শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গঙ্গা চুক্তি লঙ্ঘন, পদ্মা এখন মরা গাঙ

প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : পদ্মা অববাহিকার সব নদী মরা গাঙে পরিণত হয়েছে। পানি নেই, যেদিকে চোখ যায় শুধু বালু আর বালু। পানি নিয়ে গত আট বছরের মধ্যে এমন দুর্যোগ আর কখনও দেখা দেয়নি। এই মরুময়তার জন্য পানি বিশেষজ্ঞরা ফারাক্কা বাঁধের ভয়াবহ প্রভাবকেই দায়ী করছেন। আর যৌথ নদী কমিশন বাংলাদেশ (জেআরসি) জানায়, ১৯৯৬ সালে দু’দেশের মধ্যে গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এ প্রথম বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সর্বনিম্ন পানি পাচ্ছে। যা চুক্তিপত্রের লঙ্ঘন।
চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না-বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় লিখিতভাবে দিল্লীকে জানিয়েছে। বিষয়টি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেআরসি’র কারিগরি কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সুফল আসেনি। বরং চলতি শুষ্ক মৌসুমে পর্যায়ক্রমে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে আরও অধিক হারে বঞ্চিত হচ্ছে। এই দুরবস্থা নিরসনে পানি সম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। কিন্তু এ বৈঠক কবে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার দিনক্ষণ তিনি জানেন না। এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ভারতের ইচ্ছার ওপর।
জানা যায়, ভারতের অনীহায় প্রায় ছয় বছর যাবত বসছে না জেআরসি’র বৈঠক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দিতে দিল্লীর আপত্তি এবং রাজনৈতিক দিকনির্দেশনার অভাবই এজন্য দায়ী। যার বিরূপ প্রভাবে চলতি শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা এখন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’-তে পরিণত হয়েছে।
জেআরসি সূত্রে জানা যায়, ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ গত ১ মার্চ থেকে ১০ মার্চ এই দশ দিনে পানি পেয়েছে মাত্র ২৫ হাজার ৪১৯ কিউসেক। এ সময়ে ফারাক্কা পয়েন্টে পানি ছিল ৫০ হাজার ৮৩৮ কিউসেক। এ পরিমাণ পানিই বাংলাদেশ ও ভারত সমভাবে ভাগ করে নেয়। এ সময়ে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি পাওয়ার কথা কমপক্ষে ৩৫ হাজার কিউসেক। গঙ্গা চুক্তির ইন্ডিকেটিভ সিডিউল অনুযায়ী পানির হিস্যা আরও বেশি হওয়ার কথা।
গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী, একই সময়ে গত আটটি শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার পরিমাণ হচ্ছে ২০১৫ সালে (১-১০ মার্চ) ৩৩ হাজার ৫২৯ কিউসেক, ২০১৪ সালে (১-১০ মার্চ) ৬১ হাজার ৯৯৯ কিউসেক, ২০১৩ সালে (১-১০ মার্চ) ৬৩ হাজার ৮৭৯ কিউসেক, ২০১২ সালে (১-১০ মার্চ) ৩৯ হাজার ২০৮ কিউসেক, ২০১১ সালে (১-১০ মার্চ) ৩১ হাজার ৬৮৬ দশমিক ৫ কিউসেক, ২০১০ সালে (১-১০ মার্চ) ৩০ হাজার ৩৭১ কিউসেক, ২০০৯ সালে (১-১০ মার্চ) ৩০ হাজার ৬১৩ কিউসেক এবং ২০০৮ সালে (১-১০ মার্চ) ২৯ হাজার ৪৩৬ কিউসেক পানি পাওয়া যায়। জেআরসি সূত্রে আরও জানা যায়, শুধু এই দশ দিনেই নয়; ১ জানুয়ারি শুষ্ক মৌসুম শুরুর পর থেকেই প্রতিটি দশ দিনের হিসাবেই বাংলাদেশ অন্যান্য বছরের তুলনায় পানি কম পাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে যৌথ নদী কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, ভারতকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তবে তারা বলছেন, ফারাক্কা পয়েন্ট পানি কম পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হলে পানি বাড়বে। এই কর্মকর্তার মতে, এটি ভারতের অজুহাত এবং প্রতি শুষ্ক মৌসুমেই তারা এমন যুক্তি তুলে ধরে। কিন্তু চুক্তির ধারায় বলা আছে, ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ কমে গেলে উভয় দেশ মিলে পানির প্রবাহ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ভারত এ বিষয়টিকে সব সময়ই পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। এই কর্মকর্তা আরও জানান, যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক বসলে বাংলাদেশ এসব বিষয় জোরালোভাবে উত্থাপন করবে।
জানা যায়, জেআরসি’র মন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ ৩৭তম বৈঠকটি বসেছিল ২০১০ সালে মার্চে দিল্লীতে। আর ৩৮তম বৈঠকটি হওয়ার কথা ঢাকায়। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালের ১৮-১৯ জুন ঢাকায় জেআরসি’র ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। ওই সময় ভারতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় ছিল। কিšুÍ প্রস্তুতির প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে দিল্লীর পক্ষ থেকে বৈঠকটি বাতিল করা হয়। কেন এবং কী কারণে এ বৈঠক বাতিল করা হয়েছিল- তার বিশেষ কোনো কারণও বাংলাদেশকে জানানো হয়নি।
পরবর্তীতে ভারতে নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের পানি সম্পদ মন্ত্রী জেআরসি’র বৈঠক অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে একটি চিঠি পাঠায়। এর জবাবে ভারতের পানিসম্পদ ও নদী উন্নয়ন মন্ত্রী উমা ভারতী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, আপাতত জেআরসি’র বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে এই চিঠিটি পাঠানো হয়।
ওই সময় পানিসম্পদমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উমা ভারতী জানান, বর্তমানে ভারতের সংসদে বাজেট অধিবেশন চলছে। পরবর্তীতে পারস্পরিক সুবিধা মতো সময়ে বাংলাদেশে সফরে আসবো। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে চিঠিতে তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৯৭ সালের গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি তার একটি প্রমাণ।
পানি সম্পদমন্ত্রীকে এমন চিঠি দিলেও জেআরসি’র বৈঠকের দিনক্ষণ আজও জানাননি উমা ভারতী। ফলে জেআরসি’র বৈঠক না হওয়ায় দু’দেশের মধ্যে আটকে আছে ৫৪টি অভিন্ন নদী সংক্রান্ত অনেক অমীমাংসিত সিদ্ধান্ত।
দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেআরসি’র বৈঠকের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে অভিন্ন নদীর পানি সমস্যার সমাধানের বিষয়টি। বিশেষ করে জেআরসি’র বৈঠক না বসার অর্থ তিস্তা চুক্তি নিয়ে কালক্ষেপণ করা। চুক্তি না থাকার কারণে তিস্তার নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক রূপ নিয়েছে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়াটা বাংলাদেশের অধিকার। আর ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়াটা ত্রিশ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Tanjir Arafat ২১ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৫ এএম says : 0
ভারত ভারত করলে এটাই হয়, কারন ভারত নিযেদের সারতে আমাদের ঠকায় আর আমরা ক্ষমতার লোভে দেশের মানুষের আধিকারের কথা ভুলে যাই ।
Total Reply(0)
Kamal Ahmed ২১ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৬ এএম says : 0
আর কিছুদিন সবুর করেন মরুভুমি দেখতে পাবেন
Total Reply(0)
মোঃ ইয়াছিন ২১ মার্চ, ২০১৬, ১১:৫৬ এএম says : 1
এ কথা বলবে না বল্লে আবার দাদারা রাগ করবে আর রাগ করলে বুজেন ই তো?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন