বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম জাম্বো জেট বিমান বোয়িং-৭৪৭ এর উৎপাদন। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) এই মডেলের সর্বশেষ বিমানটি সরবরাহ করা হচ্ছে আটলাস এয়ারকে। ষাটের দশকে বিমানযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছিল ‘কুইন অব স্কাইস’ হিসেবে পরিচিত এই বিমান। বোয়িংয়ের বহরে এবার জায়গা করে নেবে আরও নিখুঁত টুইনজেট প্লেন। তবে এর মধ্য দিয়েই বোয়িং-৭৪৭ এর ৫ দশকের বেশি সময় ধরে চলা রাজত্বের পরিসমাপ্তি হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না এখনই। ষাটের দশকে বিশ্বজুড়ে মানুষের বিমান ভ্রমণ প্রবণতা বাড়তে থাকলে প্রয়োজন দেখা দেয় বিশালাকার উড়োজাহাজের। এমন বিমান, যা দেড় দুইশ নয়, একসাথে ৩০০-৪০০ মানুষ নিয়ে ভাসতে পারবে হাওয়ায়। জ্বালানি সংকটের সময় আসনসংখ্যা বাড়িয়ে খরচ কমানোর পথও খুঁজছিল এয়ারলাইন্সগুলো। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্যান অ্যাম এয়ারলাইন্সের প্রতিষ্ঠাতা এমন ঢাউস বিমান তৈরির চ্যালেঞ্জ দিলে, তা লুফে নেন বোয়িং প্রেসিডেন্ট। কিংবদন্তিতুল্য এভিয়েশন ইঞ্জিনিয়ার জো সাটারের নেতৃত্বে মাত্র ২৮ মাসেই প্রস্তুত হয় প্রযুক্তির বিস্ময় বোয়িং-৭৪৭। ১৯৬৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো সেটি আকাশে ওড়ে। দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন আর বিশাল বপুর কারণে শুরুতেই নজর কাড়ে এই জাম্বো জেট বিমান। ধারণক্ষমতায় অন্যান্য বিমানের দ্বিগুণেরও বেশি এটি। ৪০০ যাত্রী বহনে সক্ষম এই উড়োজাহাজ বিমানভ্রমণের অভিজ্ঞতাই বদলে দেয়। সেই সাথে বদলে যায় ব্যস্ত সব বিমানবন্দর আর তার ব্যবস্থাপনা। ১৯৭০ সালের ২২ জানুয়ারি শুরু হয় সেভেন ফোর সেভেনের বাণিজ্যিক যাত্রা। ৫ দশকে বিপুল সাফল্য এনে দিলেও শুরুর দিকে এই জাম্বো জেটের কারণে দেউলিয়া হতে বসেছিল বোয়িং। এর পেছনে গবেষণায় বেরিয়ে গেছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। ইঞ্জিনের গোলোযোগও ভুগিয়েছে অনেক। আশির দশকের শেষভাগে নতুন ইঞ্জিন ও হালকা উপাদানের ব্যবহারের পর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন। বিশ্বের শান্তি কিংবা সংঘাত, সবখানেই ছিল বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন দাপুটে উপস্থিতি। স্নায়ুযুদ্ধের যুগে সম্ভাব্য পারমাণবিক আঘাত সামাল দিতে নিউক্লিয়ার কমান্ড পোস্ট বা ডুম’সডে প্লেন হিসেবে একে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানবহরে রয়েছে সেভেন ফোর সেভেন। আবার শান্তির বার্তা নিয়ে ভ্যাটিকানের পোপকেও বহন করে নিয়ে গেছে এই জাম্বো জেট। বোয়িং সেভেন ফোর সেভেনের ৫ যুগের যাত্রার যবনিকাপাত ঘটতে চলেছে। মঙ্গলবার এর শেষ বাণিজ্যিক বিমানটি সরবরাহ করা হচ্ছে আটলাস এয়ারকে। এরপর আর সেভেন ফোর সেভেন নয়, এর উত্তরসূরী ডুয়াল ইঞ্জিন জেট-৭৭৭ এক্স উৎপাদনে হাত দেবে বোয়িং। নতুন সেই মডেল বাজারে আসতে আরও অন্তত দুই বছর সময় লাগবেই। উৎপাদন থেমে গেলেও বাজারে এখন সচল রয়েছে প্রায় সাড়ে চারশ বোয়িং সেভেন ফোর সেভেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় আরও বেশ কিছু বছর আকাশ দাপট দেখাবে আকাশের রানি। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন