তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশটিতে ৩৬ হাজার ১৮৭ জন নিহত হয়েছে। সিরিয়ার সরকার ও জাতিসংঘ বলছে, সিরিয়ায় ৫,৮০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে।
উদ্ধারকারীরা এখনো জীবিতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তুরস্কের কাহরামানমারাসে ধ্বংসস্তূপের নিচে ২৪৮ ঘন্টা পরে একজন কিশোরকে উদ্ধার করা হয়েছে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন মতে, ভূমিকম্পের ২৪৮ ঘণ্টা পর একটি বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৭ বছর বয়সী আলায়না ওলমেজ নামে ওই কিশোরীকে বের করে আনা হয়। ওই এলাকায় এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। যদিও এখন কাউকে জীবিত খুঁজে পাওয়ার আশা প্রায় ম্লান হয়ে গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জোন’ হল উত্তর-পশ্চিম সিরিয়া, যেখানে মানবিক সহায়তার ধীরগতিতে ক্ষোভ বাড়ছে। জাতিসংঘ আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্যের জন্য সিরিয়ায় বেঁচে থাকা ৫০ লাখ মানুষকে সাহায্য করার জন্য ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের সাহায্যের জন্য আবেদন করছে।
এ ভূমিকম্পে তুরস্কের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলার। যা দেশটির জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান জেপি মরগান। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নিজেদের এ হিসেবের কথা জানায় প্রতিষ্ঠানটি। তবে তুর্কি এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড বিজনেস কনফেডারেশন (তুর্কনফেড) ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলছে। তুরস্কের ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিধ্বংসী ভূমিকম্পে তুরস্কের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৮৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে পারে, যা দেশটির জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ।
তুর্কি ব্যবসায়িক গোষ্ঠিটির অনুমান, ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে তুরস্কের আবাসিক ভবনগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর্থিক হিসাবে যা প্রায় ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে আরও ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের কাহারমানমারাস শহরে ভূমিকম্প আঘাত হানে। যা তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তের বিশাল একটি এলাকাকে কাঁপিয়ে দেয়। শক্তিশালী ৭.৮ ও ৭.৬ মাত্রার দুই ভূমিকম্পের ঘটনা ১১ দিনে গড়িয়েছে। তবে উদ্ধার অভিযান এখনও চলছে। সবশেষ পাওয়া খবরে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়িয়েছে।
ভূমিকম্পের পর ১১তম দিনে এসে কাউকে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এমএসএফ’র দাবি, ধ্বংসস্তূপের নিচে কতোক্ষণ জীবিত থাকা সম্ভব সেটা পুরোপুরি নির্ভর করে শারীরিক কাঠামো, বয়স ও সবলতার ওপর। বাতাস বা পানির সংস্পর্শে থাকলেও দীর্ঘদিন প্রাণরক্ষা করা যায়। তাই জীবিতদের উদ্ধারে এখনও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। সূত্র: আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন