শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপিতে দু’শ’নেতার একাধিক পদ

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : সাবেক ছাত্র নেতা ফজলুল হক মিলন। পদ দখলে তিনি ছক্কা মেরেছেন। তার দখলে এখন ছয়টি পদ। তিনি বিএনপির ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতিও তিনিই। স্থানীয় পৌর কমিটি নেই, পদাধিকার বলে তিনিই এখন সভাপতি। তার নিজ ইউনিয়ন তুমুলিয়া বিএনপির কমিটি নেই তাই পদাধিকার বলে ফজলুল হক মিলই সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
ইনকিলাবের তদন্তে দেখা গেছে বিএনপিতে এমন ফজলুল হক মিলনের সংখ্যা দুই শতাধিক। দলটির বর্তমান কমিটি সদস্য সংখ্যা ৩৮৬। পদ বাগানোর প্রতিযোগিতায় দলের নেতাদের মনোভাব এমন ছিলো যে, ‘অর্থ, প্রভাব, লবিং, গ্রুপিং যেকোন মূল্যে হোক একটা নয়Ñ একাই একাধিকপদ চাই’। একজন একাধিক পদে আছেন, তারা পদ ছাড়ছেন না। একাধিক পদ ধরে রাখার জন্য নেতারা মাঠ পর্যায়ে গ্রুপিং তৈরি করেন। এতে কোন্দ্বল লেগেই আছে। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, জাসাস, মুক্তিযোদ্ধা দলসহ অন্য অঙ্গসংগঠনগুলোতে এখন নেতৃত্বের জট সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পদ দখল এবং আটকে রাখার এ প্রতিযোগিতার কারণে বিএনপির অনেক যোগ্য নেতা অবমূল্যায়ন, বঞ্চনা, হতাশা এবং কষ্ট নিয়ে রাজনীতিকে ‘গুডবাই’ জানিয়েছেন। অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। হাইকমান্ড একাধিক পদ ছাড়ার নির্দেশ দিলেও কিছুদিন পর পর হাইকমান্ড তা ভুলে যায়।
তবে এবার জিয়ায় ফিরে গেছে বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ‘এক নেতা-এক পদ’ নীতিতে বিশ্বাস করতেন। তার সময়ে কোন নেতাকে একাধিক পদে থাকতে দেয়া হয়নি। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১১ অনুচ্ছেদ-এ উল্লেখ আছে: ‘একই ব্যক্তি দলের একাধিক স্তরে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হতে নিরুৎসাহিত করা।’ এই পদ দখলের রাজনীতির বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে যাচ্ছে দলটি। অর্থাৎ গাছের ফুল, ফল ও মূল সবই একাই মুচড়ে খাওয়া যাবে না। একটি বেছে নিতে হবে।
‘এক বক্তির এক পদ’ বিধান রেখে গত ১৯ মার্চ দলের নির্বাহী কমিটির কলেবর বৃদ্ধি করছে বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন উপ-কমিটির আহবায়ক তরিকুল ইসলাম সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার পর তা উপস্থাপন করেন নজরুল ইসলাম খান।
গঠনে বিশেষ ধারা সংযোগ করা হয়েছে। ‘একব্যক্তির এক পদ’-এর ধারা সম্বলিত বিধান গঠনতন্ত্রে সংশোধন করা হয়। এতে স্থায়ী কমিটি ও নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তারা দল ও সহযোগী সংগঠনের অন্যকোনো পদে থাকতে পারবেন না। একইভাবে জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবেন তারা দলের অন্যকোনো পর্যায়ের পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। তবে অনিবার্য কারণে চেয়ারপার্সন ব্যতিক্রম অনুমোদন করতে পারবেন।
বিএনপির দফতরের তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের অধীনেই আছে ৫টি পদ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’। দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ইন্তেকাল করার পর থেকে আছেন এই দায়িত্বে। পদাধিকার বলে তিনি স্থায়ী কমিটির সদস্য। ১০ বছর ধরে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিও তিনি। মির্জা ফখরুল নিজ জেলা ঠাকুরগাঁও বিএনপির সভাপতির দায়িত্বেও আছেন প্রায় একযুগ ধরে। দলের গঠনতন্ত্রে ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব’ নামে কোনো পদ নেই।
অন্য সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাস আছেন দুই শীর্ষ পদে। ‘স্থায়ী কমিটির সদস্য’ এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক।
মজিবর রহমান সরোয়ারের দখলে আছে তিন পদ। তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, শ্রমিক দলের উপদেষ্টা, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি।
শামসুজ্জামান দুদু আছেন তিন পদে। তিনি কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক। সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু তিন পদে। কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার-বিষয়ক সম্পাদক। লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দুই পদ। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান একই সঙ্গে ঢাকা জেলা বিএনপিরও সাধারণ সম্পাদক। ঢাকা জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আব্দুুল মান্নান একই সঙ্গে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এডভোকেট আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি। রাবেয়া চৌধুরী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি। বিএনপির প্রশিক্ষণ-বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন-বিষয়ক সম্পাদক। তিনি আবার কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সভাপতি। ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাদা মিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক। গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি।
যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি। যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি। যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ সম্পাদক পদে রয়েছেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী একই সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি। খায়রুল কবির খোকন কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অন্যদিকে নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি। আবুল খায়ের ভূঁইয়া কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজ কল্যাণ-বিষয়ক সম্পাদক একই সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক ও নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক। আবার ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। দলের সহ-আইন বিষয়ক সমপাদক এক এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক একই সঙ্গে যুবদলের সভাপতির দায়িত্বে। সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা মহিলা দলের সভানেত্রী। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন।
স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আব্দুুল হাই মুন্সীগঞ্জ জেলা সভাপতি। শিল্প বিষয়ক সম্পাদক একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা সভাপতি। সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক। সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি। সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। কেন্দ্রীয় সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক। সহ-শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এমএ মালেক জাসাস সভাপতি। সহ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক। সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবু সাঈদ খান খোকন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।
একাধিক পদ থেকে পিছিয়ে নেই নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও। নির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম বগুড়া জেলা সভাপতি, আফরোজা আক্তার খান রিতা মানিকগঞ্জ জেলা সভাপতি, শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সিলেট মহানগর আহ্বায়ক, এম নাছের রহমান মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি, জিকে গউছ হবিগঞ্জ জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক। ওহিদুল ইসলাম বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, আনোয়ার হোসাইন শ্রমিক দলের সভাপতি, শফিকুর রহমান কিরণ শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সভাপতি, আশিফা আশরাফি পাপিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক, কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দ মোদারেছ আলী ইসা ফরিদপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক, রাবেয়া সিরাজ মহিলা দলের সহ-সভাপতি, ওয়ারেছ আলী মামুন জামালপুর জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক, মইনুল ইসলাম শান্ত মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ুন কবির খান তাঁতী দলের সভাপতি, কাজী আবুল বাশার ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, এমএ কাইয়ুম ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, এসএ খালেক ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য, রফিকুল ইসলাম মাহতাব মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, মীর সরফত আলী সপু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক, মনির খান জাসাস সাধারণ সম্পাদক, শফিউল বারী বাবু স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, ইয়াসমীন আরা হক মহিলা দলের সহ-সভাপতি, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল পিরোজপুর জেলা সভাপতি, আলমগীর হোসেন পিরোজপুর জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক, মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ বরিশাল উত্তর জেলা সভাপতি, আকন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক, রেহেনা আক্তার রানু ফেনী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক, তকদির হোসেন মো. জসিম কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, মোস্তফা খান সফরী চাঁদপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন