লাহোর হাইকোর্ট (এলএইচসি) ইসলামাবাদে তার বিরুদ্ধে নথিভুক্ত একটি মামলায় পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে প্রতিরক্ষামূলক জামিন দিয়েছে। আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার আবেদন প্রত্যাহার করার পরে ইসিপির বাইরে বিক্ষোভের সাথে সংশ্লিষ্ট দ্বিতীয় আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
গতকাল ঘণ্টাব্যাপী শুনানিকালে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী ও সমর্থক জড়ো হওয়ার কারণে ইমরানের কনভয় আদালতের দিকে যেতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাহোর হাইকোর্ট চত্বরে প্রবেশ করা সত্ত্বেও তিনি অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সিনিয়র পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী, আসাদ উমর, শাহ মাহমুদ কুরেশি এবং আজম স্বাতির সাথে আদালতের কক্ষে যান।
ইমরানের কনভয় যখন জামান পার্ক ছেড়ে চলে যায় এবং লাহোর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে পৌঁছে, তখন গোলাপের পাপড়ি বর্ষণ করা হয়। বিপুল সংখ্যক পিটিআই সমর্থকও কাফেলাটিকে ঘিরে ফেলে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে সেøাগান দেয়। ইমরান আদালতে প্রবেশের আগে, কোরেশি এআরওয়াই নিউজকে বলেন যে, আদালতের বাইরে ‘হাজার হাজার’ লোক উপস্থিত ছিল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রায় ‘অপ্রস্তুত’ ছিল। তিনি বলেন, ইমরানের পক্ষে এমন পরিস্থিতিতে তার গাড়ি থেকে বের হওয়া ‘অসম্ভব’। এদিনের কার্যক্রমের আগে লাহোর হাইকোর্ট-এর প্রধান ফটকে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
গতকাল এর আগে ইমরান ইসলামাবাদের সাংজানি থানায় নথিভুক্ত একটি মামলায় অ্যাডভোকেট আজহার সিদ্দিকের মাধ্যমে প্রতিরক্ষামূলক জামিনের আবেদন করেন, যা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৭ ধারার অধীনে অপরাধও বহন করে। বৃহস্পতিবার লাহোর হাইকোর্ট অনুরূপ একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল বিচার না করার কারণে।
গতকাল দায়ের করা আবেদনে ইমরান তাকে ১৫ দিনের প্রতিরক্ষামূলক জামিন মঞ্জুর করার জন্য আদালতকে অনুরোধ করেন যাতে তিনি প্রাক-গ্রেফতার জামিনের জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে যেতে পারেন।
বিচারপতি আলী বাকার নাজাফির নেতৃত্বাধীন দুই বিচারপতির বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ধার্য ছিল। আদালতের কর্মীরা ইমরানের আইনি দলকে বিচারকের নির্দেশনা সম্পর্কে জানান যে, বিকেল ৫টার মধ্যে ইমরান খানকে আদালতে উপস্থিত হতে তবে। পরে আদালতের কর্মীরা আবেদনটি শোনার জন্য আরো ১০ মিনিট এবং পরে আরো ৫ মিনিট অপেক্ষা করবেন, অন্যথায়, বিচারকরা হাইকোর্ট ছেড়ে চলে যাবেন বলে জানান। ইমরানের আইনি দল আদালতের কর্মীদের পিটিআই প্রধানের উপস্থিতি সম্পর্কে আশ্বস্ত করে।
কিন্তু শুনানি শুরু হলে পিটিআই প্রধান আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না। তার আইনজীবী সিদ্দিক যুক্তি দিয়ে বলেন যে, তার মক্কেল লাহোর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে উপস্থিত রয়েছেন, তবে বর্তমান পরিস্থিতির কারণে তাকে আদালতে উপস্থাপন করা যায়নি।
আদালত ইমরানের শারীরিক উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। আদালত ইমরানকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মধ্যে হাজির করার নির্দেশ দিয়ে শুনানি মুলতবি করেন।
আবার শুনানি শুরু হলে ইমরান অবশেষে আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন। রোস্ট্রাম নিয়ে ইমরান বলেন যে, তার পা কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠেছে, তবে ডাক্তাররা এখনও তাকে দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন যে, তার মেডিকেল চেকআপ ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত রয়েছে। তিনি আরো বলেন যে, তিনি আদালতের বাইরে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন। তিনি যোগ করেন যে, তিনি ‘আদালতকে সম্পূর্ণ সম্মান করেন’। আদালত ইমরানকে ৩ মার্চ পর্যন্ত প্রতিরক্ষামূলক জামিন দিয়েছেন এবং সেইদিন সংশ্লিষ্ট আদালতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) বিলম্বের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি গতকাল আগামী ৯ এপ্রিলকে খাইবার পাখতুনখোয়া এবং পাঞ্জাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করেছেন। তবে এ পদক্ষেপ ক্ষমতাসীন জোটের দলগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইন, ২০১৭ এর ধারা ৫৭ (১) এর অধীনে তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে তারিখ ঘোষণা করেন, তিনি আরো নির্বাচনী সংস্থাকে আইনের ৫৭ (২) ধারা অনুসারে একটি নির্বাচনী কর্মসূচি জারি করতে বলেন। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে পরামর্শের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সিকান্দার সুলতান রাজাকে ২০ ফেব্রুয়ারি একটি জরুরি বৈঠকের জন্য তলব করেছিলেন, কারণ তিনি সাধারণ নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কে ইসিপির ‘মর্মান্তিক দৃষ্টিভঙ্গি’ নিয়ে তাকে নিন্দা করেছিলেন।
তবে, নির্বাচন কমিশন আপাতত প্রেসিডেন্ট আলভির সাথে আলোচনা করা থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিল এই বলে যে, বিষয়টি ইতোমধ্যে বিচারিক বিবেচনাধীন ছিল। সূত্র : ডন অনলাইন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন