অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেইন বলেছেন, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশ অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়। একই অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শেষ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ৯০০ কোটি ডলার বা ৭২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যা বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের সমান।
গতকাল রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা : বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক সংলাপে অর্থনীতিবিদরা এসব কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসি) এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেইন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, দেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র (এসডিজি) অর্জন করতে হলে প্রতিবছর বৈশ্বিক বিনিয়োগ প্রয়োজন ৫ থেকে ৭ ট্রিলিয়ন ডলার। এক্ষেত্রে ৫ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগ হলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ করতে হবে ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। আর বৈশিক বিনিয়োগ ৭ ট্রিলিয়ন হলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ করতে হবে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ৫ ট্রিলিয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঘাটতি রয়েছে ৫ হাজার কোটি ডলার এবং ৭ ট্রিলিয়নের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ঘাটতি আছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে অর্থবছর ২০১৫-২৪ সময়ে ব্যবসার মুনাফার প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হারে হতে হবে।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ যা আছে তা হলো জেগে উঠা। আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই ভালো। সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা খুবই ভালো অবস্থানে রয়েছি। যুক্তরাজ্যে আমাদের রফতানি কমে যাওয়া শংঙ্কা দেখা দিয়ে ছিলো। কিন্তু বাস্তবত হলো প্রতিনিয়িত যুক্তরাজ্যে আমাদের রফতানি বেড়েছে। শেষ বছরে যুক্তরাজ্যে থেকে ৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার বা ৫৭০ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে।
তোফায়েল আহমদে বলেন, রিজার্ভ আছে ২৮ বিলিয়ন, কৃষি খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ, সার্ভিস খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২৬ শতাংশ; পাশাপাশি রফতানি আয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি নয়। বাংলাদেশ মিরাকলের (অলৌকিক) মতো বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে।
জিএসপি সুবিধা না পাওয়ার সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেখেছি বেসরকারি খাতে ৭ শতাংশ এবং সরকারি খাতে ১৩ শতাংশ ট্রেড ইউনিয়ন আছে। অথচ তারা বাংলাদেশে শতভাগ ট্রেড ইউনিয়ন চায়। আমি অনেক পোশাক কারখানা পরিদর্শন করেছি। শ্রমিকেরা নিজের মুখে বলেছে- ১০ হাজার টাকা বেতন পাই। আমাদের কর্মপরিবেশও ভালো। তবুও জিএসপি সুবিধা না পাওয়া দুঃখজনক।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দক্ষতা আমাদের বড় সমস্যা। প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার কারণে বাংলাদেশে ২ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক সাহায্য অব্যবহৃত রয়েছ। আর এ অর্থ ব্যবহারই করতে পারিনি। তিনি বলেন, বিনিয়োগ, অবকাঠামো সমস্যা নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের মূল সমস্যা হলো দুর্নীতি। এ বিষয়টি কেউ বলছেন না।
আইসিসি’র সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন- অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এতে প্যানেল আলোচক ছিলেন- ইউএনডিপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর নিক বেরেস্ফর্দ, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি নাসিম মনজুর, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ আইএফসি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাসরুর রিয়াজ, ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’র (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফা কে মজুরি প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন