ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্কের হাতায়া প্রদেশে ধসে পড়া একটি পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসাবশেষ থেকে ৩ ভাইকে জীবিত অবস্থায় বের করে এনেছে উদ্ধারকারীরা। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম টিআরটি শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের ১২০ ঘণ্টার পর তাদের বের করে আনতে ৯ ঘণ্টা ধরে অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধারকারী দলটি। ১১৭তম ঘণ্টায় প্রথমে এক ভাইকে বের করে আনা হয়। পরে ১১৯তম ঘণ্টায় দ্বিতীয়জনকে এবং পরে তৃতীয়জনকে উদ্ধার করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি তুর্কি কর্তৃপক্ষ। পাঁচ দিনে দুই দেশের মৃত্যু ছাড়ালো ২৩ হাজার ৮০০। শনিবার সিরিয়া ও তুরস্কের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সিএনএন এ খবর জানায়। এছাড়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক-সিরিয়ায় সহায়তা হিসেবে ১.৭৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭০০ জনে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড মালপাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা তাৎক্ষণিক সহায়তা দিচ্ছি। এটি দেশের পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠনের জন্য অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলা চিহ্নিত করবে। তুরস্কে বিদ্যমান দু’টি প্রকল্প থেকে কন্টিনজেন্ট ইমার্জেন্সি রেসপন্স কম্পোনেন্টের মাধ্যমে ৭৮০ মিলিয়নের তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মৌলিক অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণের জন্য সহায়তার এই অর্থ ব্যবহার করা হবে। অপর এক খবরে বলা হয়, গত কয়েক দশকের মধ্যে ভয়াবহতম ভূমিকম্পের জেরে তুরস্কে প্রতিদিনই বাড়ছে অভিভাবকহীন শিশুদের সংখ্যা। দেশটির পরিবার ও সামাজিক পরিষেবা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সিএনএনকে জানিয়েছে এ তথ্য। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ২৬৩ জন শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মাতা-পিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নিহত হয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই ২৬৩ জন শিশুর মধ্যে আহত ১৬২ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, বাকি ১০১ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সেফ হোমে রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে শিশুকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পাওয়া যাচ্ছে মৃত অবস্থায়; ব্যাপারটি খুবই হৃদয়বিদারক।’ এর বাইরে গত প্রায় ৫ দিনে মোট ১৮ জন শিশুকে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও তার প্রতিবেশী দেশ সিরিয়া। ওই ভূমিকম্পের ১৫ মিনিট পর ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরও একটি বড় ভূমিকম্প এবং পরে আরও অনেকগুলো আফটারশক হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল। ভূমিকম্পে ইতোমধ্যে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া দুই দেশে আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন