আরবী মাস হিসেবে এই মাসের নাম শাবান। শাবান আরবী শব্দ। যার অর্থ বিসৃত। অর্থাৎ, এই মাসে আল্লাহ তাআ’লার রহমত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ মাস রহমতের মাস। পৃথিবীবাসীর উপর আল্লাহ তায়া’লা নিজ রহমত বিস্তার করে দেন। এ কারণে এ মাসের নাম রাখা হয়েছে শাবান মাস করে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : শাবানের নাম এজন্য শাবান করে রাখা হয়েছে যে, এতে রমাযানের জন্য বেশি বেশি পুণ্য প্রকাশ পায়। আর রমাজানকে এজন্য রমাজান করে নামকরণ করা হয়েছে যে, এটা গুনাহকে জ্বালিয়ে দেয়।
শাবান মাসের ফজিলত অন্যতম।এই মাসের ফজিলত আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’টি হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় : ১. হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এরশাদ করেছেন; রজবের ফজিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন কুরআনের ফজিলত সমস্ত কালাম এর উপর। আর শাবানের ফজিলত সমস্ত মাসের উপর এমন, যেমন আমার ফজিলত সমস্ত নবীদের উপর। আর রমাজানের ফজিলত সমস্ত মাসের উপর এমন,যেমন আল্লাহর ফজিলত সমস্ত মাখলুকের উপর। ২. হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ইসলামের ইরশাদ করেছেন : শাবান আমার মাস আর রমাজান আল্লাহর মাস। (শোয়াবুল ঈমান - ৩৮১৩)
এটা নিয়ম যে, বড় বড় বাদশার নিজস্ব জিনিসের সম্মান অন্যরকম। এভাবে এখানেও, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বড় এবং সম্মানিত মানুষ, তাই যখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শাবান আমার মাস, তাহলে বুঝা গেলো শাবান মাসের ফজিলত কেমন। এভাবে রমাজানের ফজিলত অন্যতম, এজন্যই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেনÑ রমাজান আল্লাহর মাস। তাই, এতো ফজিলত পূর্ণ শাবান মাসে একজন মোমেনের জন্য করণীয় কী? আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম রা., বড়-বড় বুযুর্গরা এমাসে কী করতেন, কীভাবে কাটাতেন। তা আমাদের জন্য জানার বিষয়।
বেশি বেশি রোজা রাখা : এ মাস গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে রোযা রেখে সাওয়াব অর্জন করা যায়। সামনে রমাযান আসায় রমাযানের প্রস্তুতি হিসেবে রোখা রেখেও প্রস্তুতি নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ। হাদিসে এসেছে : হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এতো পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এতবেশি রোজা রাখেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটি এমন একটি মাস যা রজব এবং রমজানের মতো গুরত্বপূর্ণ দু’টি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ এ মাসটি সম্পর্কে তারা বেখবর থাকে, উদাসিন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে যে, রমযান তো আছেই।’ (নাসাঈ) তাই আমাদের উচিত উদাসীন না থেকে এ মাসে বেশী বেশী রোযা রাখা।
বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা : সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং প্রসিদ্ধ ইমামগণ শাবান মাস আসলেই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কুরআন নাজিলের মাসের বরকত লাভে এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করাতেও রয়েছে ফজিলত ও মর্যাদা। রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন। দোয়াটি হলো : ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’। অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান আমাদের নসিব করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ, প্রথম খ-: ২৫৯, শুআবুল ইমান, বায়হাকি,৩: ৩৭৫)।
বেশি বেশি সাদাকাহ (দান-সহযোগিতা) করা : হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম রা. শাবান মাসের চাঁদ দেখলে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতে মশগুল হয়ে পড়তেন। যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়েছে তারা মালের যাকাত আদায় করে দিতেন। যাতে গরিব মুসলমানদের রোযা রাখার ব্যবস্থা হয়ে যায়। বিচারকগণ কয়েদিদেরকে ডেকে, হয় শাস্তির ফয়সালা করে দিতেন, না হয় মুক্তি দিয়ে দিতেন।
বেশি বেশি ইসতেগফার করা : রমযানে রহমত, বরকত, মাগফেরাত ও নাজাতের জন্য শাবান মাস থেকেই সালফে সালেহিনগণ বেশি বেশি ইসতেগফার করতেন। যা মানুষকে রমযানজুড়ে আমলে উদ্যোগী করে তোলে। আর এমাসের আরো ফজিলত পূর্ণ রাত রয়েছে শবেবেরাত,যা সামনে আসতেছে। তাই এই বিশেষ ফজিলতের মাসে প্রত্যেক মুমিনের জন্য করণীয় হলো : উপরোক্ত আমল গুলোকে ফলো করা। এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগানো। আপনি রমযান পাচ্ছেন কিনা তা জানা নেই, তাই আপনি এই মাসকে, আজকের দিনকে আপনার জন্য সুযোগ মনে করে নিন, এবং প্রস্তুতি নিন। আগামীকাল আপনি পাবেন কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। আজ থেকেই আমল শুর করে দিন। আর রমাযানের প্রস্তুতি নিন। আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে সঠিক বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন