শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মাদকাসক্তি: সামাজিক অবক্ষয় এবং আমাদের করণীয়

আহমদ আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের অভিমত : অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের অভিমত হচ্ছে যে, নেশা অভ্যস্থ মানুষের বোধ শক্তিকেও দূর্বল করে দেয়। নেশার প্রভাব চৈতন্য ফিরে পাবার পরেও ক্রিয়াশীল থাকে। অনেক সময় মানুষ এতে পাগলও হতে পারে। চিকিৎসাবিদদের সবাই একমত যে, শরাব কখনো শরীরের অংশে পরিণত হয় না, শরীরে রক্তও সৃষ্টি হয় না। তবে রক্তের মধ্যে একটা সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় মাত্র। ফলে শক্তির সামান্য আধিক্য অনুভূত হয়। কিন্তু হঠাৎ রক্তের এ উত্তেজনা অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফ্রান্সের জনৈক বিশিষ্ট পন্ডিত হেনরী তার গ্রন্থে লিখেছেন, প্রাচ্যবাসীকে উৎখাত করার জন্য সবচেয়ে মারাত্মক অস্ত্র এবং মুসলমানদেরকে খতম করার জন্য নির্মিত দুধারী তলোয়ার ছিলো এই শরাব। জনৈক ব্রিটিশ আইন বিশেষজ্ঞ ব্যান্টাম লেখেন, ইসলামী শরিয়তের অসংখ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য যে মদ্যপান নিষিদ্ধ, সত্যি শান্তিময় এ এক ধর্ম।
আমাদের করণীয় : বর্তমানে আমাদের দেশে মাদকাসক্তির প্রবণতা যে হারে বেড়ে চলছে তা দমনের জন্য কঠোর কার্যকারী ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো জাতী ধ্বংশলীলার শিকারে পরিণত হতে বাধ্য। কুরআনী তথা ইসলামী নীতি অবলম্বন করে মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে সমাজকে মুক্ত করতে হলে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর পক্ষ হতে পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ।
প্রস্তুতকারকের ভ‚মিকা : প্রথম এ দায়িত্ব বর্তায় যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত, প্রচলন ও সরবরাহের কাজে জড়িত তাদের উপর। তাদেরকে জাতীয় স্বার্থে এ ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। দেশ ও জাতির ক্ষতি সাধন করে নিজেদের আর্থিক ফায়দা লুটার মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার।
পারিবারিক দায়িত্ব : দ্বিতীয়ত পরিবার প্রধানদের উচিৎ, তারা যেনো নিজেদের সন্তান-সন্ততিকে মাদক দ্রব্যের ক্ষতি সম্পর্কে উত্তম প্রশিক্ষণ দান করেন এবং সতর্ক থাকেন যাতে তারা এ কু-অভ্যাসে কোন মতেই লিপ্ত হতে না পারে। সর্বোপরি সন্তানদের যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে মাদকাসক্তির ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
ইমাম ও আলেমদের ভূমিকা : মসজিদের ইমামগণ মাদকদ্রব্যের ক্ষতির দিক সম্পর্কে ওয়াজ-নসিহত করার মাধ্যমেও এ রোগের বিস্তৃতিরোধ করতে পারেন। আলিমগণ জুমার খুতবায় এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে পারেন। এভাবে সেমিনার, আলোচনা সভা করে মাদকাসক্তি রোধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে পারেন।
শিক্ষকদের ভ‚মিকা : এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। শিক্ষকরা সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে, তারা যেনো এ মন্দ কাজে জড়িয়ে না যায়। একজন শিক্ষক জানেন কিভাবে তার ছাত্রকে বিভিন্ন কু-অভ্যাস থেকে দূরে রাখতে হয়। একজন শিক্ষক পারেন আদর্শ এক ছাত্র উপহার দিতে।
সমাজ নেতাদের কর্তব্য :মাদকদ্রব্যের প্রসার রোধকল্পে সমাজ নেতাদের যথেষ্ট ভূমিকা চাই। কোনো পাড়ার সর্দার বা সমাজ নেতা যদি মাদক দ্রব্যের প্রসার রোধের দৃঢ় সংকল্প নিয়ে প্রচেষ্টা চালান, তাহলে সে পাড়া বা সমাজে কখনো মাদকদ্রব্য ব্যবহারের প্রসার ঘটতে পারে না।
আইন প্রণয়নকারী সংস্থার দায়িত্ব : মাদকাসক্তি রোধে আইন প্রণয়ন সংস্থা অনেক বড় দায়িত্ব রাখে। যারা মাদকদ্রব্য প্রস্তুত করে প্রচার করে সবাইকে কঠোর শাস্তি দেয়া। আর এদের বিরুদ্ধে কঠিন বিধান জারী করা। তাহলেই ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত নির্মূল হবে। এভাবেই একটি সুন্দর সমাজ দিতে পারবে আইন সংস্থা।
আন্তর্জাতিক সংস্থার ভ‚মিকা : বিশ্বের সকল দেশ ও জাতিকে এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। মদের উৎপাদন সরবরাহ ও পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের কার্যকারি ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রিয় পাঠক পাঠিকা!
এ পাশ্চাত্য সভ্যতা নামক বিষ বৃক্ষের কাল নাগিনীর করাল গ্রাস থেকে দেশ ও আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে সমাজের সর্বস্তরের বিবেকবান ও কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি যুব সমাজ দুর্নীতি চোরাচালান ও মাদকদ্রব্যের পাচারকারীদের উপর নজর রাখতে হবে। সকল সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি ধর্মীয় মূল্যবোধ সৃষ্টি করে ১৪০০ শত বছর পূর্বের সেই নীতি ও ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই আমাদের সমাজে ফিরে আসবে শান্তি ও শৃঙ্খলা। বিরাজ করবে সুখের ফোয়ারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন