বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাত্রাতিরিক্ত মূল্যে সোলার প্যানেল গ্রাহকদের গছিয়ে দিচ্ছে ইডকল

যৌক্তিক কারণ জানতে চেয়েছে সংসদীয় কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর), গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) এবং গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পগুলোর বরাদ্দকৃত টাকায় গৃহীত সোলার প্যানেল প্রকল্পে অনিয়ম চলছেই। বাজারে চলমান বিক্রয় মূল্যের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত দামে এসব সোলার প্যানেল গছিয়ে দেয়া হচ্ছে অতি দরিদ্র জনগণকে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির এসব অনৈতিক কাজে বিভিন্ন এনজিওকে সহায়তা করেছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৯তম বৈঠকে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। কমিটি অধিকমূল্যে সোলার প্যানেল বিক্রির যৌক্তিক কারণ ইডকলের কার্যক্রম বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রতিবেদন আগামী বৈঠকে দাখিল করতে বলেছে।
কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, তালুকদার আবদুুল খালেক, বি এম মোজাম্মেল হক, মমতাজ বেগম এবং হেপী বড়াল। এ ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: শাহ কামালসহ মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ইডকলের এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে এর আগেও অসন্তোষ ছিল সংসদীয় কমিটিতে। বিভিন্ন এলাকার এমপিরা প্রকল্পটির বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করে গরিবের টাকা লুটেপুটে খাওয়ার এই ব্যবস্থা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এ নিয়ে বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক ইনকিলাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টিআর এবং কাবিখা প্রকল্পের কর্মসূচি দুটি বদলে এ দুটি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেক সোলার প্যানেল ও বায়োগ্যাস স্থাপনের কাজে ব্যয় বাধ্যতামূলক করা হয়। বাকি টাকায় হবে অবকাঠামো উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে প্রকল্প বন্ধ থাকার পরও নির্দেশিকা জারি করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বছরের শুরুতেই (৫ জানুয়ারি) যুগ্ম সচিব মো: ইসমাইল হোসেন স্বাক্ষরিত এ চিঠি সব জেলা প্রশাসককে দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, টিআর ও কাবিখা কর্মসূচির প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের কাজে ইডকলের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হচ্ছে। চলমান কার্যক্রমে মূল্য পুননির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে ইডকলের সঙ্গে আলোচনা করে আগের চেয়ে বর্তমান প্রকল্পের মূল্যের ১০ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে নির্দেশিকা মোতাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার যৌথ স্বাক্ষরে সংরক্ষিত থাকবে। বিনামূল্যে স্থাপিত সোলার হোম সিস্টেমের রক্ষণাবেক্ষণও সার্ভিস প্রদান করবে। তিন বছর মেয়াদ উত্তীর্ণের পরে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে হয়েছে প্রতীয়মান হলে জামানতের সম্পূর্ণ টাকা প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনুক‚লে দেয়া হবে। প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হলে অথবা সেবা সন্তোষজনক বিবেচিত না হলে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত হবে। সোলার প্যানেল প্রকল্পটি নিয়ে সর্বমহলের বিরোধিতার মুখেও ফের কাবিটার অর্থ এই প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কাবিটার মোট বরাদ্দের ৩৬১ কোটি টাকা থেকে সোলার প্যানেল ও বায়োগ্যাস খাতে যাচ্ছে ১৮১ কোটি টাকা। গত বছর কাবিটার ৩৫০ কোটি টাকা থেকে সোলার খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। নিম্নমানের ও নামসর্বস্ব সোলার প্যানেল দিয়ে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট এ বরাদ্দের অধিকাংশ অর্থই হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এবারো একই ধরনের অনিয়মের আশঙ্কা করছেন তারা।
সরকারদলীয় এমপিদের অভিযোগ, গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নের প্রকল্প- কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) সোলার খাতে স্থানান্তর করে আবারো লুটপাটের ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সবকিছু জেনেশোনে সরকার আবারো এ খাতে বরাদ্দ দিয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। এর পেছনের রহস্য পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে অভিমত তাদের। তাদের মতে, গ্রামগঞ্জে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দের অর্থ থেকে নয়। এ জন্য পৃথক প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে উল্লিখিত দুই অর্থবছরে সোলারের বরাদ্দের ৩৩১ কোটি টাকার অধিকাংশই গচ্চা যেতে পারে বলে আশঙ্কা এমপিদের।
এদিকে বৈঠকে জনগণের কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫টি জেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে ব্রিজ/ কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া আগাম বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য সংসদীয় কমিটির ভারত ও নেপালের উজানের নদ-নদী ও বৃষ্টিবহুল অঞ্চল পরিদর্শনের সূচি চ‚ড়ান্ত করার সুপারিশ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন