দিনের পর দিন একটাই পোশাক। গায়ে বোঁটকা গন্ধ। রাস্তায় পড়ে থাকা টিনের ক্যান কুড়িয়ে বিক্রি করতেন। লোকের ফেলে দেওয়া স্যান্ডউইচ খেয়ে পেট ভরাতেন। এভাবেই কেটেছিল জীবনের ৪০টা বছর। নিজের বলতে তেমন কেউ ছিলেন না। সেই ‘ভবঘুরে’ই যখন হঠাৎ মারা গেলেন, দেখা গেল তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে ১০ লাখ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
নাম কার্ট ডেগেরম্যান। লোকে ডাকত টিন ক্যান-কার্ট বলে। উত্তর সুইডেনের স্কেলেফটিয়ার বাসিন্দা ছিলেন কার্ট। কখনো কারো কোনো ক্ষতি করেননি। দিনভর রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। আর রাস্তা থেকে টিনের ক্যান কুড়িয়ে নিতেন। অনেকেই তাকে পাগল বলতেন।
রাস্তা থেকে টিনের ক্যান কুড়িয়ে নিয়ে দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন কার্ট। তখন কারো মাথাতেও আসেনি, ওই টাকা দিয়ে কী করেন তিনি? কোথায় খরচ করতেন?
প্রায় সারা জীবন একটা নীল জ্যাকেট পরেই কাটিয়েছেন কার্ট। খুব দরকার না পড়লে সে সব কাচতেনও না। রাস্তায় যা কুড়িয়ে পেতেন, তা-ই খেতেন। কখনো কোথাও বিনা খরচে কিছু খাবার মিললে তা নিতে চলে যেতেন কার্ট। অনেক দিন কিছু না খেয়েও কাটিয়ে দিতেন।
কার্টকে রোজ যারা দেখতেন, কোনো দিন ভাবতেই পারেননি কিসে তার ঝোঁক। আসলে শেয়ার কেনাবেচায় দারুণ ঝোক ছিল কার্টের। বাতিল ক্যান বিক্রির টাকা শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন।
শেয়ারে বিনিয়োগের জন্য পরিশ্রমও কম করতেন না কার্ট। কী করতেন? রোজ পত্রিকার ব্যবসা ও শেয়ার সংক্রান্ত সব খবর পড়তেন। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকা খতিয়ে দেখতেন।
খবরের কাগজও কিনে পড়তেন না কার্ট। রোজ স্থানীয় লাইব্রেরি যেতেন। সেখানে গিয়ে খবরের কাগজ পড়তেন। তার এক ভাগ্নে জানিয়েছেন, লাইব্রেরি গিয়ে সুইডেন বিজনেস ডেলি পড়তেন তিনি।
কার্টের চাচাত ভাইয়ের দাবি, কোন শেয়ার কখন কেনা দরকার, কখন বিক্রি করা দরকার, তা খুব ভাল বুঝতেন তিনি।
এক দিন হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কার্ট। তখন তার বয়স ছিল ৬০ বছর। তার আত্মীয়রা জানতে পারেন, সুইস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ৭ লাখ ৩১ হাজার পাউন্ড রয়েছে কার্টের নামে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি।
এখানেই শেষ নয়। সোনার বারও কিনে রেখেছিলেন কার্ট। সেই সোনার বারের মূল্য ২ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাড়িতে খুচরো হিসাবে পড়েছিল ২৭৫ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য প্রায় ৩৬ হাজার টাকা।
মৃত্যুর আগে উইল করেছিলেন কার্ট। নিজের যাবতীয় সম্পত্তি এক চাচাত ভাইয়ের নামে লিখে গিয়েছিলেন। সেই ভাই মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। তার খোঁজখবর নিতেন।
ওই ভাই জানিয়েছিলেন, পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিলেন কার্ট। স্কুলে পড়েছিলেন। তারপর ব্যক্তিগত কারণে স্কুল ছাড়তে বাধ্য হন। কেন? সে কথা জানাতে চাননি কার্টের ভাই।
তবে এক ভাই এত সম্পত্তি পেয়েছেন দেখে কার্টের অন্য চাচাত ভাই মামলা ঠুকে দেন। তিনি দাবি করেন, কার্টের কাকা হিসাবে তার বাবারও কিছু প্রাপ্য রয়েছে। সেই মামলা চলেছিল বেশ কয়েক বছর।
শেষ পর্যন্ত আদালতের বাইরেই রফা করেছিলেন কার্টের দুই চাচাত ভাই। কার্টের সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ নেন তারা। কে কত টাকা পেয়েছিলেন, তা অবশ্য জানাতে চাননি দু’জনের কেউই। তবে জানিয়েছিলেন, যা পেয়েছেন, তাতে দু’জনেই খুশি। সূত্র : আনন্দবাজার
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন