মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বিশ্ব বাণিজ্যে আসছে ৫টি বিকল্প মুদ্রা ব্যবস্থা

ডলারের আধিপত্য হুমকির সম্মুখীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

২০২২ সালের প্রথম নয় মাসে মার্কিন ডলারের দাম ১৭শতাংশ বেড়েছে, কিন্তু তারপর থেকে মুদ্রাস্ফীতি দ্রুত হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে মার্কিন স্থিতি শীঘ্রই তার মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করে দিতে পারে, এমন সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে তার জৌলুস কিছুটা হারিয়েছে। তবে, বৈশ্বিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের প্রবাহে ডলারের আধিপত্য বর্তমানে অনেকগুলি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, কারণ অনেক দেশ বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বিশ্বজুড়ে ডলারের রাজত্বের অবসান ঘাটনোর লক্ষ্যে তারা পাঁচটি মুদ্রা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চীন ও রাশিয়া থেকে ভারত এবং ব্রাজিল পর্যন্ত দেশগুলি স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার থেকে শুরু করে স্বর্ণ-সমর্থিত স্টেবলকয়েন এবং একটি নতুন ব্রিক্স স্থিতি মুদ্রার পরিকল্পনা সহ ডলার-বিকল্প এককগুলিতে আরও বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য চাপ দিচ্ছে।
ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা সম্প্রতি ঘোষণা করেছে যে, তারা যৌথভাবে একটি মুদ্রা চালু করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার নাম ‹সুর (দক্ষিণ)›, যা অবশেষে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকার দ্বারা গৃহীত ইউরো-সদৃশ প্রকল্পে পরিণত হতে পারে। দেশগুলির নেতারা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন যে, এটি দক্ষিণ আমেরিকার বাণিজ্য বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, কারণ এটি রূপান্তর ব্যয় এবং বিনিময় হারের অনিশ্চয়তা এড়াবে। ফলে, এটি এই অঞ্চলে ডলারের আধিপত্যকে হ্রাস করবে।
এদিকে, রাশিয়া ও ইরান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ডলার মুক্ত বানিজ্যের প্রচেষ্টা আরও বাড়িয়েছে। তাদের লক্ষ্য হল মার্কিণ ডলারের একটি বিকল্প আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করা, যার মাধ্যমে প্রতি বছর তাদের বাণিজ্যের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারে পেূছতে পারে, যেটি থেকে তারা নিষিদ্ধ। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া দুটি দেশই একসঙ্গে কাজ করছে স্বর্ণ দ্বারা সমর্থিত একটি ক্রিপ্টো মুদ্রা ‘স্টেবল কয়েন’ প্রচলন করতে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অর্থপ্রদানের জন্য ডলারকে প্রতিস্থাপন করতে পারে।
ইতিমধ্যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ভারত তাদের তেল বহির্ভ‚ত বাণিজ্যগুলি রুপিতে পরিচালনার চিন্তাভাবনা করেছে। এই পদক্ষেপটি গত বছর স্বাক্ষরিত একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ভিত্তিতে তৈরি হবে, যার লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে তেল বাদে ১০হাজার কোটি বিলিয়ন ডলারে বাণিজ্য বাড়ানো। চীনও তেল চুক্তিতে ডলারকে প্রতিস্থাপনের জন্য ইউয়ান দিয়ে ডলারকে দুর্বল করতে চাইছে। ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের পর রাশিয়ার সাথে তার বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী থানি বিন আহমেদ আল জাইউদির মতে, চীন ডলার বাদ দিয়ে স্থানীয় মুদ্রায় তেল-বহির্ভ‚ত বাণিজ্যগুলি নিষ্পত্তির ধারণা নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে।
গত বছরের শেষের দিকে বেইজিং মস্কোর অপরিশোধিত তেল ব্যাপক ছাড়ে কিনতে শুরু করে এবং ক্রয়গুলি ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে সম্পন্ন করে তথাকথিত পেট্রোইউয়ানের জন্ম দেয়। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তেল চুক্তিগুলি আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে, কারণ চুক্তিগুলি ম‚লত মার্কিন মুদ্রায় ম‚ল্য নির্ধারণ করে এবং এটি ডলার থেকে চীনের মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা ব্যাখ্যা করে। কেপলারের বিশ্লেষক ভিক্টর কাটোনা বলেন, ‘রাশিয়া কার্যকরভাবে একটি এশীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, যা আমার মতে ইউয়ানকে বড় আকারের তেল বাণিজ্যে প্রবর্তন করেছে।’
গত বছর রাশিয়া ও চীন ডলারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে অন্যান্য ব্রিক্স দেশগুলির সাথে একটি নতুন স্থিতি মুদ্রা বিকাশের জন্য আলোচনা শুরু করে। নতুন স্থিতি এককটি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সহ ব্রিক্সের সদস্যদের মুদ্রাগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হবে। এই পদক্ষেপগুলি ১৯৭০ এর দশক থেকে চলে আসা পেট্রোডলার শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত করবে বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে বিশ্বব্যাপী তেল লেনদেন ম‚লত ডলারে নিষ্পত্তি করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুসারে, প্রধান স্থিতি হিসাবে ডলারের রাজত্ব ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে গেছে, কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা তাদের সম্পদে চীনা ইউয়ান, সুইডিশ ক্রোনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ান ঔনের মতো মুদ্রার বৈচিত্র্য এনেছে। সূত্র: বিজনেস ইন্সাইডার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন