তুরস্কের আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশটির পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের জেরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান। নির্বাচনের আগে এরদোগান-বিরোধী জনমত তৈরির লক্ষ্যে ওই প্রতিবেদনে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তুরস্কের সংবাদ ইয়েনি শাফাক জানিয়েছে, শনিবার দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় দেনিজলি প্রদেশে এক কর্মসূচিতে এরদোগান বলেন, যেসব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিজেদের দেশের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো খোঁজ-খবর রাখে না, তারা আবার তুরস্কের নির্বাচন প্রতিদিন ফলো করে।’ তুর্কি নেতা বলেন, ‘তারা তাদের নিজেদের বিষয় ফলো না করে নিম্নমানের ও বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দিয়ে জনগণকে গাইড করার চেষ্টা করছে।’ এরদোগান আরও বলেন, ‘আমাদের ভাইয়েরা কেন এগুলো করছে, কেন আমাদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলছে এবং কেন আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে অনধিকার চর্চা করছে, সে ব্যাপারে আমরা অবশ্যই সতর্ক আছি।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক দ্য ইকোনোমিস্ট একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যেখানে তুরস্কের আসন্ন নির্বাচনের ব্যাপারে বহির্বিশ্বকে নজর রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। এরপরই তুর্কি প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করলেন। ইকোনোমিস্টের ওই আর্টিকেলে আরও দাবি করা হয়, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্ক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এরপর তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাদের আচ্ছা করে ধোলাই করেন। বলেন, ‘ব্রিটিশ ম্যাগাজিন তুরস্কের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’ এর আগে এরদোগান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৪ মে একটি উপযুক্ত সময়। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুরস্কের ক্ষমতায় বসেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এরপর ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুনর্নির্বাচিত হন তিনি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে এরদোগান বলেন, ১৪ মে’র নির্বাচন হবে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। অপর এক খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র জন্যে তুরস্ক পাল্টা ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। তুরস্কের জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিসমূহ ভ্রমণ সতর্কতা জারি করায় আঙ্কারা প্রতিশোধমূলকভাবে শনিবার একই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বৃহৎ দেশসমূহ তাদের নাগরিককে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র ও গণজমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো প্রতিরক্ষা জোটে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যোগ দেয়ার বিষয়ে তুরস্কের বিরোধিতা নিয়ে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এ ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে। সম্প্রতি স্টকহোম ও কোপেনহেগেনে তুরস্ক দূতাবাসের সামনে কট্টর ডানপন্থীদের পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় আঙ্কারা। তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম ভ্রমণ সতর্ক বার্তায় ইউরোপের বিপদজনক মাত্রার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণার কথা বলা হয়েছে। পৃথক এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বর্ণবাদ ও সম্প্রতি বিদেশীদের ওপর মৌখিক ও শারিরীক হামলার ঘটনারও উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেনে রুশ হামলার কারণে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন দীর্ঘদিনের সামরিক নিরপেক্ষ অবস্থান ছেড়ে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার আবেদন করে। কিন্তু ন্যাটোতে যোগ দিতে ৩০ সদস্যের সকলের অনুমোদন লাগে। সেখানে তুরস্ক ও হাঙ্গেরি একমাত্র সদস্য যারা পার্লামেন্টে ভোটের মাধ্যমে এ দুটি আবেদন অনুমোদন করেনি। তবে আশা কার হচ্ছে যে হাঙ্গেরি আগামী মাসে অনুমোদন দেবে। এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়েব এরদোগান দেশটির আগামী ১৪ মে’র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী ভিত্তিকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন। ইয়েনি শাফাক, আনাদোলু, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন