দীর্ঘদিন ধরে আঁকড়ে রাখা ক্ষমতা শেষ পর্যন্ত হারাতে চলেছেন জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির ক্ষমতায় থাকা মুগাবের পদত্যাগের দাবি বুধবার সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই জোরদার হতে থাকে। সেনাবাহিনীও তাকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অনুরোধ করে। যদিও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। গত শনিবার মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী হারারের রাস্তায় মিছিল করে হাজার হাজার মানুষ। আর গতকাল ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের পদ থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়েছে। ফলে এখন ক্ষমতা ছাড়া তার সামনে কোনও পথ খোলা নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, গতকাল প্রেসিডেন্ট মুগাবেকে ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফ’র প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। তার স্থানে নতুন নেতা করা হয়েছে দুই সপ্তাহ আগে বরখাস্ত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়াকে।
অন্যদিকে জিম্বাবুয়ের সরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এক বিবৃতির বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, মুগাবে দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। সেনাবাহিনীর একটি সূত্রের উল্লেখ করে এতে বলা হয়, এর আগে তাকে কয়েকবার এ প্রস্তাব দেওয়া হলেও তিনি রাজি হননি। তবে এবার তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মধ্যস্ততা করার জন্য দীর্ঘদিনের এক বন্ধুকে ডেকেছেন।
সেনাবাহিনী হারারের নিয়ন্ত্রণ ও প্রেসিডেন্টকে গৃহবন্দি করার পর ক্ষমতাসীন দলের ফার্স্ট সেক্রেটারির পদ থেকে মুগাবেকে অপসারণ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের পদ থেকেও তার পদত্যাগ দাবি জোরালো হয়ে নিজ দলেই। পদত্যাগ না করলে আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবেও বলে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মুগাবের হাতে এখন আর কোনও বিকল্প নেই। পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা শাখা তার উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অনেককে আগেই গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। আর হারারের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ তার পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। তারা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে উল্লাস প্রকাশ করছে। এমনকি তার বাড়ি থেকে প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরও চলে গেছে।
এদিকে বিশ্লেষকরা মুগাবের পদত্যাগ দাবিতে জিম্বাবুয়ের সাধারণ নাগরিকদের এমন উল্লাসকে শুধু স্বৈরশাসকের হাত থেকে মুক্তির আনন্দ হিসেবে নয়, তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের জন্য তীব্র আকাক্সক্ষা হিসেবেই দেখছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ফিয়ারস পিয়ারস পিগু বলেন, ‘এই সমর্থন সেনাবহিনী ও ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দলের জন্য একই সঙ্গে বড় সুযোগ আবার বিশাল চ্যালেঞ্জ। মানুষের কথা শুনে মনে হচ্ছে, তারা শুধু জানু-পিএফ দল বা সেনাবাহিনীকে সমর্থন জানাচ্ছেন না, তারা প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার বিকল্প খুঁজছেন।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেশিরভাগ আন্দোলনকারী বিশ্বাস করেন, মুগাবে ক্ষমতা ছাড়লে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়া দায়িত্ব নেবেন। আর দেশটির বিরোধী দলের নেতারা এই সঙ্কট কাটাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে সেনাবাহিনী ও জানু-পিএফ দল তা নাকচ করে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ভবিষ্যতে দেশটিতে সেনাবাহিনী আরও বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে। জিম্বাবুয়ের সাবেক সেনা কর্মকর্তা মার্টিন রুপিয়া বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বাদ দিয়েছে, তাই কিছুদিনের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে আরও ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।’ জানু-পিএফ দলের এক কর্মকর্তাও জানান, আগামী কয়েক বছর রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সমর্থন করা যায়। সূত্র : ওয়েবসাইট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন