ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী মার্কো রুবিও তার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধর্মবিদ্বেষের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করে বলে সম্প্রতি ট্রাম্প যে মন্তব্য করেছেন এ জন্য রুবিও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ক্ষুব্ধ রুবিও মিয়ামিতে এক টেলিভিশন বিতর্কে বলেন, ইসলামে উগ্রবাদী সমস্যা থাকলেও অনেক মুসলিম এই ভেবে গর্বিত যে সে আমেরিকান। আগামী মঙ্গলবার ফ্লোরিডায় বাঁচা-মরার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হচ্ছেন রুবিও। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টরা বলতে পারেন না যে তারা কী চান। কিন্তু এর একটা পরিণতি আছে। এ সময় দর্শকরা করতালি দিয়ে তাকে উৎসাহিত করেন। বিতর্কে ইসলাম ইস্যুতে ট্রাম্পের সাথে সুস্পষ্ট দূরত্ব বজায় রাখেন রিপাবলিকান দলীয় অন্য প্রার্থীরা। সন্ত্রাসবাদীদের পরিবারকে খুন করা দরকার বলে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন তার সাথে দ্বিমত পোষণ করেন প্রতিদ্বন্দ্বী তিনজনই।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন। পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক বলেছেন ট্রাম্পের এমন বক্তব্য ইসলামি স্টেটসহ অনান্য চরমপন্থা অবলম্বনকারী দলগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে আরো বেশি মাত্রায় কর্মকা- পরিচালনা করতে উৎসাহী করে তুলবে। নিজের বক্তব্যের ব্যাপারে সাফাই দিয়ে ট্রাম্প বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী জাপানি নাগরিকদের একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ করবার আদেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট। এখন তিনি সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে চান।
এদিকে মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য দেবার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। দেশের ভেতরে এবং বাইরে বয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনার ঝড়। এমনকি নিজ দল রিপাবলিকানের সদস্যরাও ছেড়ে কথা বলছেন না তাকে। অবশ্য আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলে প্রার্থিতার দৌড়ে বেশ মজবুত অবস্থানে আছেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি অনেকে এরই মধ্যে তাকে রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবেও দেখতে শুরু করেছেন। আবার অনেকেই নানা মন্তব্য ও কট্টর অবস্থানের জন্য সমালোচিত এই নেতাকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করে মন্তব্য করছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেই যুক্তরাষ্ট্রের সর্বনাশের সূচনা ঘটবে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রথম সমালোচিত হন ট্রাম্প। এরপর গত নভেম্বরে ক্যালিফর্নিয়ায় মুসলিম দম্পতির নির্বিচারে গুলির ঘটনায় মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্য করেন তিনি। এতে তার সমালোচনা নতুন মাত্রা পায়। বিশ্ব নেতারাও জড়িয়ে পড়েন এতে। এসবের সঙ্গে মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী প্রবেশ করছে মন্তব্য করে দেশটির সঙ্গে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের দাবি তুলে তিনি নতুন করে সমালোচিত হন। এবার স্বয়ং পোপ তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। সবকিছু মিলিয়ে প্রার্থিতার দৌড়ে একের পর এক উৎরে গেলেও সমালোচনা তার পিছু ছাড়ছে না।
মেক্সিকোর বর্তমান ও সাবেক তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা তো ট্রাম্পকে এরই মধ্যে হিটলার খেতাব দিয়ে বসেছেন। আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এমনভাবে তার প্রশংসা করেছেন যে, তা প্রশংসা কম নিন্দাই বেশি বলে মনে হয়েছে। তবে ইউরোপের ডানপন্থি রাজনীতিকরা ট্রাম্পের আন্তরিক প্রশংসাতেই মেতেছেন। ওয়াশিংটনের ইতিহাসবিদ জেমস থারবার এ ব্যাপারে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতার দৌড়ে রয়েছেন, এমন কোনো মার্কিন নেতার ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের এমন মন্তব্য নজিরবিহীন। সিরিয়া সংকট, মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব, স্প্যানিসভাষী দেশগুলোর সমালোচনা, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি ও বাণিজ্যনীতি নিয়ে উদ্ভট সব মন্তব্য ও সংস্কার প্রস্তাব করে তিনি এমন সমালোচনা কুড়াছেন। সত্যিকার অর্থেই তিনি জনবিছিন্ন। বিবিসি, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন