বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩০ হাজার

শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

লাশ, লাশ আর লাশ। ধ্বংসাবশেষ যত সরানো হচ্ছে ততই মিলছে পাহাড়। ভূমিকম্পের পর পাঁচ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে তুরস্ক আর সিরিয়ায় লাশের পাহাড় জমছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত দুই দেশে প্রাণহানির সংখ্যা ২৯ হাজারের গন্ডি ছাড়িয়ে ৩০ হাজার ছুঁইছুঁই করছে। তার মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গিয়েছেন ২৪ হাজার ৬১৭ জন। আর সিরিয়ায় ৫ হাজার ১৮৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যেভাবে ধ্বংসস্তুপের নিচ থেকে লাশের পর লাশ উদ্ধার হচ্ছে তাতে প্রাণহানির সংখ্যা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা ভেবেই উঠতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা।

গত সোমবার ভোরে শতাব্দীর ভয়াবহ ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল তুরস্ক আর সিরিয়া সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রকৃতির অভিশাপে নিমিষেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে একাধিক শহর, জনবসতি। প্রায় লক্ষাধিক উদ্ধারকারী গত ছয়দিন ধরে সেই ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে উদ্ধার করেছেন অসহায়ভাবে মৃত্যুর দেশে পাড়ি জমানো স্থানীয় বাসিন্দাদের মৃতদেহ। ইতিমধ্যেই দীর্ঘদিন ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে থাকায় মৃতদেহ থেকে বিকট দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করেছে। ছয়দিনের মাথাতেও ধ্বংসাবশেষের ভিতর থেকে বহু শিশু, মহিলাকেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ছয়দিনের মাথাতেও ধ্বংসস্তুপের ভিতর থেকে প্রাণের স্পন্দন শোনা যাবে, তা কল্পনাতেও ছিল না উদ্ধারকারীদের।

শনিবার গাজিয়ানটেপ নুরদাগ শহরের এক ধ্বংসস্তুপ থেকে একই পরিবারের পাঁচজনকে যেমন জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে, তেমনই ১৬ শিশুকে উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকাতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এখনও বেশ কয়েক হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের হদিশ না মেলা পর্যন্ত উদ্ধারকার্য চলবে। এদিকে, তুরস্কে ভ‚মিকম্প কবলিত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ব্যাপক লুটপাট ও সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে এসব অঞ্চলে। সহিংসতার মুখে উদ্ধার কাজ স্থগিত করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার উদ্ধারকর্মীরা। তবে দেশটির সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। স্থানীয় সময় শনিবার (১১ ফেব্রæয়ারি) সকালে এরদোগান জানিয়েছিলেন, তার সরকার লুটপাটকারীদের অতি অবশ্যই খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করবে। এবং এ লক্ষ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর মানে হলো, এখন থেকে লুটপাট, অপহরণকারীদের জানা উচিত আইনের হাত তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করবে।

অন্যদিকে, জাতিসংঘের সহায়তা প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস বলেছেন, এ সপ্তাহের শুরুতে সিরিয়া ও তুরস্কে যে ভ‚মিকম্প হয়েছিল তা গত ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ছিল যা এ অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে। ভ‚মিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছে কাহরামানমারাসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, তিনি বেঁচে যাওয়াদের জন্য আরও সাহায্যের আবেদনও করেছিলেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৬ ফেব্রæয়ারি (সোমবার) সংঘটিত ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভ‚মিকম্পটি ওই অঞ্চলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ। ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে সংঘটিত ৭ দশমিক ৪ মাত্রার এক ভ‚মিকম্পে তুরস্কে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে এখনো পর্যন্ত দেশটিতে এককভাবে ২৪ হাজার ৬০০ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তুরস্কে রেকর্ড সংখ্যক মরদেহ উদ্ধারের দিনে পিছিয়ে ছিল না সিরিয়াও। দেশটিতেও মরদেহ উদ্ধারের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটিতে ৫ হাজার ১৮৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দুই দেশে উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ২৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

তুরস্কের হাতায় প্রদেশে কর্মরত আল-জাজিরার সাংবাদিক বের্নার্ড স্মিথ জানিয়েছেন, ভ‚মিকম্পের পর ১৪০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধারকারীরা আশা করছেন, তারা অনেককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারবেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রশাসন পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাতায়ের রাজধানীর বিমানবন্দরটি চালু করবে। সূত্র : দ্য গর্ডিয়ান, আল-জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন