বিশেষ সংবাদদাতা : আইটি খাতে বাংলাদেশের আরো উন্নয়নে দক্ষ জনশক্তির অভাবকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, সরকার এ সমস্যা সমাধানে আগামী ৩ বছরে ৭৫ হাজার আইটি প্রফেশনালকে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এ খবর জানায়।
গত বৃহস্পতিবার জার্মানিতে সিইবিআইটি পডকাস্টকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, আইটি খাতের আরো উন্নয়নে বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি স্বল্পতা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ কারণে বাংলাদেশ প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত আইটির শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে পারছে না।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের সরকার ৩ বছরের মধ্যে ৭৫ হাজার আইটি প্রফেশনালকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেন্টার ফর অফিস অটোমেশন, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন (সিইবিআইটি) প্রদর্শনীতে যোগদানে জয় এখন জার্মানির হ্যানোভারে অবস্থান করছেন।
বহুল আলোচিত হ্যাকিং ইস্যু সম্পর্কে জয় বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত হ্যাকিংয়ের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন। তবে কাসপারেস্কি গ্রুপের মতে হ্যাকারদের টার্গেটের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বরে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আমাদের দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের কারণেই এটি ঘটেছে। আমরা সরকারি সেবাসমূহকে ডিজিটালাইজড করছি। জয় বলেন, হ্যাকারদের প্রতিরোধে আমরা আমাদের সিস্টেমকে ভার্সন-২এ হালনাগাদ করছি। কারণ আমাদের আইটি সিস্টেমের অধিকাংশই এখনো ভার্সন-১এ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা যখন আইটি ব্যবস্থার সূচনা করি তখন দেশে পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ ছিল না। আমাদের ১০ গুণ বেশি মূল্যে বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনতে হয়েছে।
জয় বলেন, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ডিজিটালাইজেশন হয়েছে স্থানীয় কোম্পানিগুলো দ্বারা। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র ও ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন হয়েছে একটি বিদেশী কোম্পানির মাধ্যমে।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের আওতায় একটি বিদেশী কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটালাইজড করেছে। এখানেই প্রথমবারের মতো বড় ধরনের হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অন্যান্য সরকারি সেবায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।
আইটি প্রশিক্ষণকে এ খাতের বিকাশে খুবই জটিল বিষয় বলে উল্লেখ করে জয় বলেন, সরকার যুবকদের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনসহ আইটি এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি বলেন, অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার পর ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি আইটি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কারণ এখানে অতীতে কোনো আইটি ইন্ডাস্ট্রি ছিল না। এ কারণে বাংলাদেশে দক্ষ আইটি বিশেষজ্ঞও গড়ে ওঠেনি।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের আইটি প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠাতে চায় না, কারণ এটি খুব ব্যয়বহুল। আমাদের সরকার দেশের মধ্যেই জনগণকে আইটি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
জয় বলেন, সরকার বিশেষজ্ঞদের পড়াশোনার জন্য বিদেশে যেতে এবং বাংলাদেশে ফিরে কাজ করতে উৎসাহ দিয়ে আসছে। তিনি বলেন, আমরা একটি পিপিপি সেল প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছি। দেশের জন্য কাজ করতে আমরা তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি।
যোগাযোগ জোরদারকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ একমাত্র সাবমেরিন ক্যাবলের ওপর নির্ভরশীল। কোনো কারণে এটি কাটা পড়লে সারাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। আমরা শিগগিরই এই যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করব।
জয় বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভারতের মধ্য দিয়ে ইন্টারনেট যোগাযোগ বজায় রেখেছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের কাজ চলছে। দেশব্যাপী ফাইবার অপটিক বসানোর কাজ শুরু করতে আমরা বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করছি। এ জন্য আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ফাইবার অপটিক সম্প্রসারণে বেসরকারি খাতের সঙ্গে কাজ করছে।
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মধ্যে থ্রিজি স্প্যাকট্রাম নিলাম করেছে। এর ফলে তাদের নেটওয়ার্ক দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে।
জয় বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন জনগণের কাছে একটি অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতের ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি নির্ভর করলেও সরকার অর্থনীতিকে কিছু দেয়ার জন্য এখন বিকল্প হিসেবে আইটি খাতকেও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন