে, অভ্যুত্থানের আগের রাতে সুচি জেনারেল মিন অং হ্লেইংকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন— তাকে উপরাষ্ট্রপতি অথবা সশস্ত্র বাহিনীর চেয়ারম্যান বানাবেন। কিন্তু জেনারেল মিন অং এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। সু চির ওই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির নাম হলো লা ইয়াং তাও। তিনি সংবাদমাধ্যম ইরবতিকে জানিয়েছেন, ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং আরও পাঁচ বছর দেশ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত হয়। ২০২১ সালের শুরুর দিকে সরকার গঠনে কাজ করছিলেন সু চি। কিন্তু এতে বাধা দেয় সেনাবাহিনী। তারা দাবি করে, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, মূলত সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইং সু চির কাছে রাষ্ট্রপতি পদের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সু চি এটি প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জেনারেল মিন অভ্যুত্থান ঘটান এবং তাকে বন্দি করেন। লা ইয়াং তাও নামে সু চির ওই ঘনিষ্ট ব্যক্তি আরও জানিয়েছেন, সাংবিধানিক বাধার কারণে সু চি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন না। জেনারেল মিন সু চিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন এ বাধা দূর করে তাকে প্রেসিডেন্ট বানাবেন। তবে শর্ত থাকবে, ক্ষমতার প্রথম তিন বছর সু চি প্রেসিডেন্ট থাকবেন। এর পরের দুই বছর তিনি প্রেসিডেন্ট থাকবেন। এসব নিয়ে বনিবনা হয়নি তাদের মধ্যে। এদিকে সেনাবাহিনী রক্তপাতবিহীন অভ্যুত্থান ঘটালেও পরবর্তীতে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো পুরো মিয়ানমারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি সামরিক জান্তা। ফলে নিজ নাগরিকদের ওপরই বিমান হামলা চালিয়েছে তারা। এদিকে, সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গৃহবন্দি থাকা মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে আরও ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সামরিক শাসিত মিয়ানমারের একটি আদালত শুক্রবার সু চির বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করে। এ নিয়ে মোট ৩৩ বছর কারাদণ্ড দেয়া হল। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শুক্রবার সামরিক শাসিত মিয়ানমারের একটি আদালত ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চিকে দুর্নীতির পাঁচটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছরের জন্য কারাদণ্ড দিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারের সামরিক আদালতে সু চিকে অন্তত ২৬ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। আর শুক্রবার তাকে আরও সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। অবশ্য সু চিকে দোষী সাব্যস্ত করা পাঁচটি অভিযোগের প্রত্যেকটিতে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। ইরাবতী, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন