রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নিজেদের স্বার্থরক্ষায় আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা দ্বন্ধে জড়িয়ে পড়েছেন

হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত

মাহফুজুল হক আনার দিনাজপুর থেকে : | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রংপুর বিভাগের অন্যতম উচ্চ শিক্ষাঙ্গন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ক্রমশ অশান্ত হয়ে পড়ছে। আওয়ামীপন্থী শিক্ষকেরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের স্বিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিশ^বিদ্যালয়ে নুতন ভিসি নিয়োগের পর থেকেই সাবেক ভিসি সমর্থিত আওয়ামীপন্থী দাবীদার প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারের অভিযোগে সচ্চার হয়ে উঠে। শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি, ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মসহ সর্বশেষ ছাত্র ও পরামর্শ বিভাগের পরিচালককে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠে। গত সোমবার প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম নেতৃবৃন্দের কাছে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকে বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি। আবার জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে। অবরোধকারী শিক্ষকদের দাবী উদ্ধারকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন ৬ শিক্ষক। এ ব্যাপারে কোন মামলা দায়ের হয়নি।
বিশ^বিদ্যালয়ের একটি সুত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাবেক ভিসি প্রফেসর রুহুল আমিন এর মেয়াদ শেষ হয়। সাবেক ভিসি’র মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় চার মাস কৃষি সম্প্রসারণের প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেমকে নুতন ভিসি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারী যথারীতি যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তোলেন সাবেক ভিসি’র নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম। বিএসসি এগ্রিকালচার এন্ড এগ্রিবিজনেস (অনার্স) কে এগ্রিকালচার (অনার্স) করার দাবিতে গত ১১ জুন বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-ছাত্রীরা সাবেক ভিসি’র চেম্বার ভাঙচুর করে। ১৪ জুন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর বলরাম রায় স্বাক্ষরিত গণ মাধ্যমে দেয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নুতন ভিসির ইন্ধনেই হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এর আগে ১১ জুন ছাত্র-ছাত্রীরা রেজিষ্টার বরাবরে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম এর নেতা ১১জন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ করে রেজিস্ট্রার বরাবরে। এ অবস্থায় আওয়ামীপক্ষের দাবিদার প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম ভেঙ্গে গঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধেও চেতনা ও মুল্যবোধে বিশ^াসী শিক্ষক পরিষদ। যারা মূলত বর্তমান ভিসি’র পক্ষের শক্তি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সর্বশেষ গত শনিবার ১৮ নভেম্বর প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম দিনাজপুর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্বেলনে সম্প্রতি সমাপ্ত ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তোলেন। পরদিনই বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের তোলা সকল অনিয়মকে মিথ্যাচার বলে প্রতিবাদ দেন। তবে লক্ষনীয় বিষয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ছাত্র-ছাত্রী বা অভিভাবকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এক্ষেত্রে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্বেলনের মাধ্যমে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরার কারনে বিশ^বিদ্যালয় বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবী জানিয়েছে রাজনীতির বাহিরে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীরা।
গত সোমবার ২০ নভেম্বর ছাত্র ও পরামর্শ বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ এসএম হারুন-উর রশিদকে অব্যাহতি দিয়ে প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন খান লিখনকে দায়িত্ব দিলে প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতৃবৃন্দ ভিসি প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেমের কক্ষের সামনে মেঝেতে বসে অব্যাহতি প্রত্যাহারের দাবীতে অবস্থান নেয়। একাডেমিক ভবনের মূল ফটকে বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। ফলে নিজ অফিস কক্ষে ৪ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত ৮টায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ভিসির কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে উদ্ধার করেন। শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. বলরাম রায় অভিযোগ করেন, ভিসির উপস্থিতিতেই তাঁর অনুসারী ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। এসময় ভিসির সমর্থক কয়েকজন শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের শাজদিক আহমেদ, হাফিজ আল-আমিন, পলাশ হাসান জামিল, মাসুদ ইবনে আফজাল, আতিকুল হক ও রুবায়াত হাসান আহত হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আহত ৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪ জনকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ২ জনকে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবশ্য ভিসিকে উদ্ধারকারী ছাত্ররা বলেছেন শিক্ষকরা আমাদের গুরুজন তাদের উপর হামলার কোন প্রশ্ন আসে না। আমরা কেবল অবরুদ্ধ ভিসিকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে পৌছে দিয়েছি। ভিসিপন্থী শিক্ষকেরা ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভিসিকে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে তাঁর ক্যাম্পাসের বাসভবনে রেখে আসেন।
শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বাদী হয়ে সোমবার রাত ১১টায় কোতয়ালী থানায় ১৩ জন শিক্ষক ও ছাত্রের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা দেড়শ জনকে আসামী করে কোতয়ালী থানায় মামলা করলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (বিকেল সাড়ে ৪টা) মামলা রেকর্ড করা হয়নি। পুলিশ সুপার মোঃ হামিদুল আলম জানান, তদন্ত করে অভিযোগ সম্পর্কে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সবশেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেড় ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। সমাবেশ বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ অনুষদের ডীন প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন খান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মো. ফজলুল হক, সহকারী প্রক্টর সৌরভ পাল চৌধুরী, সেকশন অফিসার মোহাম্মদ সামসুজ্জোহা বাদশা, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা কাজী নিশাত সুলতানা, কর্মচারী মো. আব্দুর রহিম, শ্রমিক নেতা রাজু আহমেদ, ছাত্রলীগ নেতা মো. মারুফ, রিয়াদ খান এবং সাদিয়া ইয়াসমিন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন