বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সেনানিবাস আইন করছে সরকার

প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সেনানিবাসগুলো আইনের আওতায় আনতে ‘সেনানিবাস আইন’ করতে যাচ্ছে সরকার। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘সেনানিবাস আইন, ২০১৬’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হয়। এই আইনটি আরো যাচাই-বাছাই করে পরে উত্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বৈঠকশেষে মন্ত্রিপরিষদ মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেসবিফ্রিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা ‘সেনাবাহিনী আইন, ২০১৬’ অনুমোদন না করে তা আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এই প্রস্তাবের বিষয়ে আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারছি না। সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯২৪ সালের ক্যান্টনমেন্ট অ্যাক্ট দিয়ে এতদিন বাংলাদেশের সেনানিবাসগুলো পরিচালিত হয়ে আসছিল। সেনানিবাসগুলো পরিচালনার জন্য আইনি কাঠামোর ভেতরে আনতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভায় ‘সেনানিবাস আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যেহেতু প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় তিন বাহিনীর মতামত যুক্ত হয়নি, তাই আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
মন্ত্রী আরো বলেন, এতদিন ধরে দেশের ক্যান্টনমেন্টগুলো ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধীনে ১৯২৪ সালের একটি স্বতন্ত্র আইন দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল। সরকার চেয়েছিল এগুলোকে কেন্দ্রীয় একটি আইনের আওতায় আনতে। এই প্রস্তাবটিই মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হয়। তবে প্রস্তাবে সেনাবাহিনীর কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে আইনটি আবার ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, এজন্য মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে ওই মন্ত্রণালয়কে কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবে কিছু পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও সেনাবাহিনীর মতামত-সুপারিশ যুক্ত করে আবার উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে।
জাতীয় শিল্পনীতি অনুমোদন : বাংলাদেশে নাগরিকত্ব পেতে বিদেশিদের বিনিয়োগ এবং অর্থ স্থানান্তরের পরিমাণ দ্বিগুণ করে মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় শিল্পনীতি, ২০১৬’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। বিনিয়োগ ও অর্থ স্থানান্তরের পরিমাণ বাড়ানো হলেও বিদেশিদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়েছে শিল্পনীতির খসড়ায়।
বৈঠকেশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ১০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ ও স্বীকৃত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ মার্কিন ডলার স্থানান্তর করলে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য বিবেচিত হবেন। এটা আগে ছিল যথাক্রমে ৫ লাখ ও ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
তিনি আরও বলেন, ১২তম অধ্যায়ে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সবুজ উচ্চপ্রযুক্তি সম্পন্ন উদ্ভাবনীমূলক এবং যেসব শিল্পে দক্ষতা ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের সুযোগ রয়েছে, সেসব শিল্পে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ও ওয়ান স্টপ সার্ভিস থাকবে। ঋণগ্রহণের সুযোগ অব্যাহত রাখা ছাড়াও শিল্পপার্ক স্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের ‘ভ্যালু চেন’-এ যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সের ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ন্যূনতম ৭৫ হাজার ডলার বিনিয়োগের শর্ত বাড়িয়ে দুই লাখ ডলার করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সম্ভাবনাময় বিদেশি বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম ৫ বছরের মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হবে। দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের মতো বিদেশি উদ্যোক্তারা কর অবকাশ, রয়্যালটি, প্রযুক্তি কৌশল ফি ভোগ করবেন। তবে নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে বিদেশিরা আগ্রহী কম। সরকারের পক্ষ থেকে সুযোগ রাখা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
শিল্পায়নের গতি সঞ্চারে বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ প্যাকেজ সুবিধা প্রদান করা হবে বলে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শিল্প বিনিয়োগ সহজীকরণের ইনটিগ্রেটেড ওয়ানস্টপ সার্ভিস সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদকে নতুন নীতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘৪০ সদস্যের এ পরিষদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী। পরিষদকে সহায়তা করবে জাতীয় শিল্প উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী কমিটি। এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন শিল্পমন্ত্রী।’
২০১০ সালের নীতি আপডেট করে নতুনভাবে শিল্পনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। আগের নীতির ধারাবাহিকতা নতুন নীতিতে অক্ষুণœ আছে। শিল্প নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আগের মতোই আছে।
নতুন নীতিতে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞায় অর্থের সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘উৎপাদশীল ক্ষেত্রে মূলধন ৫০ কোটি টাকার বেশি ও ৩০০ জনের বেশি শ্রমিক যেখানে কাজ করে সেটিকে বৃহৎ শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেবা শিল্প খাতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যেখানে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার বেশি কিংবা যেসব প্রতিষ্ঠানে ১২০ জনের বেশি শ্রমিক নিয়োজিত সেটা বৃহৎ শিল্প। উৎপাদনশীল শিল্পের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার বেশি হলে ও ১২১ থেকে ৩০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত আছে তা মাঝারি শিল্প। আর সেবা শিল্পের ক্ষেত্রে মাঝারি শিল্প ২ থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত ও যেখানে ৫১ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ক্ষুদ্র শিল্পের সংজ্ঞায় নীতিতে বলা হয়েছে, উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে ৭৫ লাখ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা কিংবা যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৩১ থেকে ১২০ জন শ্রমিক কাজ করে। সেবা শিল্পের ক্ষেত্রে ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক যেখানে কাজ করে। মাইক্রো শিল্প হচ্ছে, যেখানে মূলধন ১০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা কিংবা যে শিল্পে ১৬ থেকে ৩০ জন বা তার চেয়ে কম লোক কাজ করে। কুটির শিল্প হচ্ছে যেখানে পরিবারের সদস্য নিজেরাই শিল্প প্রতিষ্ঠান চালায়। কারুশিল্পীর শৈল্পিক মনন ও শ্রমের ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে যে শিল্প নতুন নীতি অনুযায়ী তাই হস্ত ও কারুশিল্প।
শফিউল আলম জানান, সৃজনশীল শিল্প বলতে বোঝায় যার শৈল্পিক মনন ও উদ্ভাবনী মেধা, দক্ষতা ও কলাকৌশল বা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নান্দনিক ও সৃষ্টিশীল পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করা। নীতিতে নারী উদ্যোক্তার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যদি কোনো নারী ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রোপাইটরি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্বত্বাধিকারী বা প্রোপাইটররা, অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫১ শতাংশ অংশ যদি থাকে তবে সেটি নারী শিল্প উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হবে,’ বলেন তিনি।
দেশের গতিশীল শিল্পায়ন ও টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে কিছু প্রণোদনা দেওয়ার কথা নীতিতে বলা হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে, মূলধনি বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি, উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি, অ্যাক্রেডিটেশন সনদের ফি চার্জ ও বীমা স্কিমের প্রিমিয়ামের খরচ পুনর্ভরণের ব্যবস্থা, চলতি মূলধনের সুদের ওপর ভর্তুকি। এলাকাভেদে বিভিন্ন শিল্প খাত-উপখাত বিদ্যমান আয়কর বিধি-বিধান অনুযায়ী কর অবকাশ ও অবচয় সুবিধা পাবে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে ব্যবহৃত আমদানি করা কাঁচামালের শুল্ক ও কর সম্পূর্ণরূপে তৈরি পণ্য আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ও কর হার থেকে কম হবে বলেও নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
শফিউল আরও বলেন, ‘শিল্প ক্লাস্টার ও শিল্প পার্কের অবকাঠামো, অনুন্নত এলাকায় স্থাপিত শ্রম নিবিড় শিল্পের উন্নয়ন এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থা এবং পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব) উদ্যোগে সম্পদ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এ উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাসজমি ও চরাঞ্চলের ভূমি নিয়ে একটি ল্যান্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠায় ল্যান্ড ব্যাংক থেকে ভূমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সংশোধন আইন অনুমোদন :
প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবে। এ জন্য ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (সংশোধন) আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট (সংশোধন) আইনটি ২০১২ সালের আইনে দুটি ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু স্নাতকোত্তরের জন্য কোনো প্রভিশন নেই। এ ছাড়া আইনে বিধি ও প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া আছে, কিন্তু নীতিমালা প্রণয়নের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এখন প্রস্তাব করা হয়েছেÑমাস্টার্স, এমফিল ও পিএইচডি কোর্সের শিক্ষার্থীরাও এখান (ট্রাস্ট) থেকে বৃত্তি পাবে। এ জন্য নতুন আইনে একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। আইনের সংশোধনীতে প্রবিধানের সঙ্গে নীতিমালা প্রণয়ন করতে সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা,’ বলেন শফিউল আলম।
তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। আইন সংশোধনের পর স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পাবেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন