্\ এক \
মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সমগ্র বিশ্বের একমাত্র ¯্রষ্ঠা, নিয়ন্ত্রক, পরিচালক। মানবকুলের নিয়ন্ত্রণ ও সার্বক্ষণিক শান্তির জন্য তিনি দিয়েছেন তাদের কালজয়ী মহান আদর্শ ইসলাম। এ আদর্শের বাস্তব রূপকার হিসেবে পাঠিয়েছেন লক্ষাধিক পয়গাম্বর ও তাঁর বানী সম্বলিত সহ¯্রাধিক কিতাব।
রাসূলুল্লাহ (সা:) তাঁর আখেরী পয়গাম্বর। আল কুরআন তাঁর সর্বশেষ কালাম। তাই কিয়ামত পর্যন্ত সকল দেশের সকল মানুষের একমাত্র গাইড বা পথ নির্দেশনা হচ্ছে আল কুরআন ও রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নাহ।
মুসলিম জাতির দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ ও সফলতার একমাত্র পথ হলো সকল কাজে রাসূলুল্লাহ সাল্লালালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতরে অনুসরণ করা। এ গাইড অনুসরন করেই তৈরী হয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মানব শ্রেণী সাহাবায়ে কেরাম, গঠিত হয়েছে মুসলিম উম্মাহ।
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ
“রাসূলুল্লাহ (সা:) তোমাদের কাছে যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো এবং যা থেকে বারন করেছেন তা থেকে বিরত থাক।” - সূরা: হাশর, আয়াত: ০৭।
“হযরত নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি আমার উম্মতের ফিৎনা ফাসাদের যমানায় আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরবে সে একশত শহীদের সওয়াব পাবে।” মিশকাত।
ইবাদত-বন্দেগী, লেন-দেন, আচার-আচরণ, মুআমালা-মুআশারাত, খানা-পিনা, নিদ্রা-জাগরন ও বিবাহ-শাদী, রোগ-বালাই এক কথায় জীবনের সকল অঙ্গনে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর অনুপম আদর্শের দ্বীপ্ত আলোক বর্তিকা আমাদের সামনে আছে। কেবল মাত্র সুন্নাতের অনুসরনকারীগনই ইহ ও পরকালীন শান্তি ও মুক্তির রাজপথে চলার সৌভাগ্য অর্জন করবে। কিন্তু বর্তমানে বেশিরভাগ মুসলমানের জীবনে সুন্নতের অনুসরন অনুকরন নাই বললেই চলে। অথচ আমরা নিজেদেরকে শেষ নবীর উম্মত হিসেবে দাবী করছি। একদিকে সুন্নতের প্রতি চরম অবহেলা আর অন্যদিকে বিজাতীয়দের অন্ধ অনুসরন-অনুকরন আমাদের মাঝে ঝেঁকে বসেছে। ইতিহাস স্বাক্ষী যতদিন মুসলমান সুন্নতের উপর অটল ও অবিচল ছিল ততদিন সফলতা, কল্যাণ তাদের পদচুম্বন করেছে। আজ উম্মত আছে, সুন্নত নাই। যার ফলশ্রæতিতে মুসলিম জাতির দূর্গতির কোন শেষ নাই।
তাই আসুন, আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে নবীর সুন্নত আঁকড়ে ধরে সফলতা ও কল্যাণের পথে অগ্রসর হই। এবং ইহ-পরকালীন মুক্তির পথ খুঁজে বের করি। আমাদের পূর্বসূরীগন বলেন, যদি কেউ মিসওয়াকের আমল নিয়মিত করতে পারে তবে অন্যান্য সুন্নত পালন করা সহজ হয়ে যায়।। তাই প্রথমে মিসওয়াকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করব।
মিসওয়াকের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
প্রকৃতি কখনো মানুষের স্বভাব বিরুদ্ধ নয়, বরং তা সর্বদাই মানব স্বভাবের অনুক‚ল। শুধু তাই নয়, মানুষ যখন দুনিয়ার চাকচিক্য ও ভোগ-বিলাসিতায় ডুবে গিয়ে একসময় নানাবিধ বিপদাপদের সম্মুখীন হয় এবং তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনরূপ উপায়ন্তর না দেখে পুনরায় প্রকৃতির দিকে ফিরে আসে, প্রকৃতি তখনও মানুষকে পূর্বের মতো উপকার করে থাকে। চমকপ্রদ ও মহামূল্যবান হীরার টুকরোকে ফেলে দিয়ে সামান্য এক টুকরো কাঁচ গ্রহন করা যেমনিভাবে বুদ্ধিহীনতা ও বোকামী, ঠিক তেমনিভাবে মিসওয়াকের মতো স্বভাবসুলভ আমলটিকে পরিত্যাগ করাও অজ্ঞতা ও মূর্খতার পরিচয়। যখন থেকে আমরা এ মহান নেয়ামতটি কে হাতছাড়া করেছি, তখন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমরা নানাভাবে পেরেশান হচ্ছি। হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে দৈহিক সুস্থতার উৎসমূলে ফিরে যেতে সক্ষম হচ্ছি না।
মিসওয়াক সম্পর্কে একজন জ্ঞানী ব্যক্তি তার পান্ডিত্য সুলভ উক্তি করেছেন, তিনি বলেন, যেদিন থেকে আমরা মিসওয়াকের ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছি, সেদিন থেকেই “ডেন্টাল সার্জন” এর সূত্রপাত হয়েছে।
এবার আসুন! আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত মানুষের স্বভাব সুলভ কি-না? এ সুন্নত আমাদের উন্নতির প্রতিবন্ধক, না পথপ্রদর্শক, এ সুন্নত আমাদেরকে প্রস্তর যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, না বিজ্ঞানের নিকটবর্তী করে দেয়?
রাতে মিসওয়াক :
রাসূলুল্লাহ (সা:) রাতে শয়নকালে মিসওয়াক করতেন আবার জেগে মিসওয়াক করতেন। এটা ছিল রাসূলুল্লাহ (সা:) এর মহান অভ্যাস।
জনৈক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ওয়াশিংটনের একজন ডাক্তার একদা আমাকে বললেন, আপনি শয়নকালে মিসওয়াক করবেন। আমি বললাম, এর কারন কি? উত্তরে তিনি বললেন, বর্তমান যুগের গবেষণা বলে, মানুষ যা ভক্ষণ করে তার ময়লা কুলির দ্বারা পরিপূর্ণ ভাবে পরিষ্কার হয়না। তিনি আরো বলেন, সাধারনত: মানুষের দাঁত নষ্ট হয় শয়ন কালে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এর কারন কি? তিনি বললেন, আপনি প্রত্যক্ষ করে থাকবেন, দিনের বেলায় মানুষ কখনো কথা বলছে, কখনো আহার করছে, আবার কখনো পান করছে তাই দিনের বেলায় মুখ থাকে গতিশীল তার কারনে রক্তরস/রক্ত লসিকা তার কাজ করার সুযোগ পায় না। কিন্তু রাতের বেলা যখন মুখবন্ধ হয়ে যায়, তখন তার সুযোগ এসে যায় কাজ করার। এ কারনেই দাঁত রাতেরা বেলায় অধিক খারাপ হয় তিনি আরও বললেন, সকালে “টুথপেষ্ট” ব্যবহার করেন আর না করেন শোয়ার সময় অবশ্যই মিসওয়াক করে ঘুমাবেন। “বিজ্ঞ ডাক্তারের মুখে একথা শুনে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে নিলাম। কেননা এটাইতো আমাদের রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সুন্নাত। রাসূল (সা:) সর্বদা ওযু অবস্থায় শয়ন করতেন আর মিসওয়াক করা ব্যতীত কখনো তিনি ওযু করতেন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন