জেরুসালেমে একটি ইহুদি ধর্মশালায় বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও অন্তত তিনজন। গত কয়েক বছরের মধ্যে এ ধরনের বড় হামলা আর হয়নি। পূর্ব জেরুসালেমের নেভে ইয়াকভের কাছে একটি এলাকায় স্থানীয় সময় রাত সোয়া আটটার সময় এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে বর্ণনা করেছে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে হামলাকারীও নিহত হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, হামলাকারী পূর্ব জেরুসালেমের একজন ফিলিস্তিনি। ইসরাইলি পুলিশ কমিশনার কবি শাবতাই ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘গত কয়েক বছরের মধ্যে আমরা যেসব ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছি, এটা তার অন্যতম।’ ইহুদি সাবাথ পালনের অংশ হিসাবে শহরের ইহুদি বসতির একটি সিনাগগে সমবেত হয়েছিলেন ইসরাইলি ইহুদিরা। প্রার্থনা শেষে তারা যখন বেরিয়ে আসছিলেন, তখন বন্দুকধারী গুলি করতে শুরু করে। সেই সময় পুলিশের গুলিতে সেও নিহত হয়।
যে গাড়িতে করে হামলাকারী সেখানে এসেছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে পুলিশ। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনগুলো এ হামলাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, কিন্তু কেউ দায় স্বীকার করেনি। হামলার পর পশ্চিম তীর ও গাযা ভ‚খÐে মিছিল করেছে এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। এ হামলা হলো এমন দিনে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি শাসকদের হাতে ৬০ লাখ ইহুদি হত্যাকাÐের স্মরণে হলোকাস্ট মেমোরিয়াল ডে পালন করা হচ্ছে।
হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনাস্থলে এসে ইহুদি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইলের পথঘাট তিনি আবার নিরাপদ করে তুলবেন, যদিও তিনি এখনো সেরকম কিছু করছেন না বলে ক্ষোভ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দখলকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক অভিযানে দশজন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর থেকেই সেখানে উত্তেজনা চলছে। নিহতদের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিরা রয়েছে।
‘ইসরাইল এবং দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভ‚খÐে বর্তমানে যে সহিংসতা শুরু হয়েছে, তাতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ বলে জানিয়েছেন তার একজন মুখপাত্র। ’এই মুহূর্তে সবার উচিত সবচেয়ে বেশি ধৈর্যের পরিচয় দেয়া,’ বলেছেন মুখপাত্র স্টেফানি ডুয়ারিক। ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পর থেকেই পূর্ব জেরুসালেম দখল করে রেখেছে ইসরাইল। তারা পুরো শহরটিকে নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে, যদিও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এ দাবিতে স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনিরা দাবি করে, তাদের ভবিষ্যৎ দেশের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেম।
ইসরাইলের দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকাকে ‘অধিকৃত’ বলতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র : শুক্রবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে একটি মতবিনিময়ের সময়, বাইডেনের পররাষ্ট্র নীতি দলের মুখপাত্র জেনিন এবং পশ্চিম তীরের অন্যান্য অঞ্চলের ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলের সামরিক দখলের অধীনে বসবাসকারী হিসাবে বর্ণনা করতে অস্বীকার করেছিলেন।
জেনিনে দশজন ফিলিস্তিনিকে হত্যাকারী ইসরাইলি সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলকে বারবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তারা ফিলিস্তিনের এলাকা দখল করেছে কিনা। তবে তিনি প্রতিবারই প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছেন। এদিকে, মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি বিøঙ্কেন ইসরাইলি নেতাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন এবং বাইডেন প্রশাসন ট্রাম্পের আমলে প্রতিফলিতভাবে ইসরাইলপন্থী নীতিগুলো গ্রহণ করছে বলে মনে হচ্ছে। জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং গোলান মালভ‚মিতে ইসরাইলের অধিভুক্ত এলাকা বলে দেয়া স্বীকৃতি বাতিল না করার পাশাপাশি, বাইডেন এখন ট্রাম্পের দখলদারিত্বের স্বীকৃতির অনুকরণ করছেন (যেমন ট্রাম্পের ঘোষণায় যে, বসতিগুলি অবৈধ নয়)।
বাইডেন ইসরাইলের দখল নিয়ে মিশ্র সংকেত পাঠিয়েছেন। তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন ২০২১ সালে সিনেটের শুনানিতে, ইসরাইলি দখল বা বসতি স্থাপনের কোনও উল্লেখ এড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের দীর্ঘ সমর্থনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, তিনি আরব রাজতন্ত্রের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ট্রাম্পের নীতির ‘অগ্রগতি’ চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু বাইডেন দখলদারিত্বের বিরোধিতাকারী জাতিসংঘের প্রস্তাবগুলোকে সমর্থন করেছেন এবং গত অক্টোবরে স্টেট ডিপার্টমেন্টের নেড প্রাইস সাক্ষাতকারে স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলগুলিকে সামরিক দখলের অধীন বলে বিবেচনা করে। সূত্র : আল-জাজিরা, মন্ডোওয়েইস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন