স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেছেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র অনিবার্য। এই রাষ্ট্র ও সমাজ এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তবে এজন্য ইসলামী দল ও দরবারগুলোকে মতভেদ ভুলে সকলকেই ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আগামী দিনে এদেশে ইসলামী সামাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে ত্বরিকত ও আধ্যাত্মিকতাভিত্তিক সংগঠন ও দলগুলোই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে। এজন্য এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে, এক দরবার অন্য দরবারের বিরুদ্ধে কথা না বলে, ছোট-খাটো বিষয়ে মতভেদ না করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একসাথে চলতে হবে। কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের আল্লামা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী (মাজিয়া) বলেছেন, যুবকেরা হচ্ছে দেশ ও জাতির প্রাণ। যুব সমাজ যদি তরিক্বত চর্চায় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কোরআন-সুন্নাহ্র আলোকে জীবন গঠন করে তাহলে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীটাই হবে শান্তির আবাসভূমি। গতকাল (শনিবার) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ কমপ্লেক্সে আয়োজিত মুনিরীয়া যুব তবলীগের এশায়াত সম্মেলনে তারা এসব কথা বলেন। পবিত্র জশ্নে জুলুছে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উপলক্ষে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, সংঘাতের কারণে মুসলমানরা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে মুসলমানরা এখন আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। আগামী দিনে এসব রাষ্ট্রে রাষ্ট্র প্রধান নির্বাচনে মুসলমানরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে যে সংঘাত ও যুদ্ধ চলছে তা শেষ হলে আরও একাধিক রাষ্ট্র তৈরি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিরিয়া, লিবিয়া ভেঙে একাধিক রাষ্ট্র হবে। রাশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ১০ থেকে ১২টি অঞ্চল রয়েছে। একারণে মুসলমানরা এখন ভীতির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদেরকে আইএস, জঙ্গী হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। ভারতে ভয়ে মুসলমানদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এতো সংঘাতের পরও দেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে শুধু ত্বরিকতভিত্তিক ইসলাম চর্চার কারণে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি বলেন, ভারতে ভাই-বোনকে, সন্তান-মাকে, শাশুড়িকে ধর্ষণ করছে, হত্যা, নারী নির্যাতন বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বাংলাদেশ এ থেকে নিরাপদ রয়েছে। এই ত্বরিকতভিত্তিক ইসলামী সংগঠনগুলোর কারণে। তবে দেশের যুব সমাজ ও সামাজিক অবক্ষয় ত্বরান্বিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিডিয়ার কারণে এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কারণে বাংলাদেশে মাদক ও ধর্ষণ বাড়ছে। সমাজ ভয়াবহভাবে অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে। র্যাব-পুলিশ কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই অবক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় এবং ডিসিপ্লিন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এজন্য ত্বরিকতভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আলেম ও দরবারগুলোর মধ্যে মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এ এম এম বাহাউদ্দীন বলেন, আলেমদের মধ্যে অনেক সংগঠন ও দল রয়েছে, মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদের কারণে আইএস, জঙ্গী তকমা দেয়া হচ্ছে। আলেম ও দরবারগুলো যদি একে অন্যকে সম্মান ও ঐক্যবদ্ধ হতে পারে তাহলে এদেশে আগামী দিনে প্রকৃত ইসলামী সংগঠনগুলোই নেতৃত্বে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপির ছায়াতলে ইসলামী দলগুলোকে যেতে হবে না, নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বড়দলগুলো ইসলামী দলের ছায়াতলে আসতে বাধ্য হবে।
আল্লামা ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ্ আহমদী বলেন, কালজয়ী আধ্যাত্মিক মনীষী কাগতিয়ার গাউছুল আজম হচ্ছেন বর্তমান যুগে সুন্নিয়তের ধারক ও বাহক। যিনি ইসলামের খেদমতে ও সুন্নাতে মোস্তফার প্রচারের মধ্য দিয়ে মানবতার কল্যাণে বিশ্বব্যাপী আধ্যাত্মিক বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন। পাশাপাশি গুণী এই ব্যক্তিত্ব ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসারে নিজস্ব অর্থায়নে স্থাপন করেছেন দেশ-বিদেশে বহু মসজিদ, মাদ্রাসা ও পাঠাগার। কাগতিয়ার এই আধ্যাত্মিক মনীষীর তরিক্বত ও দরবারে রয়েছে শরীয়তের পাশাপাশি প্রিয়নবীর সকল সুন্নাত ও আদর্শ অনুসরণের বাস্তব প্রতিফলন।
প্রফেসর ড. আবুল মনছুর বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িকতায় ক্ষত-বিক্ষত যুব সমাজ যুব তবলীগে এসে মহান মোর্শেদের উছিলায় রূহানী শক্তির বদৌলতে পরিশুদ্ধ হচ্ছে। তারা পিতা-মাতা, শিক্ষক-মুরুব্বীগণের তাজিমে অভ্যস্ত হচ্ছে। আর যুব সমাজকে সত্যিকার মুসলমান হওয়ার জন্য মুনিরীয়া যুব তবলীগের ছায়াতলে এসে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, বোমাবাজী এবং জঙ্গীবাদ করে, এখতেলাফ, হিংসা-বিদ্বেষের মাধ্যমে শান্তি আসবে না। সকল দরবার ও আলেমদের মতভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমে যুব সমাজকে নষ্ট এবং মাদকাসক্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুসলমানদের নিয়ে যে চক্রান্ত হচ্ছে তা রুখে দিতে হলে ইসলামী অনুশাসনের মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলামী সমাজ এবং আদর্শবান মানুষ তৈরি করতে হবে। বর্তমান সরকারের সময়ে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাদরাসা শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আধুনিক পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক আলহাজ¦ এ.এম.এম. বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আবুল মনছুর, বাংলাদেশ প্রেসিডেন্সী বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মুহাম্মদ হারুন-আর রশিদ, প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব প্রফেসর মুহাম্মদ ফোরকান মিয়া।
এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম হানফি, আল্লামা মুফতি আনোয়ারুল আলম সিদ্দিকী, আল্লামা মোহাম্মদ আশেকুর রহমান, আল্লামা এমদাদুল হক মুনিরী, মাওলানা সেকান্দর আলী, মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান নোমান ও মাওলানা মুহাম্মদ ফোরকান।
সম্মেলনে দেশবরেণ্য ওলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, জাতীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকেই দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান সম্মেলনস্থল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ চত্বরে জমায়েত হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মাগরিবের আগেই সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে এর আশপাশের এলাকা ও সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সম্মেলন শেষে প্রধান অতিথি দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দরবারের প্রতিষ্ঠাতা কাগতিয়ার গাউছুল আজমের দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন