শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাকশাল থাকলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠত না : প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান হাসিনা-ট্রুডোর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা (বাকশাল) কার্যকর থাকলে নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকতো না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাকশাল ছিলো সর্বোত্তম পন্থা। আমি বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা (বাকশাল) করে গিয়েছিলেন সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব (নির্বাচনী অস্বচ্ছতা) প্রশ্ন আর উঠতো না।
গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের অধুনালুপ্ত একটি রাজনৈতিক দল যা সচরাচর বাকশাল নামে পরিচিত। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাকশাল নামক এই একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই বৎসর ১৫ আগস্ট একদল বিপদগামী সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর বাকশালের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমলে বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধির ৭ ভাগে উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন, আজ নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা উঠে; আর আমাদের বিরোধী দল বাকশাল বাকশাল করে গালি দেয়, তারা যদি একবার চিন্তা করতেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন একটা বিপ্লবের পর যেকোন দেশে একটা বিবর্তন দেখা দেয়। সেই বিবর্তনের ফলে কিছু মানুষ হঠাৎ ধনী শ্রেণীতে পরিণত হয় আবার ভালো উচ্চবিত্ত মানুষ তাদের ধন-সম্পদ ধরে রাখতে পারে না। কাজেই এ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ধারা সুনিশ্চিত করা এবং ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা একান্তভাবে দরকার। সব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না, আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দিলেন, সে গণতন্ত্রের ফর্মুলা দিলেন বেসিক ডেমোক্রেসি! মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। আর বঙ্গবন্ধু চাইলেন মানুষ যেন তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকে। যে অধিকার তিনি দিয়েছিলেন ৭২ এর সংবিধানে। জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে বঙ্গবন্ধু এমন একটি পদ্ধতি এনেছিলেন যেখানে কেউ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে পারবে না। সরকারের পক্ষ থেকে যে যে প্রার্থী হবে সকলের নাম একটি পোস্টারে দিয়ে প্রচার করা হবে। যে ব্যক্তি যত বেশি জনগণের কাছে যেতে পারবে, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে সেই শুধু নির্বাচিত হবে।
বাকশালের স্বচ্ছতা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এ পদ্ধতিতে দুটি নির্বাচন হয়। সে নির্বাচনের একটি হয়েছিল কিশোরগঞ্জে, সেখানে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাই দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু জনগণ ভোট দিয়েছিল একজন স্কুল মাস্টারকে। আর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় পটুয়াখালীতে।
এ পদ্ধতি চালু নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেছিলেন জানিয়ে আলোচনা সভায় তিনি বলেন, আমি তাকে (বঙ্গবন্ধু) জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি এ পদ্ধতি করলেন কেন? তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমাদের দেশে একটি বিপ্লব হয়েছে। এখানে গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে; একটা বিপ্লবের পর কিছু মানুষের হাতে অর্থ চলে আসে। আমি চেয়েছি নির্বাচন যেন অর্থ এবং লাঠি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। জনগণের কাছে যেন ভোটের অধিকারটা থাকে, প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকারটা থাকে। তা নিশ্চিত করবার জন্যই আমি এই পদ্ধতিটা শুরু করেছি।
বাকশাল বাংলাদেশের জন্য উপযোগি ছিলো দাবি করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য যে কতটা উপযোগী ছিল একসময় বাংলাদেশের মানুষ তা ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বঙ্গবন্ধু যে পদ্ধতিটা করে গিয়েছিলেন সেটা যদি কার্যকর করতে পারতেন তাহলে এসব প্রশ্ন (নির্বাচনে অস্বচ্ছতা) আর আসতো না। সব থেকে জনদরদি যে ব্যক্তিটি জনসেবা যে করে সেই নির্বাচিত হয়ে আসতে পারতেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনে সময় পেয়েছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। সে সময় বাংলাদেশ ছিল দীর্ঘদিন শোষণ-বৈষ্যমের শিকার। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন, তখনও বারবার একের পর এক ষড়যন্ত্র হয়েছে। তখন দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। তার সেই জাতীয় ঐক্যের ডাক আজকের দিনেও প্রাসঙ্গিক।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে স্বাধীন করার চিন্তা করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সে সময় ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন। এভাবেই ধাপে-ধাপে তিনি আন্দোলন-কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন। আর তার ফলাফলই আমরা পেয়েছি মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মনে মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস যুগিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য তিনি সংগ্রাম করেন। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পর যখন তিনি দেখলেন পাকিস্তান নামে যে দেশটি হলো সে দেশটিই বাঙালিদের শোষণ করে। তখন তাদের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার আন্দোলনটা তিনি শুরু করেছিলেন বাংলা ভাষায় কথা বলার আন্দোলনের মাধ্যমে।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক হয়ে কাজ করা
বিশ্ব সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেন। এ সময় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট কথা হয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানান এবং হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন। ওই হামলার সময় ক্রাইস্টচার্চে অবস্থানরত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের কোনো ধরনের ক্ষতি না হওয়ায় ট্রুডো স্বস্তি প্রকাশ করেন বলেও ইহসানুল করিম জানান। তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিশ্ব সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
গত শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদে ঢুকে সেমি অটোমেটিক রাইফেল দিয়ে গুলি চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে বর্ণবাদী সন্ত্রাসী এক অস্ট্রেলীয় যুবক। হামলার ঘটনার সময় আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন নিউজিল্যান্ড সফরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্য। অল্পের জন্য তারা প্রাণে বেঁচে যান।
তবে নিউজিল্যান্ড প্রবাসী অন্তত পাঁচজন বাংলাদেশি ওই ঘটনায় নিহত হয়েছেন বলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ বিশ্বনেতৃবৃন্দ এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Abdullah Al Maruf ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৭ এএম says : 2
ভোটের গণতন্ত্র বলে বাংলাদেশে আর লেশমাত্র নেই। চিরদিনের জন্য ভোটাধিকারকে কবর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণ ভয়ঙ্করতম ফ্যাসিবাদী,একদলীয় ও ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতি চলছে। সংকুচিত সংবাদ মাধ্যম ও মত প্রকাশের অধিকারকে বর্তমানে একধাপ এগিয়ে স্তব্ধ একবারে করে দেওয়া হয়েছে।
Total Reply(0)
Kamruzzaman Tuhin ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১:৫৮ এএম says : 1
এসব ভোট টোট খুব ঝামেলা আর খরচার ব্যাপার। শেখ হাসিনা আর তার দলবল ক্ষমতায় থেকে যাক আজীবন। এতে সমস্যা কী !
Total Reply(0)
Abdul Jahir ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
প্রতিটি জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নুন্যতম ৫০% ভোটার উপস্থিত না হলে, তাকে কোন বিবেচনায় ভোট হিসেবে গ্রহণ করা উচিৎ নয়।
Total Reply(0)
উজ্জ্বল হাসাঈন বিন দেলোয়ার ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 1
সিলেক্ট করে আওয়ামিলীগের সবকয়টাকে জয়ী ঘোষনা করা উচিত বলে মনে করি অথবা লটারি হতে পারে । অযথা জনগনের টাকা নষ্ট করার কোন মানে হয়না ।
Total Reply(0)
Saidur Rahman Sohag ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 2
ইলেকশন কি; আগামী প্রজন্মকে তা বুঝাতে হয়তো তার উপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে হবে।
Total Reply(0)
Delower Hossain Khan ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:১২ এএম says : 2
বললেই তো হয় দেশে আওয়ামী লীগের লোকজন কমে গেছে তাই ভোট কেন্দ্র ফাকা
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৯ মার্চ, ২০১৯, ১০:০৬ এএম says : 0
Eaita kon dhoroner nirbachon?nijera seal mrre vot baksho vorti kore nirbachone joy lab kora.Jor kore votarder vot dite na deowa othoba votarder anggule kali lagaia dia nijera naokai seal mara birodhi parthike polling agentke jor kore polish dia bahir koria deowa iha ki bakshalider ........ protissobi noy?
Total Reply(0)
Habib Rahman ১৯ মার্চ, ২০১৯, ২:২৭ পিএম says : 0
Free and fair election exile from Bangladesh within Shaikh Hasina government...
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২১ মার্চ, ২০১৯, ৬:৪১ এএম says : 0
আমি মনে করি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ইমানদার মোসলমান এবং তিনি সেটা তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্য দিয়ে প্রকাশ করে যাচ্ছেন। কোরার শরীফে আল্লাহ্‌ পাক পিতা মাতাকে ওনার মত সমতা দিয়েছেন তাই আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘আমাকে এবং পিতামাতাকে শ্রদ্ধা কর, মান্য কর, তবে আমার সাথে শরীক করিও না।‘ নেত্রী শেখ হাসিনা আল্লাহ্‌র নিয়ম অনুযায়ী জাতীর জনকের চেয়ার মানে ওনার পিতার চেয়ার পাবার চেষ্টায় নেমেছিলেন আল্লাহ্‌ ওনার সততার জন্যে নেত্রী হাসিনাকে ওনার চেয়ারে বসিয়েছেন। এখন নেত্রী হাসিনা ওনার পিতার যে বদনাম রয়েছে সেটা মুছার জন্যে মাঠে নামবেন এটাই সত্য। আমি অনেক বার বলেছি নেত্রী হাসিনা ওনার পিতারকে সবসময় সামনে রেখেই চলাফেরা করেন তাই তিনি সবদিক থেকে বিজয়ী হয়ে ঘরে ফিরেন। আমার মনে হচ্ছে পাকিরা যেভাবে সেইসময়ের আলোকে দেশের মঙ্গলের জন্যে জাতীর জনকের নেয়া পদ্ধতী ‘বাকশাল’ যে সঠিক ছিল এটা নেত্রী হাসিনা ঠিকই জাতীর কাছে প্রমাণ করে দিবেন। আমি আবারো একই পত্রিকা দৈনিক ইনকিলাব এর মাধ্যমে আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী হাসিনাকে জানাই আমাদের (মুক্তিযোদ্ধাদের) সৃষ্টি লাল সবুজের সালাম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন