প্রশ্ন : পবিত্র সফর মাসের বৈশিষ্ট কি?
উত্তর : সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি মহররমের চাঁদ শেষ করে সফর মাসের চাঁদ উদয় করেছেন। চন্দ্র-সূর্য, রাত-দিনকে কাজে লাগিয়ে সফর মাসকে সমুজ্জ¦ল করেছেন। অসংখ্য দরুদ ও সালাম সেই নবী পাকের উপর যাকে মহান আল্লাহতায়ালা এই সফর মাসেই দীর্ঘ ক্লান্তির পর সুস্থতা দান করে ঈমানদার বান্দাদেরকে শুকরিয়া আদায় ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি হাসিল করার যথেষ্ট সুযোগ করে দিয়েছেন।
সফর আরবী মাসের দ্বিতীয় মাস। ফযিলত ও তাৎপর্যের দিক দিয়ে অন্যান্য মাসের মত এ মাসটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এ মাসের শেষ বুধবার “আখেরী চাহার শোম্বাহ” পালিত হয়। সফর মাস তাৎপর্যপূর্ণ হওয়ার পেছনে আরো কিছু কারণ বিদ্যমান। তন্মধ্যে স্বরণীয় যে, এ মাসে অনেক আউলিয়ায়ে কেরাম ও ইমামগণ যেমন জন্মগ্রহণ করেছেন ঠিক তেমনি ওফাত লাভ করেছেন। যেমন-এক-৪৯ হিজরী সনের ২৮ শে সফর নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রিয় দৌহিত্র হযরত ইমাম হাসান (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) শাহাদাত বরণ করেন। দুই-১০৩৪ হিজরী সনের ২৮ শে সফর তরিকতের উজ্জ¦ল নক্ষত্র মুজাদ্দেদিয়া তরিকার প্রবর্তক হযরত আহমদ ফারুকী সেরহেন্দী মুজাদ্দিদে আলফে সানী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ওফাত লাভ করেন। সেই সাথে আরোও বহু জগৎ বিখ্যাত আউলিয়ায়ে কেরাম ও ইমামগণ এ মাসেই এ জগতে আগমন ও পরলোক গমন করেন। এক কথায় বলতে গেলে এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। এ মাসেই রাসূলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহান আল্লাহ পাকের নির্দেশে মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত করেন যা ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে সফর। পৃথিবীতে বহু দিন বা তারিখ মানব জাতীয় নিকট স্বরণীয় হয়ে আছে। তন্মধ্যে হিজরী ১১ সনের ২৮ সফর বুধবার দিনটিও বৈশিষ্ট্যমÐিত অন্যতম একটি দিন। কারণ এ দিনেই মহান আল্লাহ পাকের হাবীব হুজুর আহমাদ মুজতাবা মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকার পর পূর্ণ সুস্থতা লাভ করেছিলেন। যে দিনটি “আখেরী চাহার শোম্বাহ” নামে প্রসিদ্ধ এবং যুগ যুগ ধরে ঈমানদার বান্দাহগণ এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্ব ও সম্মানের সাথে পালন করে আসছে। ‘আখির’ শব্দটি আরবী। এর অর্থ হলো-শেষ আর ‘চাহার শোম্বাহ’ শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ হলো-বুধবার। আরবী ও ফার্সি শব্দের সংমিশ্রণে “আখেরী চাহার শোম্বাহ” বলতে সফর মাসের শেষ বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। হিজরী ১১ সনে রাসূলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাত লাভ করার পূর্ববর্তী মাসে অর্থাৎ সফর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ১৯ শে সফর আল্লাহর মাহবুব হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিন দিন অস্স্থুতা বাড়তে থাকে। যার ফলে ছাহাবায়ে কেরামগণ (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আলাইহিম আজমাঈন) মহা চিন্তিত হয়ে পড়েন। কিন্তু এ মাসের ২৮ তারিখ বুধবার ভোরবেলা রাসূলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুস্থতা অনুভব করেন। উম্মাহাতুল মু’মিনিন হযরত মা আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) হুজুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুস্থতা দেখে আনন্দিত হয়ে নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) কে খবর দিলে উনি উনার দু পুত্র, জান্নাতের নওজোয়ানদের সরদার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা) দ্বয়কে নিয়ে নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে উপস্থিত হন। বহু দিনের অসুস্থজনিত ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করার জন্য হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা) তাড়াতাড়ি নূর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে গোছল করিয়ে দেন। গোছল শেষে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার নাতি দ্বয়কে নিয়ে একসঙ্গে খাবার গ্রহণ করেন। ইতোমধ্যে বিশিষ্ট সাহাবাগণ সেখানে উপস্থিত হয়ে রাসুলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সুস্থ পেয়ে আবগ আল্পুত হয়ে পড়েন। অতপর নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে নববী শরীফে গমন করেন। দীর্ঘ দিন অসুস্থতার পর সুস্থ দেহে রাসূলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে নববীতে নামাজের জামাতে ইমামতি করেন। এই অপার আনন্দে ছাহাবায়ে কেরামগণ নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী অনেক কিছু আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করেন। উক্ত দিনের শেষ প্রান্তে দয়াল নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তা নিয়েই পরবর্তী মাসের ১২ই রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় মহান আল্লাহর পরম দিদারে মিলিত হন।
উত্তর দিচ্ছেন : সৈয়দ আহমাদ উল্লাহ কামালী
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন